ওমর আলী আশরাফের ব্যতিক্রমী বই ‘বাংলায় বাজে গির্জার বাঁশি’

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ফেব্রুয়ারি ০২ ২০১৯, ০৫:১৫

মাহমুদুল হাসান

ওমর আলী আশরাফ। একজন কওমী ঘরনার লেখক। রাজধানীর খ্যাতনামা একটি মাদরাসা থেকে তাকমিল পড়েছেন। লেখলেখি করছেন বেশ ছোটবেলা থেকেই।
গত বছর ছোট পরিসরে খৃস্টান মিশনারীর তৎপরতা ও বাংলার মানুষকে ধর্মান্তরিত করার অপচেষ্টার বিষয়বস্তু নিয়ে ‘বাংলায় বাজে গির্জার বাঁশি’ নামক বইটি বাজারে এনেছিলেন। বইটি অল্প ক’দিনেই বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেলে এবার বইটির সমৃদ্ধ সংস্করণ বাজারে এনেছেন বইকেন্দ্র নামক প্রকাশনী। দ্বিতীয় সংস্করণ বাজারে আসামাত্রই পাঠক মহলে বেশ আলোচনার শুরু হয়। কওমী তরুনের এমন ব্যতিক্রমী বইয়ের নানান দিক নিয়ে জানতে
এক সন্ধ্যায় তার মুখোমুখি হয়েছিল মাহমুদুল হাসান।
সে সময় তার সাথে কথা হয় ‘বাংলায় বাজে গির্জার বাঁশি’ বই নিয়ে। কখন লিখেছেন এমন বই? কেন লিখেছেন ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর বেড়িয়ে আসে তার সাথে আলাপনে।

No photo description available.

বই লেখার কারণ উল্লেখ করে ওমর আলী আশরাফ বলেন;
আসলে আমরা গর্ব করে বলে বেড়াই, বাংলাদেশ একটি মুসলিমপ্রধান দেশ’। আমাদের রাজধানী এখনো মসজিদের শহর হিসেবে পরিচিত। এদেশের গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায়; এমনকি গভীর অরণ্যেও মসজিদের দেখা মেলে।
কিন্তু যখন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেল, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ দলে দলে খ্রিস্টান হয়ে যাচ্ছে, তখন শুধু আমি কেন, অনেকেই বিস্মিত হয়ে ছিলেন। সংবাদের সত্যাসত্য কী, তা দেখার জন্য আমি দেশের বিভিন্ন এলাকায় সফর শুরু করি। আমার এই দীর্ঘ সফরে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া—বাংলাদেশের যত জায়গায় গেছি, আমার কেবলই মনে হয়েছে, মসজিদের আলো ম্লান করে দিয়ে অনবরত বাজতে থাকা গির্জার ঘণ্টাধ্বনি ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্র ঝাঁঝাল হয়ে উঠছে।

কোথাও দেখেছি, এলাকার চেয়ারম্যান নিজেই খ্রিস্টান হয়ে গেছে, কোথাও শুনেছি, মসজিদের ইমাম সাহেব খ্রিস্টান। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মে থাকা উপজাতিদের প্রায় ৯৫ শতাংশকেই খ্রিস্টান বানিয়ে ফেলেছে এনজিও এবং মিশনারি সংস্থাগুলো। ভাগ্যবিড়ম্বনায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মুহাজির রোহিঙ্গা মুসলিমদেরও দলে দলে খ্রিস্টান বানিয়ে ফেলছে তারা। অথচ যে ঈমান বাঁচানোর তাগিদে এরা নিজ দেশের সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়ে বিতাড়িত অবস্থায় পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে, এনজিও ধূর্ত সংস্থাগুলো কৌশলে তাদের সেই সম্পদই কেড়ে নিচ্ছে। নোয়াখালীর মতো আলেম-ওলামা প্রভাবিত এলাকায় তারা ছেলেমেয়েদের একত্রে বসিয়ে প্রজেক্টরে ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শন করে যৌন ও প্রজনন শিক্ষা দেয়। যশোরের সদরে গাড়ি থেকে নেমেই দেখা মিলবে রাস্তার এপাশে গির্জা, ওপাশে (মিশনারি) হাসপাতাল, সামনে স্কুল, ডানে গোরস্তান, পেছনে সোসাইটি প্রভৃতি।

গবেষকদের গবেষণা বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে পৃথক করে আলাদা রাজ্য গঠনের প্রক্রিয়া চলছে অনেক দিন থেকেই। সেই লক্ষ্যে পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী উপজাতিদের দলে দলে খ্রিস্টান বানাবার মিশন চলছে। এদেরকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে ‘বাঙালি’, ‘মুসলমান’, এবং ‘সেনাবাহিনী’র বিরুদ্ধে। নেত্রকোণায় গিয়ে দেখবেন, সেখানেও যাদের খ্রিস্টান বানানো হয়েছে, বড় অংশটি উপজাতি। সোমেশ্বরী নদীর ওপাশে পাহাড়ের চূড়ায় তারা গড়েছে ভিন্ন জগত। বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িতেও দুর্গম পাহাড়ের সুউচ্চ তুলিতে, গভীর ও ঘন অরণ্যে তারা গড়ে তুলেছে তাদের জগত।

