করোনায় চরম আর্থিক সংকটে মাদরাসা সেক্টর

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ২৬ ২০২০, ১৫:১৪

মাহবুবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ;

করোনা ভাইরাস মহামারিতে বিপাকে পড়েছে মাদরাসা শিক্ষক ও হাফেজে কুরআনরা। প্রায় প্রত্যেকটি মাদরাসার শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের বকেয়া বেতনের সিংহভাগ রমজানে পূরণ করা হয়। কিন্তু এ বছর তা সম্ভব হচ্ছে না। করোনা ভাইরাসের ফলে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আগের মত সহায়তা ও হাদিয়া পাওয়া অসম্ভব।

এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে অধিকাংশ মসজিদে খতমে তারাবির নামাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে বছরের সিংহভাগ চলার মত সম্মানী অর্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে, যা হাফেজে কুরআনদের বিপাকে ফেলেছে।

২৫ এপ্রিল শনিবার একাধিক মাদরাসা প্রধান ও শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া যায়।

জানা গেছে, পবিত্র রমজানে ধর্মপ্রাণ মুসলমান বহুগুণ সওয়াবের আশায় এ মাসে মসজিদ ও মাদরাসায় দানসহ বিভিন্ন রকম সহযোগিতা করে থাকেন। আর সে হিসেবে এ মাসে সবচেয়ে বেশি কালেকশন হয়ে থাকে যা থেকে মাদ্রাসার শিক্ষকসহ সংশ্লিদের বেতন ও বকেয়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করে থাকে।

অন্যদিকে মসজিদে তারাবির নামাজ পড়ানোর হাফেজসহ মোয়াজ্জিন ও ইমামকে সম্মানি দেয়া হয়। এক্ষেত্রে খতমে তারাবির নামাজ অধিকাংশ মসজিদে বন্ধ হওয়ার ফলে হাফেজরা চরম বিপাকে পড়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের সমন্বয়ক ও জামতলা দারুল ইসলাম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে মাদরাসার শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা। কারণ অধিকাংশ মাদরাসার শিক্ষকদের ৩-৬ মাসের বকেয়া বেতন এই রমজানে পরিশোধ করা হয়। হাতে গোনা কিছু মাদরাসা ছাড়া অধিকাংশ মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন বকেয়া রয়েছে। এই মাসে সবচেয়ে বেশি কালেকশন হয়ে থাকে। বেশি সওয়াবের আশায় অনেকেই এই মাসে মাদরাসাগুলোতে বিভিন্ন প্রকার আর্থিক সহযোগিতা করে থাকেন। কিন্তু দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ধনী শ্রেণি ছাড়া প্রায় সবাই সংকটের মধ্যে রয়েছে। এই অবস্থায় কে কাকে সহায়তা করবে। যে কারণে এবার মাদরাসা শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা চরম সংকটে পড়েছে। তবে যদি বিত্তবানরা এগিয়ে আসে এই সংকট কিছুটা হলেও কমবে।

এদিকে মাদরাসার হাফেজরা রমজানে বিভিন্ন মসজিদে তারাবির নামাজ পড়িয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্মানী পেয়ে থাকেন। বছরে শুধু এই মাসে হাফেজরা এই সুবিধাটুকু পেয়ে থাকে। কিন্তু এবার তাও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে ১২ জনের অধিক জামাতে অংশগ্রহণ না করার নির্দেশনা দিয়েছে। বাকিরা বাসায় নামাজ আদায় করছে। যে কারণে বাসায় নামাজ আদায় করা মুসল্লিদের কাছ থেকে বিগত বছরের মত তারাবির হাদিয়া আদায় করা সম্ভব নয়। তাছাড়া করোনার সংকটপূর্ণ অবস্থায় অনেকেই অর্থসংকটে রয়েছে। এই অবস্থায় তারাবির নামাজের জন্য অনেক মসজিদে হাফেজ নিয়োগ দেয়া হয়নি। মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিনসহ সংশ্লিষ্টদের দিয়ে সূরা তারাবি পড়ানো হচ্ছে। যেকারণে মাদরাসার হাফেজরা চরম বিপাকে পড়েছে।

উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসে নারায়ণগঞ্জে ৬৩৫ জন আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে ৩৯ জন। ক্রমশ লাফিয়ে বাড়তে থাকা এই মৃত্যু ও আক্রান্তের মিছিলে ভয়াবহতা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। যেকারণে অতি সংক্রমিত এই ভাইরাস প্রতিরোধে পুরো জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়। একই কারণে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১২ জনের অধিক মসজিদের জামাতের নামাজে অংশগ্রহণ না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর জুম্মার নামাজে ১০ জনের অধিক অংশগ্রহণ না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।