উন্নয়নের জোয়ার উপহার দিয়েছি; সিলেটের জনসভায় শেখ হাসিনা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ডিসেম্বর ২২ ২০১৮, ১২:০০

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখনই দেশের উন্নয়ন হয়, জনগণের কল্যাণ হয়। আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই জনগণের অধিকারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। উন্নয়নের জোয়ার সিলেটে এসেছে। আমরা সিলেট বিভাগে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। প্রতিটি এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। আমরা ১৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে পেরেছি। আজ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে, ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে। সিলেটে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। এখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে। প্রবাসী যারা আছেন, তারাও বিনিয়োগ করতে পারবেন। সকলের বিনিয়োগের সুযোগ করে দিচ্ছি, যেখানে কর্মসংস্থান হবে।’

তিনি বলেছেন, ‘আগে চায়ের নিলাম শুধুমাত্র চট্টগ্রামে হতো। আমরা সেই নিলাম সিলেটে যাতে হয়, তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। চা শ্রমিকরা সবসময় নৌকায় ভোট দেয়। তাদেরকে ধন্যবাদ। তাদের উন্নয়নে আমরা ব্যাপক কাজ করেছি। চা শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য স্কুলের ব্যবস্থা করেছি, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। আমরা সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। মা বোনেরা এখন বাড়ির পাশে চিকিৎসা নিতে পারেন।’

আজ শনিবার বিকাল ৪টা ৩ মিনিট থেকে আধা ঘন্টারও বেশি দীর্ঘ বক্তব্যে সিলেটে নির্বাচনি জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নগরীর চৌহাট্টাস্থ আলিয়া মাদরাসা মাঠে আয়োজিত জনসভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘সিলেটের উন্নয়নের জন্য স্কুল, রাস্তাঘাট করে দিয়েছি। গত জানুয়ারিতে এসে অনেক প্রকল্প উদ্বোধন করে যাই। সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। সিলেটের সকল জেলায় যাতে বিশ্ববিদ্যালয় হয়, সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় করতে উদ্যোগ নিচ্ছি। সিলেট-ঢাকা চারলেন সড়ক দ্রুত শুরু হবে। সিলেট বিভাগের সকল প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করে দিচ্ছি। সিলেটে প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছিল। এখন লন্ডন থেকে সরাসরি বিমান দেশে আসে। জলাবদ্ধতা যাতে না হয়, তার ব্যবস্থা করেছি। সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম করে দিয়েছি। দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়াম এখন অনেকেই দেখতে আসে।’

তিনি বলেন, ‘জানুয়ারিতে সিলেট থেকে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছিলাম। আবারও আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। বিজয়ের মাসে আপনাদের সামনে এসেছি। আগামী নির্বাচনে আমরা যে প্রার্থী দিয়েছি, তাদের জন্য নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রীকে শাহ এ এমএস কিবরিয়াকে হত্যা করা হলো। সারাদেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। বাংলাদেশকে দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে, জঙ্গিবাদি দেশ হিসেবে, সন্ত্রাসী দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। দেশের মানুষের মানইজ্জত সব শেষ করে দিয়েছে। তাদের অরাজকতার কারণে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল। ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল বিএনজি-জামায়াত। তারা মানুষ পুড়ানো, অস্ত্রবাজি, দুর্নীতি করা ছাড়া আর কিছু জানে না। এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছিল। খালেদা জিয়ার প্রিয় ব্যক্তিরাই তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তার বিরুদ্ধে আমি বা আওয়ামী লীগ মামলা দেয়নি। সেই মামলা দশ বছর ধরে চলে শাস্তি দেয়া হয়েছে। একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা স্পিøন্টার নিয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান বিদেশে বসে কলকাঠি নাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়, দারিদ্রের হার কমে। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭.৮৬ ভাগে উন্নীত করেছি। আমরা সকলের জন্য বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। দুই কোটি চার লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিচ্ছি। মায়ের মোবাইল ফোনে উপবৃত্তির টাকা দিচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ১৯৯৬ সালে মোবাইল ফোন বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেই। সারাদেশে ইন্টারনেট চালু করেছি। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি। মোবাইল ফোন এখন সবার হাতে। মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে সবাই এখন বিশ্বকে দেখতে পারে, আত্মীয়স্বজনকে দেখতে পারে। মোবাইল ফোনে আমরা টু জি থেকে থ্রিজি, থ্রিজি থেকে ফোরজিতে চলে এসেছি। আগামীতে আমরা ফাইভ জি চালু করবো।’

দীর্ঘ বক্তব্যে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আমরা হাওরাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। হাওরবাসী যাতে শুধু মাছ চাষেই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাদের এগিয়ে নিতে বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করেছি। হাওরাঞ্চলে যাতে শিল্প গড়ে ওঠে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। প্রতিটি মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে বাংলাদেশকে নিয়ে উন্নয়নের পরিকল্পনা তুলে ধরেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেট বিভাগের বিভিন্ন নদী ভাঙন ঠেকাতে, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছি। সিলেট বিভাগের সকল জেলায় সার্বিক উন্নয়নে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। আবার ক্ষমতায় এলে তা বাস্তবায়ন হবে। দারিদ্র বলে কিছু থাকবে না। মানুষ সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবে।’

‘নৌকা হচ্ছে মানুষের বিপদের বন্ধু’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নুহ নবীর আমলে মহাপ্লাবন থেকে মানুষ জাতিকে রক্ষা করেছিল নৌকা। নৌকা বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দিয়েছি। নৌকা দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বিশ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে ঘরে আমরা আলো জ্বালবো, কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না। এই নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। বাংলাদেশ একসময় নেতিবাচক পরিচিতি পেয়েছিল। এখন বাংলাদেশ মানে উন্নয়ন। বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল। আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। আমি দুর্নীতি করতে আসিনি। আমি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি, নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। যে অভিযোগ ওঠেছিল, তা বানোয়াট ছিল প্রমাণ হয়ে গেছে। চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু করবো। আল্লাহর রহমতে তা আমরা করছি।’

‘বিএনপি-জামায়াত জোট বাঙালি জাতির মানসম্মান ভুলুণ্ঠিত করেছিল’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হত্যা, দুর্নীতি এগুলো ছিল তাদের নীতি। নির্বাচনে তারা একেক আসনে চার-পাঁচজনকে নমিনেশন দিয়েছে। পরে অকশনে দিয়েছে। যে বেশি টাকা দিয়েছে, তাকে মনোনয়ন দিয়েছে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগদান করায় তাকে স্বাগত জানান শেখ হাসিনা। লন্ডনে থাকা সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে দেশে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা হবে বলেও মন্তব্য করে তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বে যে সম্মান অর্জন করেছে, তা ধরে রাখতে হবে। যে সম্মান বিশ্বে পায়, তার জন্য নৌকায় ভোট দিতে হবে। আমি নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে এসেছি। শুধু নৌকা প্রতীক নয়, আমরা মহাজোটের সকল প্রার্থীর জন্য ভোট চাইতে এসেছি।’

জনসভায় সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে মহাজোটের সকল প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকা প্রতীক বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধ দেশ। ২১০০ সালের মধ্যে ডেল্টা প্ল্যানের মাধ্যমে বাংলাদেশেকে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’