খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ নেতা আনন্দ চাকমার অস্ত্র সমর্পণ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ০৬ ২০১৮, ১৪:২৩

বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ’র বিচার ও সাংগঠনিক পরিচালক আনন্দ চাকমা সেনাবাহিনীর কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেছে।

বুধবার রাতে মহালছড়ি সেনা জোনের অধিনায়কের কাছে একটি ইউএস-এ তৈরি পিস্তল, ম্যাগজিনসহ তিন রাউন্ড গুলিসহ আনন্দ চাকমা অস্ত্র সমর্পণ করেন। সে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার মনরঞ্জন চাকমার ছেলে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের আনন্দ চাকমা জানান, আদর্শহীন ইউপিডিএফ’র খুন, গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজির কারণে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আশায় অস্ত্র সমর্পণ করেছেন। সরকার ঘোষণা দিলে অনেক ইউপিডিএফ’র নেতাকর্মী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছে।

আনন্দ চাকমা জানান, রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের প্রধান তপন জ্যোতি ওরফে বর্মাসহ অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে।

আনন্দ চাকমা বলেন ইউপিডিএফ(প্রসীত) গ্রুপের কাছে একে-৪৭, এসএমজি, চাইনিজ রাইফেল, এলএমজি, একাশি ও এম-১৬ মতো বিপুল ভারী আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে।

রাঙামাটি জেলার নানিয়াচর সার্কেলের বিচার ও সাংগঠনিক শাখার পরিচালক আনন্দ চাকমা জানান, শান্তিবাহিনী, জনসংহতি সমিতি ও গত চার বছর ইউপিডিএফ(প্রসীত) হয়ে কাজ করেছে। জীবনের ৩০ বছর আমি জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে জীবন যাপন করেছি। এর আগে আমি শান্তি বাহিনী, জন সংহতি সমিতি এবং গত ৪ বছর ধরে ইউপিডিএফ(মূল) এর সাথে কাজ করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠির অধিকার আদায় ও তাদের উন্নতির যে লক্ষ্য নিয়ে যুবক বয়সে এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছিলাম তা থেকে ইউপিডিএফ সম্পূর্ণভাবে বিচ্যুত। ইউপিডিএফ’র কোন নীতি ও আদর্শ নেই। তারা সকলেই রক্তের নেশা ও ক্ষমতার মোহে পড়ে আছে।

চাঁদাবাজি, মানুষকে হয়রানী আর ভয়ভীতি ও অন্যায়-অত্যাচার করে সকলে নিজেদের আখের গুছাতে ব্যস্ত। গুম, খুন, হত্যা ও অপহরণই বর্তমানে তাদের কাজ। ইউপিডিএফ(প্রসীত) গ্রুপের কাছে স্বজাতীয় কোন ভাই-বোনও নিরাপদ নয়। এরকম একটা পরিস্থিতিতে তাদের সাথে আমার থাকা সম্ভব নয়। আমারও স্ত্রী, এক ছেলে ও ডিগ্রি ৩য় বর্ষে পড়ুয়া একটি মেয়ে রয়েছে। এ কারণে অনেক ভেবে-চিন্তে অন্যায়ের পথ ছেড়ে সুস্থ্য, স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ জীবনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার মত অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায়। কিন্তু ইউপিডিএফ হত্যার ভয় দেখাচ্ছে। এ জন্য তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারছে না।

ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আনন্দ চাকমা বলেন, এমন অনেক ঘটনা আছে যে, ইউপিডিএফ এর মতের মিল না হলে তাকে প্রাণ দিতে হয়। শক্তিমান চাকমা ও বার্মাকেও ইউপিডিএফ হত্যা করেছে। তবে সম্প্রতি রাঙামাটির মিতালি চাকমার ঘটনাটি আমাকে দারুনভাবে কষ্ট দেয়। কারণ আমারও একটি মেয়ে আছে। যদি সে মিতালী চাকমার মত ইউপিডিএফ এর নারী সংগঠনে(এইচডব্লিউএফ) যোগ দিতে না চায়, তাহলে তাকেও অপহরণ করা হবে। তার উপর অন্যায় অত্যাচার ও নির্যাতন করা হবে। এই জিনিসটা আমাকে অনেক ভাবায় ও কষ্ট দেয়।

আনন্দ চাকমা আরো বলেন, আমি অনেক ভেবে দেখলাম এই ইউপিডিএফ নামক সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে এ অঞ্চলের জনগণের কোনো কল্যাণ হতে পারে না। এমনকি তাদের কাছে পাহাড়ের স্বজাতীয় কোনো ভাই বোনও নিরাপদ নয়।