কে ছিলেন বাল’আম বাউরা? -সাঈদ আল মাহদী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

নভেম্বর ০৫ ২০১৮, ১৫:৫৭

 

লোকটির নাম বাল’আম ইবনে বাউরা। সে ছিল সিরিয়ার বাইতুল মুকাদ্দাসের নিকটবর্তী কিন’আনের অধিবাসী। অন্য এক রিওয়ায়াত মতে, সে ছিল বনি ইসরাঈল সম্প্রদায়ের লোক। আল্লাহর আসমানি কিতাবে বেশ ভালো ইলম ছিল তার। সে ইসমে আজম জানত এবং এর মাধ্যমে সে যে দু’য়া করত, তা আল্লাহর দরবারে কবুল হত। ফির’আউন নদীতে ডুবে মরার পর এবং বনী ইসরাঈলের মিসর বিজয়ের পর হযরত মুসা (আঃ) ও বনী ইসরাঈলের প্রতি জাব্বারীন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করার হুকুম হলো। জাব্বারীন সম্প্রদায় যখন দেখল যে, হযরত মুসা (আঃ) সমগ্র বনী ইসরাঈল সৈন্যসহ পৌছে গেছেন, তখন তারা ভয় পেয়ে গেলো। কারণ, মুসা (আঃ)–এর সাথে লড়ার জেরে ফিরআউনের মৃত্যুর সংবাদ তারা আগেই পেয়েছিল।
তখন তারা সবাই পরামর্শ করে বিনাযুদ্ধে জয়লাভের এক কৌশল করল। তারা বাল’আম ইবনে বাউরার কাছে গিয়ে বললো, ‘‘মুসা (আঃ) কঠিন লোক। তদুপরি বিপুল সংখ্যাক লোক রয়েছে তার সাথে। তারা এসেছে আমাদেরকে আমেদের দেশ থেকে বের করে দেয়ার জন্য। আপনি আমাদের জন্য আল্লাহ তা’লার দরবারে দোয়া করুন। যাতে তিনি তাদেরকে পরাস্ত করে আমাদের মুকাবিলা থেকে ফিরিয়ে দেন।”

উত্তরে বাল’আম বলল, “অতি পরিতাপের বিষয়, তোমরা একি বলছ! তিনি হলেন আল্লাহর নবী। তাঁর সাথে রয়েছেন আল্লাহর ফেরেশ্তা। আমি তাঁর বিরুদ্ধে কেমন করে বদ দুআ করতে পারি? অথচ আল্লাহর দরবারে তাঁর যে মযার্দা, তা আমি জানি! আমি যদি এমন কাজ করি, তাহলে আমার দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই ধ্বংস হয়ে যাবে”।
একথা শুনেও সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিরস্ত হলো না। তারা বাল’আমকে পীড়াপীড়ি করতে লাগল। শেষে বাল’আম বলল, “আচ্ছা, আমি তাহলে আগে আমার পালনকর্তার নিকট হতে জেনে নিই যে, এ ব্যাপারে দু’আ করার অনুমতি আছে কি না?” নিয়ম অনুযায়ী সে বিষয়টি জানার জন্য সে ইস্তেখারা করল। তখন তাকে স্বপ্নযোগে জানিয়ে দেয়া হলো যে, এ কাজ যেন সে কখনো না করে।

পরদিন সে জাব্বারীন সম্প্রদায়ের লোকদেরকে ডেকে বিষয়টি জানাল। এ সময় সমাজপতিরা তাকে একটি লোভনীয় উপঢৌকন দিল। মূলত এটি ছিল উৎকোচ স্বরূপ। সে যখন উপঢৌকন গ্রহণ করল, তখন সমাজের লোকেরা তাকে কাজটি করে দেয়ার জন্য বারবার অনুরোধ ও অত্যধিক পীড়াপীড়ি করতে লাগল।