বিভিন্ন জায়গায় তারা স্কুল করেছে, অনুমোদিত মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি এবং ছাত্র ব্যতীত অন্য কারও সেখানে ঢোকার অনুমতি নেই। কী করে তারা সেখানে, তা কেউই জানতে পারে না। সাধারণ মানুষের পক্ষে জানার কোনো উপায়ও তারা রাখেনি।
দেশের মানুষকে তারা অর্থ দিচ্ছে, খাদ্য দিচ্ছে, বাসস্থান দিচ্ছে, শিক্ষা দিচ্ছে, চিকিৎসা দিচ্ছে, বিনিময়ে তাদের কেবল গির্জায় যাওয়ার দাওয়াত দেওয়া হয়। খ্রিস্টান হলেই প্রতি মাসে নগদ পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়। যে সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, তাদের জন্য পাঁচ হাজার টাকা অনেক বড় ঘটনা।

এসব বিষয় আমাকে চরমভাবে আঘাত করেছে। ফলে আমি এই নতুন ইস্যু নিয়ে বই লেখা শুরু করি।

তিনি বলেন
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সফর করে যে চিত্র আমার চোখে পড়েছে, তার বর্ণনা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছি ‘বাংলায় বাজে গির্জার বাঁশি’ বইতে। আমি শুধু আমার দেখাতেই ক্ষ্যান্ত থাকিনি, একই তথ্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে রেফারেন্সসহ উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি। খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ থেকে প্রমাণ করেছি, তাদের এই ধর্মান্তরকরণ প্রক্রিয়া তাদের ধর্মগ্রন্থই সমর্থন করে না; তদের ধর্মগ্রন্থ-ই সাক্ষ্য দেয়, পোলের নীতির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা পুরো খ্রিস্টবাদই বিকৃতির শিকার। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে সংক্ষেপে উদ্ধৃতি টেনে প্রমাণ করেছি, হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই শেষ নবী। ইসলাম সত্য এবং খ্রিস্টবাদ বিকৃত।
আমাদের ধর্মবিশ্বাসমতে আমরা মনে করি, আমাদের চারপাশে থাকা অন্য ধর্মের ভাইয়েরাও আমাদেরই আপন ভাইয়ের মতো। সেসকল ভাইদের ইসলামে ফিরিয়ে আনার দায়িত্বও আমাদেরই। তাই বইটিতে একই সাথে কীভাবে আপনি একজন হিন্দু ভাইকে ইসলামের দাওয়াত দেবেন, ভ্রান্ত মিথ্যাচার প্রচারকারী একজন পাদ্রীকে কীভাবে তাদেরই ধর্মগ্রন্থ থেকে প্রশ্ন ছুঁড়ে আটকে দেবেন, কীভাবে একজন পুরোহিতকে তার ধর্মগ্রন্থ থেকেই বুঝিয়ে দেবেন কোনটা সত্য আর কোনটা বাতুল, সংক্ষিপ্ত ও গোছালোভাবে সেগুলো রেফারেন্সসহ উল্লেখ করেছি এখানে।

লেখকে তার বই লেখার ইচ্ছা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন
আমি কেবল চেষ্টা করেছি, বিষয়টি আপনাদের সামনে তুলে আনতে, আড়ালে আবডালে চলতে থাকা ষড়যন্ত্রগুলো জানাতে; আমি শুধু চেয়েছি আপনাদের সামনে গোটা বাংলাদেশের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরতে। আমি দেখাতে

চেয়েছি, কীভাবে খ্রিস্টানরা আমাদের এ মাতৃভূমি শাসন করেছে, কীভাবে তারা এ ভূমিকে খ্রিস্টরাজ্য বানাতে চাচ্ছে। কীভাবে তারা মানুষকে আকৃষ্ট করে নিজেদের অনুগত করছে।
দেখবেন, অনেকটা হ্যামিলনের বাঁশিঅলার মতো। তার বাঁশিতে বাচ্চারা শহর ছেড়েছিল, এদের বাঁশিতে মানুষ ধর্ম ছাড়ছে। জায়গায় জায়গায় তারা গির্জা গেঁড়ে অনবরত বাজিয়ে যাচ্ছে ধর্মান্তরকরণের বাঁশি। তাই আমি লিখেছি ‘বাংলায় বাজে গির্জার বাঁশি’

.
বই : বাংলায় বাজে গির্জার বাঁশি
লেখক : ওমর আলী আশরাফ
ভূমিকা : মুফতি যুবায়ের আহমদ (দাওয়াহ ইনস্টিটিউট, মান্ডা, ঢাকা)
প্রচ্ছদ : আবুল ফাতাহ
প্রকাশক : বইকেন্দ্র