“আমার দেখা ৬ই মে” – মজলুম মুজাহিদ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

নভেম্বর ০৫ ২০১৮, ১৭:২৬

একুশে জার্নাল ডেস্ক: বর্তমানে কিছু পরিস্থিতি অবলোকন করে হতাশ হই।মনে কোনভাবেই জমানো দুঃখ ব্যথা আর লুকিয়ে রাখতে পারি না। সহসা চোখের কোণে জমতে থাকে বিন্দু বিন্দু অশ্রুজল। শোকরানা মাহফিল নিয়ে অনেক কিছুই বলার ছিল!সংগত কারণে কিছু বলতে পারছিনা! সময়ই বলে দিচ্ছে এর পরিণাম। সামনে আরো কি ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনে…!
চাটুকারদের প্রোপাগান্ডা দেখে আর সহ্য হচ্ছে না। তাই আমার কালো অধ্যায়টা আপনার কাছে বলে যদি কিছুটা শান্তি পাই…!
তাহলে কিছু কষ্ট হয়ত
লাঘব হবে। মনের ব্যথাও উপশম হবে!
যা হোক।
আমি বলতে চাচ্ছি আমার সাথে ঘটে যাওয়া ভয়াল রাতের গল্প।
২০১৩ সালের ৫ই মের অবরোধের কিছু কালো ইতিহাস যা ৬ই মে রাতে সংঘটিত হয়ে ছিল এক ভয়াল রাত।

প্রিয় পাঠক!
আপনারা অনেকই হয়ত সেই রাতের প্রত্যক্ষী!
ভয়াল রাতের সেই রাতটিতে শহীদদের সাথি আমিও ছিলাম!কিন্তু আল্লাহর নেক দয়ায় দ্বিতীয় বারের মতো সেই দিনে নতুন জীবন ফিরে পাই।

কি সেই ঘটনা?
আসুন একটু কষ্ট করে পড়ে নিই!

আমাদের প্রাণের নবী (সা.) ও মহান আল্লাহর বিধান ইসলামকে নিয়ে নাস্তিক্যবাদীরা কটুক্তি করায় গড়ে উঠে “হেফাজতে ইসলাম”।
সারা দেশের তাওহীদ প্রিয় মানুষকে প্রতিবাদী
হওয়ার আহ্বান জানায় হেফাজতে ইসলাম।

তখন জেলা শহর গ্রাম গঞ্জে অর্থাৎ সারা দেশ নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে শুরু হয় তীব্র আন্দোলন।
সরকারের কঠোর বাধা বিপত্তি থাকার পরও তা ডিঙ্গিয়ে ১৩ সালের ২৬ মার্চ লং মার্চে শাইখুল হাদীস আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা.বা. এর ডাকে সাড়া দিয়ে বিশ্বের কাছে জানান দেয় ইসলাম প্রিয় আলেম উলামাসহ সর্বস্তরের
তাওহীদ প্রিয় নবী প্রেমিক আপামরজনসাধারণ।
আমরা মুফতি রশিদুর রহমান পীর সাহেব বরুণীর নেতৃত্বে শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকা লং মার্চের উদ্দেশ্যে রাত এশার পর রোওয়ানা দিই।
নরসিংদীতে আওয়ামী কেডার বাহিনীর সম্মুখীন হলে সেখানেই আমরা লংমার্চ পালন করে বিকেলে মাদরাসার উদ্দেশ্যে রোওয়ানা দিই।

তীব্র আন্দোলনের পরও ইসলাম অবমাননাকারীদের শাস্তি না হওয়ায়, এর পরিপ্রেক্ষিতে ৫ মে ঢাকা অবরোধ করার ঘোষণা করা হয় হেফাজতের পক্ষ থেকে।
নাস্তিক্যবাদের বিচারের দাবি নিয়ে শাহ আহমদ শফি দা.বা. হুযূরের ডাকে সাড়া দিয়ে ৫ মে সর্বস্তরের মানুষ ঢাকা অবরোধ করতে আসে।

এতে অংশ গ্রহণ করার জন্য বরুণা মাদরাসা শ্রীমঙ্গল মৌলভীবাজার থেকে ৬০/৭০ জনের মতো ছাত্র বাসযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রোওয়ানা হই।
সাথে ছিল প্রতিরোধ করার জন্য একেকজনের একেকটি লাঠি।
সরকার পক্ষ থেকে কঠোর বাধাও ভয় ভীতির
পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। ঢাকায় প্রবেশ করা যাবে কি না তা নিয়ে সবাই চিন্তিত ও আতঙ্কে ছিলাম।
আল্লাহর রহমতে রাতে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল।
বৃষ্টির কারণে আমরা ঢাকায় সহজেই পৌঁছে যাই।

