কোরআন নাজিলের মাসে কোরআনময় হোক আমাদের রমজান

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ২৯ ২০২০, ০৩:৫১

এহসান বিন মুজাহির

রহমত, মাগফিরাত ও নাজতের বার্তা নিয়ে শুরু হওয়া পবিত্র রমজানুল মোবারকের প্রথম দশকের রহমতের পঞ্চম দিন আজ। রমজান এমন একটি মাস যে মাসে অবতীর্ণ হয়েছে মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ ‘কোরআনুল কারীম’। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-‘রমজান হলো এমন একটি মাস, যে মাসে কুরআন কারীম অবতীর্ণ করা হয়েছে লোকদের হিদায়াতের জন্য এবং সত্যপথযাত্রীদের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য নিরূপণকারী হিসেবে’। (সূরা বাকারা : ১৮৫)।

 

মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-‘আমি কালামুল্লাহকে পৃথক পৃথক পাঠের উপযোগী করেছি, যাতে আপনি একে লোকদের কাছে ধীরে ধীরে পাঠ করেন এবং ওহি যথার্থভাবে অবতীর্ণ করেছি’। ( সূরা বনি ইসরাইল : ১০৬)। হজরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে কারীম (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ রমজান মাসের রোজা তোমাদের উপর ফরজ করেছেন। আর আমি তোমাদের জন্য সুন্নাতরুপে চালু করেছি। রমজানে মাসব্যাপী আল্লাহর ইবাদতে দাঁড়ানো (সুন্নাতু লাকুম কিয়ামাহু)। কাজেই যে লোকেই এই মাসে রোজা পালন করবে আর আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে ঈমান ও সচেতনসহকারে সে তার গুনাহ হতে নিষ্কৃতি লাভ করে। সে ব্যক্তি ওই দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে যাবে যে দিন তার মা তাকে প্রসব করেছেন’। (নাসায়ি)। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন-‘কোরআন নিজেই পরকালিন মুক্তির জন্য আল্লাহর নিকট বলিষ্ঠ সুপারিশ করবে’। (মুসলিম)।

 

কোরআন শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। হজরত উসমান (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, ‘ ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন মাজিদ শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়। (বুখারি) হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, (কেয়ামতের দিন) কোরআনের বাহককে বলা হবে-‘পড় এবং আরোহণ করো! তেলাওয়াত করো যেভাবে দুনিয়াতে তেলাওয়াত করতে! নিশ্চয় তোমার পড়া যেখানে শেষ হবে সেটাই তোমার স্থান। (তিরমিজি)। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, যার মাঝে কোরআনের কোনো অংশ নেই সে পতিত (বিরান) ঘরের মতো’। (আবু দাউদ)।

 

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল বলেন, যখন কেউ কোরআন তেলাওয়াত করে তখন তার একটি একটি হরফ তেলাওয়াতের বদলে তার জন্য দশটি নেকি লেখা হয়। আমি একথা বলছি না, আলিফ লাম মীম একটি হরফ বরং অলিফ একটি, লাম একটি, মীম একটি হরফ। সুতরাং কেউ আলিফ পড়বে তখন তার জন্য ত্রিশটি নেকি লেখা হবে। পুরো বাক্যটি পড়লে ত্রিশটি নেকী অর্জন হবে’। (তিরমজি) হজরত আবু উমামা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলে কারীম সা. কে বলতে শুনেছি তোমরা কোরআন তেলাওয়াত করতে থাকো কেননা কোরআন কিয়ামত দিবসে তার সাথীদের সুপারিশ করবে’। (মুসলিম)।

 

হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে সংরক্ষণ করে এবং যে কোরআনে সুদক্ষ, কিয়ামতের দিন সে মহান ফেরেশতা লেখকগণের তুল্য মর্যাদা লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি তার পক্ষে কঠিন হওয়া সত্ত্বেও কুরআন বারবার আওড়াতে থাকে সে দ্বিগুণ সওয়াব অর্জন করবে’। (বুখারি)।

 

রমজান মাসে হযরত জিবরাঈল (আ:) নবী করীম (সা.) এর সঙ্গে ‘দাওর’ করতেন, পূর্ণ কুরআন একে অপরকে শুনাতেন। হযরত ওসমান (রা) প্রতি রাত্রে কোরআন এক খতম করতেন। ইমাম আবু হানিফা (রাহ.) রমজানে ৬১ বার কোরআন খতম করতেন। ইমাম অজম আবু হানিফা (রাহ). রমজানের ত্রিশ দিনে ত্রিশ খতম, ত্রিশ রাত্রে ত্রিশ খতম ও তারাবিতে এক খতম মোট ৬১ খতম করতেন। ইমাম শাফেয়ি (রাহ.) নামাজের বাইরে ৬০ বার কোরআন খতম করেছেন।

 

কোরআনের ছোঁয়ায় রমজান ধন্য। এ মাসে প্রত্যেক মুসলমানের প্রচুর পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াতে মনোযোগী হওয়া অতি জরুরি। আসুন কোরআন নাজিলের এই মহিমান্বিত মাসকে কোরআন পাঠ ও চর্চার মাধ্যমে কাটানোর চেষ্টা করি।

লেখক : সাংবাদিক, কলাম লেখক ও অধ্যক্ষ, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।