কেন কলমচর্চা করবো ?

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ০৪ ২০১৮, ১২:২৮

 

মহান আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টিজগতে মানবজাতিকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তাদের মাঝে আলেমসমাজকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন।
এর অন্যতম কারণ হল, আলেমগণইলম ও আমলের ক্ষেত্রে নবীদের উত্তরসূরী। ইলম ও আমল দ্বারা তাঁরা মানুষদের আল্লাহর দিকে ডাকেন। অসৎ কাজে বাধা দেন এবং পুণ্যের দিকে আহবান করেন।

বাতিল যখন যে পন্থা বা কৌশল এবং যে অস্ত্র ব্যবহার করে মুসলিম উম্মাহর দিকে ধাবিত হয়, সে কৌশলেই তাঁরা বাতিলকে প্রতিহত করেন।

যুগচাহিদার প্রতি তাদের তীক্ষ্ণ নযর থাকে। তাই বাতিল পরাশক্তি যে পথেই আসুক না কেন, তাঁরা খুব সহজেই তা চিহ্নিত করে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

বর্তমানে যুগের পরিবর্তনে বাতিল পরাশক্তি শিল্প-সাহিত্যকেই আজ ইসলামের বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্ররূপে ব্যবহার করছে। কিন্তু বড় দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হল, স্বদেশের আলেমসমাজ আজ কলমচর্চা ও সাহিত্যজগত থেকে অনেক দূরে পড়ে রয়েছে। একজন মজবুত কলমযোদ্ধা আলেম সমাজে পাওয়া দুস্কর! অথচ আলেমসমাজের ঐতিহ্য ছিল বাতিল যেভাবে ও যে কৌশলে ইসলামের বিরুদ্ধাচারণ করবে, ঠিক সেভাবেই আলেমসমাজ প্রতিরোধের পাঁচিল গড়ে তুলবে, যেমনটি শিক্ষা দিয়ে গেছেন আমাদের পূর্বসুরীরা।

আমাদের এ-দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বামপাড়ার হুমায়ুন আহমদ, জাফর ইকবাল, শাহরিয়ার কবির ও তাসলিমা নাসরিন প্রমুখ লেখকরা কলমচর্চা ও সাহিত্যসাধনার মাধ্যমে বার বার ইসলামের প্রতি আঘাত করেই চলেছে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সা.কে ব্যঙ্গ করে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করছে।

বিপরিতে আমরা দু-একটা মিছিল-মিটিং করেই দায়িত্ব শেষ করে দিচ্ছি! এর দ্বারা হয়ত তাদের সাময়িক কোন শাস্তি হতে পারে। কিন্তু স্থায়ীভাবে তাদের চিন্তা-চেতনা পাল্টানো কখনই সম্ভব নয়।
তাদের চিন্তা-চেতনা ও আকিদা-বিশ্বাসকে পরিবর্তন করতে হলে তারা যে অস্ত্র ও পন্থায় আঘাত করছে, সে পদ্ধতিই আমাদের অবলম্বন করতে হবে। ভাষা-সাহিত্য ও ক্ষুরধার লেখনির মাধ্যমে তাদের উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। তখনি তাদের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। অন্যথায় দিন দিন তাদের চিন্তা-চেতনা বিস্তৃতি লাভ করবে। সমাজে নাস্তিকতার সয়লাব হতে থাকবে।

আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী রহ. বলেন, ভাষা ও সাহিত্যকে এমনভাবে আয়ত্ত্ব করো যেন তাতে থাকে জলপ্রপাতের গতি, বিদ্যুতের চমক এবং সিংহের গর্জন।

কিন্তু আজ আমাদের অবস্থান কোথায়?বড় দুর্ভাগ্য, আলেমসমাজ এখনও পর্যন্ত ইসলাম বিদ্বেষীরা এ-যুগে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কলম ও সাহিত্যকেই যে ব্যবহার করছে ইসলামের বিরুদ্ধে তা আজও অনুধাবন করতে সক্ষম হয়নি। তাই যুগ যুগ ধরে আমরা লজ্জিত ও অপমানিত হয়েই যাচ্ছি।
পক্ষান্তরে ভারত-পাকিস্তানের দিকে নযর করলেই আমরা দেখতে পাই, ভাষা ও সাহিত্য সেখানে আলেমদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে, নেতৃত্ব তাদেরই হাতে। যার ফলে সেখানকার বাতিল পরাশক্তি তাদের ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।

পরিশেষে আল্লামা আবু তাহের মেসবাহ হাফি. এর একটি কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই; আমরা যখন বাতিলের বিরুদ্ধে সাহিত্য-সমরে লিপ্ত হবো এবং কলমের সাথে কলমের টক্কর শুরু হবে, তখন বিজয়ের জন্য না হোক, অন্তত টিকে থাকার জন্য হলেও আমাদের কুশলতার ও যোগ্যতার পরিচয় দিতে হবে। নইলে আমাদের ক্ষেত্রে শাশ্বত বিধান কার্যকর হবে। অযোগ্য-দুর্বল ও পঙ্গুদের বেঁচে থাকার কোন অনুমতি নেই।

হে নবীন-তরুণ আলেমসমাজ, এসো হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করি, আমরা একদিন এদেশের ভাষা ও সাহিত্যের নেতৃত্ব দেবো।দেখো, সমগ্র জাতি আজ তাকিয়ে আছে তোমার দিকে। এখনো সময় আছে প্রতিরোধ গড়ে তোলার। হাতে নাও সেই হাতিয়ার, ভাষা ও সাহিত্যর জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর উপর ভরসা ও আস্থা রেখে কলমযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ো। দেখবে পরাশক্তি পিছু হটতে বাধ্য হবে। আল্লাহ তা’আলার গায়েবী মদদ আমাদের শামেলে হাল হবে। সফলকাম আমরাই হবে ইনশাআল্লাহ!

মুহাম্মাদ রাশিদুল ইসলাম
অধ্যয়নে ইফতা প্রথম বর্ষ
দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী।