ঐতিহাসিক কারবালা ট্রাজেডির শিক্ষা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ৩০ ২০২০, ২২:২১

মুহাম্মদ ইমদাদুল হক ফয়েজী: আজ ছিল লোমহর্ষক কারবালা ট্রাজেডি দিবস। ৮৬০ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর, হিজরি ৬০ বা ৬১ বর্ষের ১০ মহররম ঐতিহাসিক কারবালা প্রান্তরে নবীজি সা. এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত হুসাইন রা. ও তাঁর পরিবার-পরিজন, সঙ্গী-সাথীকে অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে শহীদ করা হয়। কুফাবাসীর আশ্বাস পেয়ে হজরত হুসাইন রা. কুফার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে তিনি তাঁর ২০০ জন সাথীসহ ফুরাত নদীর তীরে কারবালা নামক স্থানে পৌঁছলে ইয়াজিদ বাহিনী ও ইহুদি আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার ষড়যন্ত্রের শিকার হন এবং কুফার গভর্নর উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ কর্তৃক বাধাগ্রস্ত হন। রক্তপাত এড়াতে হজরত হুসাইন রা. বিভিন্ন প্রস্তাব পেশ করেন। ইয়াজিদ বাহিনীর প্রায় ৪০০০ প্রেতাত্মা সেগুলোর প্রতি ন্যূনতম ভ্রুক্ষেপ না করে করে অসম যুদ্ধের সুত্রপাত করে এবং হজরত হুসাইন রা. পুত্র হজরত জয়নুল আবিদিন রাহ. ব্যতিত তাঁর সকল সঙ্গী-সাথীদের পাশবিবভাবে শহীদ করে। হজরত হুসাইন রা. ন্যায়-নীতি ও খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অযোগ্য, অত্যাচারী, ক্ষমতালোভী ও অন্যায়-জুলুমের কাছে মাথা নত না করে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। যুগ যুগ ধরে বিবেকবান মানুষ মাত্রই ইয়াজিদি চেতনা এবং তার প্রেতাত্মাদের প্রাণভরে ঘৃণা করেন, ধিক্কার দেন এবং হজরত হুসাইন রা. ও তাঁর অনুসারীদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সাথে স্মরণ করেন। স্থানীয়, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সমাজ ব্যবস্থার প্রতিটি স্তর আজও ইয়াজিদি চেতনার প্রেতাত্মাদের দ্বারা নির্যাতিত, বিপর্যস্ত এবং কোণঠাসা। অপরদিকে প্রতিটি যমানার হুসাইন এবং হুসাইনি আদর্শ ও চেতনা মজলুম এবং উপেক্ষিত।অথচ কথা ছিল, ঘৃণ্য ইয়াজিদি চিন্তা-চেতনা মুক্ত এবং হুসাইনি আদর্শে সমুজ্জ্বল সুন্দর পৃথিবীর। আসুন, ঐতিহাসিক কারবালার কিছু শিক্ষা জেনে নিই এবং ভোগবাদী, ও অন্যায়-অত্যাচারমুক্ত ইনসাফ ও ন্যায়নীতিভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সেগুলোকে কাজে লাগাই।

ঐতিহাসিক কারবালার ট্রাজেডির শিক্ষা: 

১. আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা।

২. ইসলামি জীবন ও শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা এবং আমাদের পারস্পরিক ঐক্য সুদৃঢ় করা।

৩. দ্বীন ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে অযোগ্য, দখলদার, ক্ষমতালোভীর নেতৃত্বকে স্বীকৃতি না দেওয়া।

৪. ভোগবাদী, সুবিধাভোগী, স্বার্থান্ধ, মুনাফেক চরিত্রের লোকদের ব্যাপারে সজাগ-সচেতন থাকা। এদের সকল কথা ও আশ্বাস সরলভাবে বিশ্বাস না করা এবং সহজভাবে মেনে না নেওয়া।

৫. পারিবারিক, সামাজিক, স্থানীয়, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যে কোনও বিরোধ-দ্বন্দ্ব বা সমস্যায় আলোচনা-সংলাপে বসা।

৬. অত্যাচারী-জালেম, স্বৈরশাসক যত প্রভাবশালী হোক তার কাছে মাথা নত না করা।

৭. অপশক্তি যতই শক্তিশালী হোক, সাধারণ শ্রেণির লোকজন তাকে সমর্থন না করা এবং তার কথায় কথায় জ্বি স্যার, জ্বি স্যার না বলে হক ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলে।

৮. `জোর যার মুলুক তার’- নীতি থেকে পরিত্রাণ পেতে সকল প্রকার জালিমকে সর্বাত্মকভাবে প্রতিহত করা এবং মজলুমকে সহযোগিতা করা।

৯. যে কোনও বিপদ-দুর্দশায় পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, সঙ্গী-সাথীদের সাথে থাকা। নিজের প্রাণ রক্ষায় তাদের পরিত্যাগ করে অন্যত্র চলে না যাওয়া।

১০. জীবনের পথ পরিক্রমায়, বিপদ-মসিবতে, দুঃখ-কষ্টে ধৈর্যহারা না হয়ে মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুল রেখে পথচলা।

১১. ইনসাফ ও ন্যায়নীতিভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্টায় আল্লাহভীরু, যোগ্য, নির্লোভ, নির্মল চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিকে সমর্থন ও সহযোগিতা করা।

১২. অন্যায়-অত্যাচারী এবং তাদের পক্ষালম্বনকারী স্বার্থান্বেষীরা সাময়িকভাবে ক্ষমতালাভ এবং উপকৃত হলেও এরা আজীবনের জন্য মানুষের ধিক, অভিশাপ আর ঘৃণার আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়।

১৩. সত্য ও ন্যায়-নীতির ওপর অটল থেকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন না হলেও লড়াকু, মজলুম ব্যক্তির নাম ইতিহাসের পাতায় আর মানুষের বুকে সোনার হরফে লিখা থাকে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা, সম্মান, প্রেম, মমতা আর ভালবাসায় স্মরন এবং অনুসরণ করে।