ঈদে মীলাদুন্নবী: শরিয়তের মেজাযের সাথে সাংঘর্ষিক

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

নভেম্বর ২১ ২০১৮, ০৬:৩০

হুসাইন আহমাদ বাহুবলী: ইসলামী শরিয়তের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। নবীজি তা ধরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। বিধর্মীদের সাথে মিলে না যায় এই উদ্দেশ্যে শরিয়তের বিধানে পরিবর্তন এনেছেন। বহু নজীর আছে।

এক.
খৃষ্টানরা ঋতুস্রাব চলাকালীন স্ত্রী সহবাস করত। পক্ষান্তরে ইহুদিরা সহবাস করতো না ঠিক কিন্তু নারীদেরকে নিজ গৃহে অবস্থান করতেও দিতো না। ভারতে হিমাচল প্রদেশে কুলু এলাকার জানা গ্রামে এই রীতি এখনও চলমান আছে বলে বিবিসি বাংলা নিউজপোর্টালে দেখলাম,
তবে তারা হিন্দু ধর্মের অনুসারী।

নবীজি ইসলামের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রক্ষা করে বিধান ঘোষণা করলেন,
اصنعوا كل شيئ الا النكاح
ওঠা-বসা, চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, সহাবস্থান, আদর-সোহাগ করতে পারবে। শুধু সঙ্গম করতে পারবে না।

এমনকি ঘোষণা করলেন
شد إزارها، ثم عليك بأعلاها
স্বামী নিজ স্ত্রীর নাভীর উপর ও হাঁটুর নীচ থেকে উপকৃত হতে পারে রজস্রাব চলাকালে।

হযরত উসাইদ বিন হুযাইর ও আব্বাদ বিন বিশর রা. প্রশ্ন রেখেছিলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ,
افلا نجامعهن
আমরা সহবাস করে নিলে অসুবিধা কি ?
নবীজি এতে প্রচন্ড রাগান্বিত হলেন, রাগে ক্ষোভে চেহারা মোবারক রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছিল।

দুই.
ইহুদিরা আশুরার রোজা রাখতো একটি। নবীজি ইসলামের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলে নির্দেশ দিলেন

صُومُوا يَوْمَ عَاشُورَاءَ ، وَخَالِفُوا فِيهِ الْيَهُودَ ، صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا أَوْ بَعْدَهُ يَوْمًا
ইহুদিদের সাদৃশ্য থেকে বেচে থাকার জন্য আশুরার রোজায় আগে অথবা পরে একদিন বাড়িয়ে দুই রোজা রাখো।

তিন.
আরবের পুরুষেরা দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা পৌরুষত্বের প্রতীক ভাবতো। নবীজি সেখানে বসে প্রস্রাবের নিয়ম চালু করলেন, নিজে প্রস্রাব করতে বসে পড়লেন। এক মুশরিক বলে উঠল,
انظروا إلى هذا الرجل يبول كما تبول المرءة
দ্যখো! লোকটা নারীদের মত বসে প্রস্রাব করছে, এমনিভাবে ইসলামী শরিয়তের বিধান প্রবর্তনে অব্যাহত ভাবে ইসলামের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রক্ষায় বিধর্মীদের রীতির বিপরীত নীতি চালু করতে থাকলে ইহুদিরা বীতশ্রদ্ধ হয়ে বলতে লাগল,
ما يريد هذا الرجل أن يدع من أمرنا شيئا إلا خالفنا فيه
লোকটা আমাদের বিরোধিতা করার উদ্দেশ্যেই আমাদের নীতি বিরোধী বিধান প্রনয়ণ করে।

ভাবনার বিষয়, আমাদের নবী কোন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আইন প্রনয়ণ করতেন তা বিধর্মীদের কাছে স্পষ্ট থাকলেও আমাদের কিছু ভাইদের কাছে স্পষ্ট নয়।

এই ছিল বিধান প্রবর্তনে নবীজির দৃষ্টিভঙ্গি বা শরিয়তের মেজায। নিজ ধর্মের স্বকীয়তা বজায় রাখা। অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাদৃশ্য গ্রহণ না করা। এই মর্মে তিনি বহু বানী উপস্থাপন করেছেন,
من تشبه بقوم فهو منهم
রং ধরবে যার, সাথী হবে তার।
من كثر سواد قوم فهو منهم
দল ভারি করবে যার, পরিনতি হবে তার।
المرء مع من أحبه
যার সাথে যার মহব্বত, তার সাথে তার কিয়ামত।
المرء على دين خليله فلينظر أحدكم من يخالل
বন্ধুর পথের পথিক হবে, যাচাই তবে করবে কবে ?

এবার আসি মূল কথায়, নবীজির যুগেই খৃষ্টজগত তাদের যীশুখৃষ্টের জন্মদিন পালন করে আসছিল।
যে কারণে তিনি সাহাবা এমনকি নিজের জন্মদিন পালনের জন্য বছর ঘুরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে বলেন নি।
এমনকি ইসলামী পঞ্জিকার হিজরী ক্যালেন্ডার তৈরী করার পরামর্শ বৈঠকে। হযরত উমর রা. এর কাছে প্রস্তাব পর্যন্ত এসেছিল যে, যেভাবে খৃষ্টানরা খৃষ্টাব্দ তৈরি করেছে। তাদের নবী ঈসা আঃ এর জন্মকে কেন্দ্র করে।
আমরাও আমাদের নবীজির জন্মদিনকে কেন্দ্র করে ইসলামী সনের হিসাব শুরু করতে পারি।
হযরত উমর রা. এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে। কারণ দর্শালেন এভাবে যে,
যদি আমরা নবীজির জন্মদিন দিয়ে সন শুরু করি তাহলে বছরান্তে খৃষ্টজগত যেভাবে তাদের যিশুর জন্মদিবস পালন করে,
মুসলিমরাও খৃষ্টানদের অনুকরণে বিশ্বনবীর জন্মদিবস পালন করতে শুরু করবে।
এতে একদিকে যেমন বিধর্মীদের অনুকরণ হয়ে যাবে যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ,
অপরদিকে এটা শরিয়তের মেজাযের সাথেও সাংঘর্ষিক।
ফলে নবীজির কোন সাহাবী না নবীজির বাৎসরিক জন্মদিন পালন করেন, না তাঁরা নিজেদের কারো জন্মদিন পালন করেছিলেন ।
এই ধারা সাহাবা, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, বিশেষকরে আইম্মায়ে আরবাআ,

এমনকি নবীজিকে রওজা শরীফে দাফনের দীর্ঘ ছয়শত বছরের মধ্যে মুসলিম সমাজে নবীজির অথবা কোন মুসলিমের জন্মদিন পালনের কোন প্রচলন ছিল না।

হিজরী ছয়শতাব্দীর পর ইরাকের ইরবল নামক স্থানের বাদশা মোজাফফার উদ্দিন শখের বসে এই খৃষ্টীয় কালচার সর্বপ্রথম মুসলিম সমাজে আমদানি করেন। যা মীলাদুন্নবী পালনকারী ভাইদের পুস্তকেই সুন্দর করে লেখা আছে।

সুতরাং যেখানে কোন সাধারণ মুসলিমের জন্মদিন পালনের অনুমোদন নেই ইসলামে। সেখানে ইসলামের নবীর জন্মদিন পালনের আয়োজন!
ইসলামের প্রতি নির্মম উপহাস ছাড়া কিছুই নয়।

উপরন্তু এটাকে ঈদ কিংবা বড় ঈদ বলে উপস্থাপন, উপহাসের শব্দদূষণে সাউন্ডবক্স যুক্ত করণের শামিল বলা ছাড়া উপায় নেই।

-হুসাইন আহমাদ বাহুবলী,
লেখক,শায়খুল হাদিস।