আ.লীগ গণতন্ত্রের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে; মির্জা ফখরুল

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ১৬ ২০২৩, ২২:৫২

আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউরী এলাকায় শ্রমিক দল আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণ ভোট দিলে সেই ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। পরে সেই প্রতিনিধি পার্লামেন্টে যাবেন, পার্লামেন্টে গিয়ে আইন তৈরি করবেন যে কীভাবে সরকার গঠন করা হবে। এজন্যই বলা হয় এটা গণতন্ত্র, এজন্যই বলা হয় যে পার্লামেন্টে নির্বাচন প্রয়োজন। আর এজন্য নির্বাচনকে গণতন্ত্রের পদযাত্রা, মহান দরজা বলা হয়। সেই দরজাটা এরা (আওয়ামী লীগ) বন্ধ করে দিয়েছে। সেই নির্বাচন আর হয় না।’

ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায় মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মানুষ আর নির্বাচনে ভোট দিতে যেতে চায় না৷ কারণ ভোট দিতে হয় না। তাহলে কেন তারা ভোট কেন্দ্রে যাবে? ভোট হয়?

‘আবার বলা হচ্ছে ওদের অধীনেই সুষ্ঠু ভোট হয়। মানুষ হাসবে না কাঁদবে? ভূতের মুখে রাম রাম। ন্যাড়া বার বার বেলগাছ তলায় যায়? আমরা কি বার বার এই নির্বাচনে যাব? মোটেই না।’

আওয়ামী লীগকে বকধার্মিক উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নদীর মধ্যে, চরের মধ্যে এক পা দিয়ে একদম চুপ করে বসে থাকে। মনে হয় যে এর মতো ধার্মিক, এত ভালো পাখি আর কোথাও নেই। যেই একটা মাছ নিচ দিয়ে যায়, ধরে গপ করে গিলে ফেলে। আওয়ামী লীগ হচ্ছে এই বকধার্মিক। চুপ করে বসে আছে। নতুন ভান করছে ক্ষমতার চেয়ারে টুপ করে বসে পড়ার জন্য।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ওই যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান, যেটা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া করেছিলেন এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য৷ সেদিন নতুন সংসদ গঠন করে, সেই সংসদে সারারাত ধরে সেশন করে আমরা সবাই সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান করেছিলাম।

‘কেন? যদি নির্বাচনের সময় নির্দলীয় কোনো সরকার থাকে, তখন জনগণ নিজের ইচ্ছায় ভোটটা দিতে পারবে। ভোটের পর সাধারণ মানুষ কি ৫ বছর ধরে সরকার চালায়? একটি দিনের জন্য ওরা এদেশের মালিক। সেটি হচ্ছে নির্বাচনের দিন।’

আওয়ামী লীগ কৌশলে বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে চায় মন্তব্য করে মহাসচিব বলেন, ‘এরা সারা দুনিয়াকে বুঝাতে চায়- দেখো, আমি কত ভালো হয়ে গেছি! কিছুদিন আগে যে বিদেশিরা এসেছিলেন তাদেরকে ক্ষমতাসীনরা দেখায়- দেখো, আমি কত ভালো। আমরা বিরোধী দলকে সভা করতে দেই, মিটিং করতে দেই, তাদেরকে বাধা দেই না। আর যে-ই সময় আসবে, টপ করে ধরে ফেলবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অধীনে নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। এ দেশের জনগণ এটি আর মানবে না।

‘মূলত আওয়ামী লীগের চরিত্র ভালো না। তারা ভোটের আগে জনগণকে দেয়া একটি কথাও মনে রাখে না। শুধু মনে রাখে লুট, ডাকাতি আর চুরি করে সব পাচার করে দেয়া। ১৯৭৪ সালে এখনকার মতো যখন তারা লুটপাট শুরু করেছিল তখন মওলানা ভাসানী বলেছিলেন- আওয়ামী লীগের নামটাই বদলে দিতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজ আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলছেন, মাফিয়া হটাও। মাফিয়া তারা, যারা বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় থাকে আর শুধু লুটপাট করে।

‘আওয়ামী লীগ পরিকল্পনা করছে, কীভাবে আবার ক্ষমতায় আসা যায়। সেজন্য তারা প্রশাসনে রদবদল করছে। মন্ত্রীর পিএস-এপিএসদের ডিসি (জেলা প্রশাসক) বানাচ্ছে। তারা নির্বাচনের সময় রিটার্নিং অফিসার হবেন। এছাড়া ইউএনও বানানো হচ্ছে আওয়ামী লীগের পছন্দের লোকদের।’

নির্বাচন কমিশন কথা অনুযায়ী কাজ করে না দাবি করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সবসময় সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে। তারা বলে নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো হবে। কিন্তু বাস্তবে তারা এটি করে না, করবে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ এখানে এমন কেউ নেই যে কোনো না কোনো মামলার আসামি। কেউ বোমা মামলার আবার কেউ নাশকতার মামলার। আমরা যুদ্ধ করেছিলাম একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক দেশ নির্মাণের জন্য। যেখানে ন্যায়বিচার থাকবে এবং ভোটাধিকার থাকবে।

‘বর্তমানে শ্রমিক ভাইয়েরা ন্যায্য মজুরি পান না। জনগণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাজারে যেতে পারে না। অথচ আওয়ামী লীগ বলেছিল ১০ টাকায কেজি চাল খাওয়াবে। আজ চালের দাম কত? তারা বলেছিল- ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। কৃষক ভাইদের বলেছিল- বিনামূল্যে সার দেবে। আজকে সারের দাম ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা।’

লন্ডন থেকে অনুসন্ধানী রিপোর্ট হয়েছে জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে- ৫৭২ কোটি টাকার সার বন্দর থেকে গায়েব হয়ে গেছে। যদিও এ টাকা তাদের কাছে কিছুই না। অর্থমন্ত্রী কয়েকদিন আগে বলেছিলেন- আইএমএফের টাকা কিছুই না। এটা তারা কয়েকজন মিলে শোধ করতে পারেন। তারা পারবেন, কারণ তারা হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করেছেন।’

চট্টগ্রামবাসীকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনাদের এখানে একটা টানেল হচ্ছে। কয়েকদিন পর সেটা উদ্বোধন করা হবে। আমরাও খুব খুশি। কারণ পৃথিবীর খুব কম দেশে টানেল হয়েছে।

‘টানেল হওয়াতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমাদের আপত্তি অন্য জায়গায়। আজকে জনগণ ১০ টাকায় চাল খেতে পারছে না। চিকিৎসার জন্য কোনো হাসপাতাল নির্মাণ হয় না। সরকার আমাদের দেখাক যে গত ১৫ বছরে জনগণের জন্য কয়টা হাসপাতাল নির্মাণ হয়েছে। একটাও দেখাতে পারবে না। সাধারণ মানুষের লেখাপড়ার জন্য স্কুল-কলেজ তৈরি করেনি। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। এ জন্যই আমরা রাস্তায় নেমেছি।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর নাসির উদ্দিন, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, বান্দরবান বিএনপির নেতা ম্যামাচিং।