কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ১৬ ২০১৮, ০৬:৩১

প্রশ্ন : কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কয়টি ও কী কী?
উত্তর : কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে :
১. মুসলমান হওয়া। সুতরাং কাফেরের ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে না।
২. স্বাধীন হওয়া। সুতরাং কৃতদাসের ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে না। চাই সে মুকাতাব-চুক্তিবদ্ধ কিংবা ব্যবসার অনুমতিপ্রাপ্ত হোক।
৩. জ্ঞানসম্পন্ন ও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। সুতরাং পাগল কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ের ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে না
৪. মুকিম হওয়া। অতএব মুসাফিরের ওপর তা ওয়াজিব হবে না। এমনকি হজের সফরে গেলেও।
৫. ধনাঢ্য হওয়া। অর্থাৎ সাড়ে ৫২ তোলা রূপা কিংবা সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ অথবা সমপরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। আর এটাই যাকাতের নেসাব।
আর এ সম্পদ জীবনধারণের মৌলিক প্রয়োজন হতে অতিরিক্ত হওয়া চাই। তবে তার ওপর যাকাতের মতো এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া জরুরি নয়।
বরং কুরবানির তৃতীয় দিনও যদি কোনোভাবে এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যায়, তার ওপরও কুরবানি ওয়াজিব হয়ে যাবে। (বাদায়ে-৪/১৯৬-১৯৭)

প্রশ্ন : গরিব ব্যক্তি কুরবানি করতে পারবে কি-না?
উত্তর : যে ব্যক্তির ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয় সে-ই গরিব। গরিব ব্যক্তির ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয়। হ্যাঁ, নফল কুরবানি দিতে পারে। তবে কুরবানির নিয়তে গরিব ব্যক্তি জন্তু ক্রয় করলে তা কুরবানি করা ওয়াজিব হযে যায়। এই কুরবানির গোশত সে নিজেও ভক্ষণ করতে পারবে। কিন্তু মান্নতের কুরবানি হলে গোশত খেতে পারবে না। (শামি- ৬/৩২১, বাদায়ে- ৪/১১৯)
প্রশ্ন : কুরবানির শেষ সময়ে মুসাফির মুকিম অথবা মুকিম মুসাফির হয়ে গেলে তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে কি-না?
উত্তর : কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে শেষ সময়ের ধর্তব্য। সুতরাং কেউ যদি কুরবানির সময়ের প্রথম দিকে মুসাফির থাকার পরে তয় দিন কুরবানির সময় শেষ হওয়ার পূর্বেই মুকিম হয়ে যায়, তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে। এর বিপরীতে কেউ প্রথম দিকে মুকিম থাকার পরে তয় দিনে মুসাফির হয়ে গেছে তাহলে তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে না।
উল্লেখ্য কেউ যদি কুরবানি রহিত করার উদ্দেশ্যে কুরবানির শেষ সময়ে মুসাফির হয়ে যায়, এটা অত্যন্ত প্রতারণা, ধোঁকা ও গোনাহের কাজ। এত্থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। কেননা, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অন্তর্যামী। তিনি জানেন, কে কি উদ্দেশ্যে সফর করতেছে। (শামি- ৬/৩১৯, বাদায়ে- ৪/১৯৬)

প্রশ্ন : কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে জমি ও ফসলের হিসাব করা হবে কি-না?
উত্তর : জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় জমি এবং ফসলের মূল্য বাদ দিয়ে অতিরিক্ত জমি ও ফসলের মূল্য হিসাব করা হবে। অর্থাৎ তা যদি নেসাব পরিমাণ হয় তখন কুরবানি ওয়াজিব হবে। (শামি-৬/৩১২, আহসানুল ফাতাওয়া-৭/৫০৬)
প্রশ্ন : স্ত্রী বা সন্তানদের পক্ষ হতে কুরবানি করা কার ওপর জরুরি?
উত্তর : স্ত্রী যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে। তদ্রুপ সন্তানও যদি বালেগ হয় এবং সম্পদের মালিক হয় তবে তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে। এক্ষেত্রে স্বামী বা পিতার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে না। হ্যাঁ, তাদের নির্দেশে কিংবা অনুমতিক্রমে সে যদি কুরবানি করে দেয়, তবে আদায় হয়ে যাবে। (বাহরুর রায়েক-৮/৩১৯, আলমগির-৫/২৯২, ফাতাওয়া শামি- ৬/৩১২, মাহমুদিয়া-১৭/৩১৪)

