আল্লামা কাসেমীর প্রশ্ন, ছাত্রলীগ পর্দার বিধানকে নিষিদ্ধ মনে করে কিনা?

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ১৯ ২০১৯, ০৫:১৮

গত ১৩ মার্চ বুধবার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিএস গোলাম রাব্বানী কর্তৃক বেগম রোকেয়া হলের গেটে ছাত্রীদের সাথে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে বোরকা ও হিজাবধারী ছাত্রীদেরকে ঢালাওভাবে জামায়াত-শিবিরের কর্মী বলে অভিযুক্ত করায় গভীর উষ্মা প্রকাশ করেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ছাত্রীদের বোরকা ও হিজাব পরা এবং পরপুরুষের কাছ থেকে মুখ ঢেকে চলা-ফেরার সাথে জামাত-শিবিরের কী সম্পর্ক রয়েছে, ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রাব্বানিকে জাতির কাছে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।

১৮ মার্চ সোমবার এক বিবৃতিতে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী আরো বলেছেন, মুসলিম সাবালক নারীদের জন্য ঘরের বাইরে চলাফেরার সময় সাবালক পরপুরুষের দৃষ্টি থেকে নিজেকে আড়ালে রাখতে পর্দা করে চলা ফরয তথা ইসলামের অপরিহার্য বিধান। ইসলামের এই অপরিহার্য পর্দার বিধান পালন করার জন্যই ধর্মভীরু মুসলিম ছাত্রীরা বোরকা, হিজাব ও নেকাব পরে থাকেন। এই বোরকা, হিজাব, নেকাবের সম্পর্ক তো ইসলামের সাথে। এটা তো সুনির্দিষ্টভাবে শিবিরের কোন লোগো নয়, বরং এটা ইসলামের লোগো। অথচ দেখা গেল, ছাত্র নেতা গোলাম রাব্বানী শুধুমাত্র বোরকা, হিজাব ও নেকাব পরাটাকেই ছাত্র শিবির হওয়ার প্রমাণ সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছেন। এটা অত্যন্ত অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়। তিনি বলেন, ধর্মপ্রাণ মুসলিম ছাত্রীদেরকে ঢালাওভাবে জামায়াত-শিবির আখ্যায়িত করে অপদস্ত চেষ্টার জন্য গোলাম রাব্বানীকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

আল্লামা কাসেমী বলেন, হিজাব একদিকে যেমন ইসলামের অপরিহার্য বিধান ফরয, অন্যদিকে বর্তমানে হিজাব নারী স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত। কারণ, দেশের শাসক দল, সরকারের কোন কোন মন্ত্রী এমপি, তথাকথিত প্রগতিশীল সমাজ, এবং সেক্যুলারবাদি ও নাস্তিক্যবাদি চিন্তার মিডিয়া যেখানে হিজাব পরিধানকারীদের মন্দ কথা বলে, উপহাস করে, বাধাদান করে, নেতিবাচক দৃষ্টিতে চিত্রিত করার অপচেষ্টা করে, সেই রকম একটা প্রতিকূল পরিবেশে একজন মুসলিম ছাত্রীর হিজাব ধরে রাখাটা নিজের উন্নত স্বকীয়তা ও ব্যক্তিত্ববোধ এবং স্বাধীনচেতা মনের পরিচায়ক। আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটির সেই সব মর্যাদাবান ছাত্রীদেরকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই।

তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ছাত্র নেতা গোলাম রাব্বানীকে বলতে হবে, তার সংগঠন বোরকা, হিজাব বা নিকাবের বিরোধী কিনা? তাদের ছাত্রী সংগঠনের নেত্রী ও কর্মীদের হিজাব পরতে বাধা আছে কিনা? সেই রাতের ঘটনায় তো মনে হচ্ছে, গোলাম রাব্বানীর সংগঠন নারীদের জন্য ইসলামের অপরিহার্য পর্দা বিধানের বিপক্ষে। অন্যথায় গোলাম রাব্বানীর এমন গর্হিত বক্তব্যের জন্য তো তাকে সাংগঠনিকভাবে শোকজ করার কথা। এমনকি, আমরা আওয়ামী লীগের কোন নেতাকেও গোলাম রাব্বানীর বোরকা, হিজাব ও নেকাবকে শিবিরের সিম্বল আখ্যায়িত চেষ্টার সমালোচনা করতে দেখিনি।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে একজন হিজাবধারী ছাত্রীকে পদে পদে যে পরিমাণ নাজেহাল হতে হয়, ইউরোপ-আমেরিকার মতো পশ্চিমা অমুসলিম দেশেও প্রকাশ্যে এতটা নাজেহাল হতে হয়, শুনি না। সেসব দেশের মুসলিম নারীদেরকে রেডিও টিভির সংবাদ পাঠ, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চাকুরি এবং বিভিন্ন অফিস ও বিদ্যালয়ে হিজাব পরে স্বাচ্ছন্দের সাথে দায়িত্ব পালন করতে দেখি। অথচ বাংলাদেশে এরকম দেখা যায় না। শোনা যায়, অঘোষিতভাবেই এসব পদে হিজাবধারী কেউ আবেদন করলে শুরুতেই অন্য অজুহাতে তার আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে হিজাব পরা নারীদের এতটা অসম্মান ও এতটা বাধাগ্রস্ত করা বাস্তবিকই অনেক বেদনাদায়ক ও হতাশার। ইসলামী নেতৃবৃন্দ, রাজনীতিবিদ, মানবাধিকারকর্মী এবং সর্বোপরি প্রশাসনের প্রতি দেশের সকল স্তরে মুসলিম নারীদের হিজাবের স্বধীনতা নিশ্চিতের বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নেওয়ার জন্য জমিয়ত মহাসচিব আহ্বান জানান। তিনি জনগণকেও হিজাবের স্বাধীনতা নিশ্চিত সচেতন ও সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান।