কারাবন্দি হেফাজত নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ফেব্রুয়ারি ০৩ ২০২২, ২২:০৪

হেফাজতসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারকৃত সব আলেম-ওলামা, ছাত্র সমাজ ও সাধারণ মুসল্লিদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।

৩ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে হেফাজতের ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদরীস প্রেরিত এক বিবৃতিতে হেফাজত আমীর এই দাবি জানান।

বিবৃতিতে হেফাজত আমীর বলেন, আলেমগণ হচ্ছেন ওরাসাতুল আম্বিয়া অর্থাৎ নবীদের উত্তরাধিকারী। তারা আল্লাহর দীনকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠার জন্য দিনরাত একাকার করে মানুষকে দীনের পথে আহবান করেন। আল্লাহ ভোলা মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কে জুড়িয়ে দেন। আলেমরা কোনো অন্যায় অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন। তারা মাদ্রাসায় কুরআন-হাদিসের পাঠদানে মগ্ন থাকেন। মানুষের ঈমান-আকিদা বিশুদ্ধকরণে ওয়াজ-নসিহত করেন। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সর্বসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করেন। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সব প্রকার অরাজকতা থেকে মানুষকে বিরত রেখে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেন। ডজন-ডজন মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের কারারুদ্ধ করা হয়েছে। এমন আচরণ ইসলাম ও দেশের জন্য খুবই দুঃখজনক।

হেফাজত আমীর আরও বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা মধ্যে রাজনৈতিক বা ক্ষমতাকেন্দ্রিক কোনো উদ্দেশ্য নেই। এই ১৩ দফার আন্দোলনের সঙ্গে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের কোনো কর্মসূচিও নেই। এই আন্দোলন শুধুমাত্র দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ঈমান অকিদা সংরক্ষণ ও দেশের স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন।

তিনি বলেন, আমরা নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি, গ্রেফতারকৃতদের থানা হেফাজতে শারীরিক ও মানসিকভাবে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। যার ফলে অনেক বন্দীদের মধ্যে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বিরাজ করছে। আলেম-উলামা, ছাত্র ও সাধারণ মুসল্লিদের জন্য পরিবারকে কোনো খাবার সরবরাহ করতেও দেয়া হচ্ছে না। এ তীব্র শীতেও প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র রাখার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। কারা আইনে একজন বন্দি সপ্তাহে একবার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার এবং সাক্ষাৎ লাভের অধিকার রাখে। কিন্তু তারা সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত। আবার অনেককেই সেলে রেখে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে।

গ্রেফতারকৃত আলেমদের মধ্যে অনেকেই বয়োবৃদ্ধ ও শারীরিকভাবে অসুস্থ- এমনটা দাবি করে হেফাজত আমীর বলেন, গ্রেফতারকৃতদের পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা এবং ওষুধ সেবনেও বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বন্দিদের সঙ্গে নির্বিচারে এমন নির্মম আচরণ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে অপরাধ এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

সরকারপ্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হেফাজত আমির বলেন, আমার প্রবল ধারণা প্রশাসনের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা নাস্তিক্যবাদীর এজেন্টরা সরকার এবং হেফাজতের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এবং দূরত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাদের হীন স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা দেশের জনপ্রিয় আলেম নেতাদের আটকে রেখে তৌহিদী জনতার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে দেশে গণবিস্ফোরণ ঘটাতে চায়। হেফাজত ইসলাম দেশে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা চায় না, যার ফলে প্রায় এক বছর রাজপথে কোনো কর্মসূচি না দিয়ে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। তবে তৌহিদী জনতার পুঞ্জীভূত ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ হারা গণবিস্ফোরণের রূপ নিলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।

দেশের স্বাস্থ্য-শিক্ষা সেক্টরের পরিস্থিতি খুবই নাজুক জানিয়ে হেফাজত আমীর বলেন, করোনাভাইরাসের নতুন ধাপ ওমিক্রনের থাবায় জনজীবন বিপর্যস্ত। এমতাবস্থায় দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরামকে বন্দি রেখে আল্লাহর ক্রোধকে নিজেদের উপর টেনে আনবেন না। কারাবন্দী আলেম-ওলামা ও মুসল্লিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিয়ে দেশের মসজিদ-মাদ্রাসা-খানকায় পুনরায় ফিরে আসার সুযোগ দিন। অনতিবিলম্বে নায়েবে নবী তথা আলেম-উলামাদের দ্রুত মুক্তি দিন।