প্রশ্ন : যৌথ ব্যবসায় কার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে?
উত্তর : যৌথ ব্যবসায় প্রত্যেক অংশীদারের পৃথক মালিকানা ধর্তব্য হবে। অর্থাৎ যে যে অংশীদার পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, শুধু তাদের ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে। যদি তাদের যৌথ সম্পদ নেসাব পরিমাণ হয়, কিন্তু পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ হয় না, তবে কারো ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে না। মোটকথা, এক্ষেত্রে যৌথ মালিকানা ধর্তব্য নয়, পৃথক পৃথক মালিকানা ধর্তব্য। (মাজমাউল আনহুর-৪/১৬৮, আলমগিরি-৫/২৯২, বাহরুর রায়েক-৮/৩১৮, মাহমুদিয়া-১৭/৩১৩)

প্রশ্ন : যৌথ ফ্যামিলিতে কার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে?
উত্তর : যৌথ ফ্যামিলিতে যে মূলত মালিক তার সম্পদ নেসাব পরিমাণ হয়েছে কি না এটাই ধর্তব্য। যেমন : কোনো একব্যক্তির দশটি সন্তান রয়েছে, পিতা এখনো সম্পদ বণ্টন করে দেন নি। তবে পিতার সম্পদ নেসাব পরিমাণ হলে কেবল তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে।
আর যদি কারো পিতা বেঁচে না থাকে, শুধু ভাই-বোনেরা আছে। সবাই একান্নভুক্তÑযৌথ। এখনো সম্পদ বণ্টন হয় নি। এমতাবস্থায় প্রত্যেকের পৃথক মালিকানা ধর্তব্য হবে যে, বণ্টন করলে প্রত্যেকের ভাগে কতটুকু কওে সম্পদ পড়বে। যদি প্রত্যেকের সম্পদ পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ হয়; তবে পৃথকভাবে কুরবানি ওয়াজিব হবে। মোটকথা, এখানেও পৃথক মালিকানা ধর্তব্য হবে এবং কুরবানিও পৃথকভাবে করতে হবে। (শামি-৬/৩১৫, আলমগিরি-৩/৩৪৫, মাহমুদিয়া-১৭/৩১১)

প্রশ্ন : পশু ক্রয় করার দ্বারা কি কুরবানি ওয়াজিব হয়ে যায়?
উত্তর : ধনী ব্যক্তির ওপর তো এমনিতেই কুরবানি ওয়াজিব। আর গরিব ব্যক্তি কুরবানির দিনগুলিতে কুরবানির নিয়তে পশু ক্রয় করলে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব হয়ে পড়ে। কেননা তখন তা মান্নতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (শামি-৬/৩২১, আলমগিরি-৫/২৯১, হেদায়া- ৪/৪৪৫, মাহমুদিয়া-১৭/৩১৫)
প্রশ্ন : অন্যের পক্ষ হতে অনুমতি ব্যতীত কুরবানি করলে তা আদায় হবে কি না?
উত্তর : কারো পক্ষ হতে তার বিনা অনুমতিতে কুরবানি করলে যদি ওই ব্যক্তির ওপর কুরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে তবে তার কুরবানি আদায় হবে না। আর যদি ওয়াজিব না হয়ে থাকে তবে কুরবানি হয়ে যাবে। (কাজিখান-৩/৩৫২, আলমগিরি-৫/৩০২, মাহমুদিয়া-১৭/৩২২)
প্রশ্ন : ওয়াজিব কুরবানি দ্বারা ইসালে সওয়াবের নিয়ত করা যায় কি না?
উত্তর : নিজের ওয়াজিব কিংবা নফল কুরবানি দ্বারা জীবিত ও মৃত ব্যক্তির আমলনামায় সওয়াব পৌঁছানোর নিয়ত করা যায়। এমনকি পুরো উম্মতের ইসালে সওয়াবের নিয়ত করলেও অসুবিধে নেই। (শামি-৬/৩৩৫, আলমগিরি-৫/২৯৭, মাহমুদিয়া-১৭/৩৩০)
প্রশ্ন : হুজুর সা. এর নামে কুরবানি করা কেমন?
উত্তর : হুজুর সা. এর নামে কুরবানি করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। পৃথক অংশ কুরবানি করা সম্ভব না হলেও নিজের ওয়াজিব কুরবানির মাঝেই হুজুর সা. এর নামে সওয়াব পৌঁছানোর নিয়ত করলেও যথেষ্ট হবে। অন্যান্য নবীদের বিষয়টিও এমন। (আবু দাউদ শরিফ-২/৩০,শামি-৬/৩২৬)