কওমি সনদের স্বীকৃতির দুই বছর: গন্তব্য ও করণীয়

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

নভেম্বর ০৬ ২০২০, ১৯:২০

মুহিউদ্দীন কাসেমী: মাওলানা মামুনুল হক সাহেবকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, কওমি সনদের স্বীকৃতির ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী? এর কার্যকারিতা কতটুকু? বলেছিলেন, সামাজিক স্বীকৃতি ছাড়া কিছু না। তবে শুরুটা যেহেতু হয়েছে, ভবিষ্যতে প্রাসঙ্গিক দুর্বলতা ও জটিলতা দূর হয়ে সঠিক কার্যকারিতা হবে আশা করি।

স্বীকৃতির দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি খুব নিরবেই চলে গেল। এ বিষয়ে কোনো লেখা ও আলোচনা চোখে পড়ল না।

২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর কওমি সনদের স্বীকৃতি দেওয়ায় সরকারপ্রধানকে শুকরিয়া জানানোর জন্য শুকরানা মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এর সভাপতিত্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রধান অতিথি ছিলেন।

স্বীকৃতির পর দুই বছর কেটে গেছে; কিন্তু স্বীকৃতি সংক্রান্ত জটিলতা ও প্রশ্নের কোনো সমাধান হয়নি এবং স্বীকৃতির কোনো কার্যকারিতা বাস্তবায়ন হয়নি। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হল, এসব বিষয় নিয়ে কোনো আলাপ আলোচনা ও পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি।

স্বীকৃতির গন্তব্য কী?

কওমি কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে যে, স্বীকৃতি দিয়ে আসলে তারা কী করতে চান?

কওমি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা স্বীকৃতির মাধ্যমে আলিয়া মাদরাসার সনদের মাধ্যমে যেসব সুবিধা পাওয়া যায়, তারাও দাওরার সনদ দিয়ে তা পেতে চান।

ফাহাদ নামক দাওরা হাদিসের একজন শিক্ষার্থী জানতে চাচ্ছে, আমি কি দাওরার সার্টিফিকেট দিয়ে পিএইচডি করতে পারব?

তার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি। নিয়মানুযায়ী মাস্টার্সের সার্টিফিকেট দিয়ে পিএইচডি করা যায়। কিন্তু দাওরার সার্টিফিকেট দিয়ে পিএইচডি করা যায় না।

সুতরাং আগে গন্তব্য ঠিক করা আবশ্যক। মুরুব্বিদের উচিত ৫/৭/৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া, যারা কওমি সনদের স্বীকৃতির মাধ্যমে কী কী সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে, এসব নিয়ে প্রস্তাব দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি স্বীকৃতি বাস্তবায়নে কী কী জটিলতা ও প্রশ্ন আসতে পারে, সেগুলো নির্ণয় করা।

এখন করণীয়

গন্তব্য ঠিক হওয়ার পর সরকারের সাথে দেনদরবারে বসতে হবে। প্রথমে চিঠি চালাচালি করতে হবে। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে। তারপরও না হলে রাস্তায় নামতে হবে। কঠোর আন্দোলন ছাড়া উপায় নেই। আন্দোলনে সমাধান হয়ে যাবে।

কওমি শিক্ষার্থীগণ কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষুব্ধ। এটা মুরুব্বিদের বুঝা উচিত। স্বীকৃতি পেল কিন্তু স্বীকৃতির কোনো কার্যকারিতা নেই। এমন হয়ে গেল যে, বিয়ে হয়েছে কিন্তু একত্রিত হতে দিচ্ছে না!

স্বীকৃতির সুফল পাওয়ার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবি। এখনও কওমির ছেলেরা আলিয়া ও স্কুলে পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে।

প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতুল মানসুর বাংলাদেশ।