বাল’আম বদ দুআ করার সময় সমাজের লোকেরা এক আশ্চর্য বিষয় লক্ষ্য করল। অবাক হয়ে সমাজের লোকেরা দেখল, বাল’আম মুসা (আঃ) ও বনী ইসরাঈলদের বিরুদ্ধে যে বদ দুআ করতে চাইছে, সে বদ দুআ গুলোই তার মুখ থেকে বিপরীতভাবে উচ্চারিত হয়ে তাদের নিজ সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী লোকদের বিরুদ্ধেই চলে যাচ্ছে। তখন তারা চিৎকার করে বলল, “বাল’আম! আপনি একি করছেন! আপনি তো আমাদের জন্যই কাজ করছেন! কিন্তু বদ দুআ আমাদের বিরুদ্ধে করছেন কেন?” বাল’আম বলল, “এটা আমার ইচ্ছাকৃত নয়। আমার জিহ্বা আমার নিয়ন্ত্রনে নেই। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই এটা বের হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমি অপারগ হয়ে গিয়েছি।”
এ গঠনার পর সেই সম্প্রদায়ের ওপর আল্লাহর গজব ও ধ্বংস নাযিল হয়। আর বাল’আমের শাস্তি এই হয় যে, তার জিহ্বা বেরিয়ে এসে বুকের উপর লটকে যায় এবং কুকুরের মতো জিহ্বা বের করে সে হাঁফাতে থাকে। তখন সে সেই সম্প্রদায়ের লোকদেরকে বললো, “আমার যে দুনিয়া ও আখিরাত সবই শেষ হয়ে গেল! আমার দুআ যে আর কবুল হচ্ছে না! তবে আমি তোমাদেরকে একটা কৌশল বলে দিচ্ছি। যার দ্বারা তোমরা মুসা (আঃ) ও বনী ইসরাঈলের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারবে।

তোমরা তোমাদের সুন্দরী নারীদেরকে সাজিয়ে বনী ইসরাঈলের সৈন্যদের মাঝে পাঠিয়ে দাও। তাদেরকে বুঝিয়ে বলে দিবে, সৈন্যরা তাদের সাথে যেরুপ আচরণই করতে চায়, তারা যেন বাধা না দেয়, বরং নিজেদেরকে যেন উজাড় করে দেয়। আর যেহেতু এরা মুসাফির, দীর্ঘদিন ঘরছাড়া, তাই হয়তোবা এ অবস্থায় এদের কেউ ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারে। আল্লাহর নিকট ব্যভিচার অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। যে জাতির মাঝে তা অনুপ্রবেশ করে, তাদের ওপর আল্লাহর গজব ও অভিশাপ বর্ষিত হয়। সে জাতি কখন ও বিজয় অর্জন করতে পারে না। এভাবে হয়ত তারা ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তোমরা বিজয় লাভ করবে।
বাল’আমের এই পৈশাচিক চালটি সমাজের লোকদের বেশ পছন্দ হলো। তারা বাল’আমের পরামর্শ মতোই কাজ করল। এর ফলে বনী ইসরাঈলদের জনৈক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি এ চালের শিকার হলো। লোকেরা তাকে এই কাজ করতে নিষেধ করলো। কিন্তু সে বিরত হলো না, বরং পৈশাচিক ফাঁদে জড়িয়ে পড়ল।

ফলে আল্লাহর গজব স্বরুপ বনী ইসরাঈল-এর মাঝে কঠিন প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়ল। তাতে একই দিনে ৭০ হাজার বনী ইসরাঈল মৃত্যুমুখে পতিত হলো। তখন মুসা (আঃ)–এর পরামর্শে এর প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য যে ব্যক্তি অসৎকর্মে লিপ্ত হয়েছিল তাকে এবং যার সাথে সে অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেল তাকে বনী ইসরাঈলরা হত্যা করে প্রকাশ্যে টাংগিয়ে রাখল। যাতে অন্যরা শিক্ষা গ্রহন করে। এবং সকলেই তাওবা করল। তখন প্লেগ ওঠে গেলো। অতঃপর মুসা (আঃ) বনী ইসরাঈলকে নিয়ে সেই কুচক্রী সম্প্রদায়কে পরাস্ত করে বিজয় অর্জন করলেন।

(তথ্যসূত্রঃ মা’আরিফুল কুরান, পৃষ্ঠা নং ৫০১)