করবিনের ভাইরাল হওয়া ছবি ও ব্যাক্তিগত উপলব্ধি -সোয়ালেহীন করিম চৌধুরী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ফেব্রুয়ারি ২২ ২০১৯, ০১:২৫

একুশে জার্নাল ডেস্ক:বৃটেনের বিরুধী দলীয় নেতা জেরেমী করবিন বাজার করে হেটে বাসায় ফেরার একটি ছবি গতকাল ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই দেখেছি হতাশা প্রকাশ করছিলেন কেনো আমাদের নেতারা এমন হোন না। প্রায় ১৫ বছর থেকে বৃটেন থাকি। অনেক ঘনিষ্ঠ ভাবেই শুধু তাদের নেতা নন তাদের সাধারণ জনগণকেও পর্যবেক্ষণ করেছি। আমার কাছে সব সময়ই মনে হয়েছে তাদের কাছে ঈমান বিহীন ইসলাম আছে কিন্তু আমাদের মাঝে ঈমান থাকলেও ইসলামের প্রকৃত চর্চা নেই।

রাসুল সাঃ এমন একটা জীবণ বিধান আমাদের জন্য নিয়ে এসেছিলেন যার ছোঁয়ায় সেসময়ের সবচেয়ে জাহিল মানুষ এক একজন সোনার মানুষে পরিণত হয়েছিলো। হজরত উমর রাঃ তাঁর শাসনামলে তো বলতেন – “রাস্তা উচু নিচু হওয়ার কারণে যদি রাজ্যের কোথাও একটি প্রাণিও হোঁচট খেয়ে পা ভেঙ্গে ফেলে তবুও আমি উমর আল্লাহর কাছ থেকে জবাবদিহী থেকে রেহাই পাবোনা”

আরেকদিনের ঘটনা বলি – হযরত উমার (রাঃ) একদিন মিম্বরে উঠে বক্তৃতা করছিলেন। বক্তৃতার এক পর্যায়ে বললেন: ৪০০ দিরহামের (১ দিরহাম= ০.২৬২৫ ভরি রুপা ) বেশী কেউ যেন তার স্ত্রীর মোহরানা নির্ধারণ না করে। শ্রোতাদের মধ্য থেকে কুরাইশ বংশীয় একজন মহিলা দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি বললেন: হে ওমর! আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নারীদেরকে পাহাড় পরিমাণ সম্পদ দেয়ার পক্ষে। অথচ, আপনি সেটাকে সীমাবদ্ধ করে দেয়ার কে? আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:

وَإِنْ أَرَدْتُمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنْطَارًا فَلَا تَأْخُذُوا مِنْهُ شَيْئًا أَتَأْخُذُونَهُ بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِينًا
অর্থাৎ, আর যদি তোমরা একজন স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তার পরিবর্তে অন্য কাউকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে চাও এবং তাদের কাউকে অঢেল সম্পদ দিয়ে থাক, খবরদার! তাদের কাছ থেকে তালাকের পর কিছুই ফিরিয়ে নিও না। তোমরা কি মিথ্যা অপবাদ এবং সুস্পষ্ট জুলুমের মাধ্যমে তা ফিরিয়ে নিতে চাও? (সুরা নিসা:২০)

এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা স্ত্রীদেরকে অঢেল সম্পদ দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন আর আপনি কোন অধিকারে তাদের সম্পদের সীমা নির্ধারণ করতে হস্তক্ষেপ করতে চান? ওমর (রাঃ) নিজের ভুল বুঝতে পেরে বললেন: মহিলার কথাই সঠিক। বরং, ওমর নিজেই ভুল করেছে।

ইসলামের স্বর্ণালী যুগের এরকম ভুড়ভুড়ি উদাহরণ আছে। কিন্তু সেসব শিক্ষা, সেসব আচরণ থেকে আমরা আজ বহু দূরে। রাসুল সাঃ তাঁর বিদায় হজ্বের ভাষণে যে কুরআন ও সুন্নাহ কে আকড়ে ধরার কথা বলেছিলেন। অথচ তা শুধু বইয়ের তাকেই আমরা সীমাবদ্ধ রেখেছি। আজ সারা বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের এই অধঃপতনের কারণ কি এটা নয়? হিংসা, অহংকার অথবা রিয়াকে ইসলামে সবচেয়ে বেশী নিরুৎসাহিত করা হয়েছে অথচ আমরা তাকেই আমাদের আচরণ বানিয়ে নিয়েছি। প্রতিদিন মানবিকতা লোপ পাচ্ছে আমাদের কাছ থেকে। অথচ নিজেকে পরিশুদ্ধ না করে আমরা অন্যের দিকে আঙ্গুল তুলি। মনে রাখবেন অন্যের দিকে একটা আঙ্গুল তুললে বাকী চারটা আঙ্গুল কিন্তু আপনার দিকেই তাক করা থাকে। দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবী যদি চান তবে প্রথমে নিজেকে পরিবর্তন করুন। আপনি আমি পরিবর্তন হলে আমরা সেই মানের নেতাও পাবো। এবং এটাই আল্লাহ পাকের প্রতিশ্রুতি।

আল্লাহ পাক আমাদেরকে তার দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন।