ওয়াজের উপর নীতিমালা: দায় কার

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ০৪ ২০১৯, ০০:২৮

আলী আজম

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়াজ মাহফিল ও ধর্মীয় সভা সমাবেশে কিছুকিছু চিহ্নিত নামধারী বক্তার লাগামহীন হাস্যরসে ভরপুর আলোচনা এবং বয়ানের মঞ্চের মধ্যে বসেই শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন সহ বিতর্কিত কমেডি কর্মকাণ্ড আমরা বেশ কবছর ধরে লক্ষ্য করে আসছি। এসব বিষয় নিয়ে সচেতন তাওহীদি জনতা ও আলেম সমাজ অনলাইন-অফলাইনে বারবার আপত্তি জানাতেও দেখেছি। কিন্তু কিছুতে কিছুই হয়নি। উল্টো পরিস্থিতিটা এতো খারাপের দিকে গেছে যে, সেই বিতর্কিত বক্তাদের কমেডি আলোচনাগুলো ইউটিউব ফেইসবুক সহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দেদারসে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছি। দেখা গেছে বিনোদন প্রেমিরা কমেডি, নাটক, টেলিফিল্ম ইত্যাদি না দেখেই সেসব কমেডি আওয়াজ শুনে বিনোদন নিতে লাগলো।
আরো দেখা গেছে সেসব বিতর্কিত বক্তাদের বিতর্কিত আলোচনাগুলো কার্টসিট করে কিছু ইউটিউবার এবং ফেইসবুকাররা টিকটক ও অন্যান্য এডিটর সফটওয়্যার দিয়ে ফান ভিডিও বানিয়ে ইউটিউব, ফেইসবুকে প্রচার মজা নিতে লাগলো। ইউটিউবে প্রবেশ করার সাথেসাথে সেই কমেডিয়ান বক্তাদের কমেডি আলোচনাগুলো যেন প্রথমে চোখে। বলা চলে ইউটিউবে বিচরণকারীদের বড় একটা অংশ যেন খুঁজেখুঁজে এসব কমেডি ওয়াজগুলো দেখে এবং ওয়াটএ্যাপ ইমু ফেইসবুক ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে থাকে। ফলে সবার কাছে পৌঁছে যায় বিতর্কিত সে আলোচনাগুলো। এসব নিয়ে একপর্যায়ে আলেমসমাজ সাধারণ মানুষের কাছে মুখ দেখাতেও লজ্জা পান। সাধারণ মানুষ বিষয়গুলো নিয়ে আলেমসমাজের সাথে আলোচনা করতেও দেখা যায়। অথচ আলেমরা এব্যাপারে মুখ খুলতেও নারাজ।
আমাদের মতো কিছু সাধারণ ফেইসবুকাররা সেই শুরু থেকে এসব বিষয় নিয়ে সজাগ সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন। তারা এসব অসৌজন্যমূলক কমেডি আওয়াজ নিয়ে লেখালেখি এবং জনসচেতনতা তৈরিতেও ভূমিকা রাখেন। কিন্তু এতে করে তেমন একটা ফলাফল পাওয়া যায়নি। আমাদের লেখালেখি, প্রতিবাদ দমাতে পারেনি সেসব কমেডিয়ান বক্তাদের। তারা দিনদিন যেন লাগাম ছাড়িয়ে যাচ্ছিলেন। ফলাফল কী হলো? এখন ওয়াজ মাহফিলের উপর সরকারের কুনজর। এর দায়ভার কে নিভে? সেই কমেডিয়ানরা কি নিবেন এর দায়ভার? এখন রাষ্ট্র মাহফিলের উপর নীতিমালাও তৈরি করছে। বিধিনিষেধ আরোপ করছে। এমনকি শুনছি বক্তাদের আয়ের উপর করও নির্ধারণ নাকি করছে! এবং সাথে কিছু বক্তার উপর নিষেধাজ্ঞা ও নজরদারিও আসছে!
হ্যাঁ, আমরাও চাই সে লাগামহীন কথাবার্তা বলা, কমেডি ও আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করা এবং মাহফিল সভা সমাবেশকে হাশিতামাশার পাত্রে পরিণত করা সেসব বক্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আসুক। তাদের আলোচনার উপর নজরদারি আসুক তা আমরাও চাই। তবে তাদেরকে ইস্যু করে সমস্ত ওয়ায়েজদের উপর নজরদারি করা, কর আরোপ করা এবং মাহফিল নিয়ে নীতিমালা তৈরি করলে এদেশের অসংখ্য উলামায়ে কেরাম ও তাওহীদি জনতা তা সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে বাধ্য হবে। এবং এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশে তৈরি হতে পারে অস্থিতিশীল পরিবেশ। যা আমরা কখনো চাই না। তাই ওয়াজ মাহফিল নিয়ে বাড়তি কোনো নীতিমালা নয়। কর আরোপের প্রশ্নও আসে না। আপনারা সেসব কমেডিয়ান বক্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন৷ সরাসরি মাহফিল কিংবা বক্তাদের উপর নয়।
অন্যথায় দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হবে নিশ্চয়।