গিয়েছিলাম আবেগ নিয়ে, ফিরলাম কষ্ট নিয়ে

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ১৮ ২০১৯, ০০:৪০

প্রিন্সিপাল মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু:
আলো ঝলমলে বিকালে শেখ যায়েদ মসজিদে প্রবেশ করলাম। পুরুষ এবং নারীদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রবেশদ্বার। নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান করে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। নারীদের দেয়া হয় বোরকা বা বিশেষ গাউন।প্রবেশদ্বারে নিরাপত্তা তল্লাশি দেখে বিব্রত বোধ করছি! মসজিদে প্রবেশ করতে এমন নজিরবিহীন তল্লাশি ইতিপূর্বে দেখিনি।

নান্দনিক সৌন্দর্য্য আর চোখ ধাঁধানো সুন্দর শেখ যায়েদ মসজিদ। মুসলিমদের পাশাপাশি অনেক অমুসলিমরাও দেখলাম মসজিদটি দেখতে এসেছেন।

মসজিদের প্রধান কক্ষে নামাজ আদায় করতে গেলে জানলাম মসজিদের মূল কক্ষে শুধুমাত্র জুমার দিন নামাজ আদায় করা যায়। সপ্তাহের ছয়দিন‌ই নামাজ আদায় করতে দেয়া হয়না! মসজিদটি শুধু মাত্র দেখা যাবে কিন্তু নামাজ আদায় করা যাবেনা!
বিষয়টি মুসলমানদের জন্য কষ্টের, বেদনার।
মসজিদ কতৃপক্ষ অবশ্য অনুগ্রহ করে মূল মসজিদের পাশে ছোট দুটি কক্ষে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রেখেছেন।

যে আবেগ নিয়ে আল্লাহর ঘর পবিত্র মসজিদে গিয়েছিলাম ফিরলাম শত কষ্ট আর বেদনা নিয়ে! যেখানে প্রতিনিয়ত নামাজ হ‌ওয়ার কথা, রুকু সেজদা হ‌ওয়ার কথা, কোরআন তেলাওয়াত হ‌ওয়ার কথা। কিন্তু আফসোস! সেখানে চলে বিনোদন! প্রশান্তির যায়গা আজ রূপান্তরিত হয়েছে বিনোদনের স্থানে!

শেখ যায়েদ গ্রান্ড মসজিদ, আবুধাবি

শেখ যায়েদ গ্রান্ড মসজিদ

শেখ যায়েদ মসজিদ আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে অবস্থিত। এটি আরব আমিরাতের বৃহত্তম মসজিদ এবং বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম মসজিদ। মসজিদটি আমিরাতের প্রয়াত শেখ যায়েদ বিন আল নাহিয়ানের নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কার্পেট (৫৬২৭ বর্গমিটার) এবং সর্ববৃহৎ ঝাড়বাতি (১০ মিটার ব্যাস এবং ১৫ মিটার উচু) বিশিষ্ট মসজিদটির আঙিনা ১৭ হাজার বর্গমিটারের মার্বেল মোজাইকও পৃথিবীর সর্ববৃহৎ চওড়া মার্বেল মোজাইক বলে স্বীকৃত।

মসজিদটির ভেতরে বাইরে চোখ ধাঁধানো মোজাইকে গড়া কারুকাজ দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি সুন্দর এ মসজিদের অত্যাধুনিক ফিটিংসের ওজুখানাগুলো ও শৌচাগার।

ভিন্ন ভিন্ন সাতটি আকারে ৮২টি গম্বুজ, চার কোণে চারটি মিনার। মিনারগুলোতে পুষ্পশোভিত নকশা রয়েছে। মিনারগুলোর প্রতিটির উচ্চতা ৩৫১ ফুট। প্রাকৃতিক নকশা নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে দীর্ঘস্থায়ী মার্বেল পাথর।

সরকারি মালিকানাধীন এই মসজিদ নির্মাণে খরচ হয়েছে ৫৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর ডিজাইন ও নির্মাণে তুরস্ক,ইতালি,জার্মানি, মরক্কো,পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইরান,ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অনেক দেশের কারিগর যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন দেশের নির্মাণ সামগ্রীও ব্যবহার করা হয়। ৩৮টি প্রখ্যাত কোম্পানি এই মসজিদ নির্মাণে অংশগ্রহণ করে।

একসঙ্গে চল্লিশ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে দুই ঈদে মুসল্লির সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে যায়। মসজিদের তিনটি প্রার্থনা কক্ষ রয়েছে। প্রধান প্রার্থনা কক্ষ ছাড়া বাকি দুটি ছোট কক্ষ। কক্ষ দুটি তিন হাজার মুসল্লি ধারণ করতে পারে। এর একটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত।

-মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু
প্রিন্সিপাল,জামিয়া হুসানিয়া গহরপুর সিলেট।