সকাল থেকে আমরা অবরোধ পালন করে বিকেলে শাপলাচত্বরে সবাই উপস্থিত হই।
শাপলাচত্বরে আসার পর দুইজন ছাত্রভাইয়ের শহীদ হওয়ার ঘোষণা শুনি। মৃত্যুর খবর শুনে অনেকেই আতঙ্কের মধ্যে বিরাজমান ছিল।
আবার প্রতিবাদ মুখর ছিল। ধারাবাহিক ভাবে একের পর এক উত্তেজনা মূলক বয়ান চলছিল।
এর ফাঁকে এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করছিলাম।
একটি মসজিদে গিয়ে আমরা কিছুসময় বিশ্রাম নিই।

আসর নামাজ পর মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় আমাদের প্রাণ প্রিয় উস্তাদ আবু হাম্মাদ জালালাবাদী হুযূরের দেখা পাই।
তিনি আমায় একা দেখে বললেন, মুজাহিদ! তোমার সাথে কাউকে দেখছি না যে কার সাথে এসেছ?
আমি বললাম হুযূর!
আমি মাদরাসার ছাত্র কাফেলার সাথে এসেছি।
তিনি বললেন
চল আমাদের সাথে বেফাকের প্রধান কেন্দ্রে।
ওখানে নিরাপদে থাকা যাবে।
আমি যাব না বলে শ্রদ্ধার সাথে হুযূরকে অসম্মতি জানাই। আমি বুঝতে পারি আমাকে নিয়ে টেনশন করা হবে তাই হুযূরের সাথে যেতে ইচ্ছুক হইনি।
বেফাকের প্রধান কেন্দ্রে যাওয়ার মোটেও
ইচ্ছে ছিল না।কেননা আন্দোলনে যেহেতু এসেছি এর শেষ দেখে যাব! সামনের আন্দোলনে কি কি ঘোষণা হবে তা জানার জন্য শাপলাচত্বরে থেকে যাই।

মাগরিবের পূর্বে শাপলাচত্বর মঞ্চ থেকে আমাদের মৌলভীবাজারের কৃতি সন্তান ওলিকুল শিরোমণি শেখ বাড়ি জামেয়ার মুহতামিম মুফতি রশিদুর রহমান হামিদী সাহেব মোনাজাত করেন।
মোনাজাতে উনার কান্নায় ও তাওহীদি জনতার
কান্নায় আকাশ পাতাল প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। সারা বিশ্বে এই মোনাজাতটা ছড়িয়ে পরে।এই মোনাজাতে বিশ্বের অনেক মুসলমান অংশগ্রহণ করেন। এই মোনাজাতের মাধ্যমে হুযূর সবার প্রিয় হয়ে ওঠেন।মোনাজাতের পর সর্বস্তরের আপামরজনতা আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা.বা. এর আগমনের অপেক্ষায় ছিল।
একটু পর পর ঘোষণা দেওয়া হচ্ছিল যে অতি
শীঘ্রই আমাদের মাঝে শাহ আহমদ শফী সাহেব দা.বা. উপস্থিত হবেন বলে পরিচালক সাহেব ব্যর্থ আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছিলেন!
অথচ উনি যে আসতে পারবেন না সে সম্পর্কে তাঁরা অবগত ছিলেন। এটা আমার শুনা কথা। জানি না এটার বাস্তবতা কতটুকু?

রাত প্রায় ১:০০ অথবা ১:৩০ মিনিটের দিকে হযরত মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারি সাহেব মাইকে কথা বলছিলেন।কথা শুনে শুনে
আর ভালো লাগছিল না!ক্ষুধার কারণে ভালো
লাগছিল না। প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছে। ক্ষুধায় পেট ছু্ঁইছুঁই করছে। আগে কিছু খেয়ে নিই তারপর বক্তৃতা শুনব বলে মনোস্থির করি। এই ভেবে সহপাঠি মারজান ভাইকে বললাম চল ভাই! একটু ঘুরেফিরে কিছু খেয়ে আসি।খুব ক্ষুধা পেয়েছে! সে বলল তুমি যাও আমার চোখে অনেক ঘুম। শরীর মানছে না। পারলে আমার জন্য কিছু নিয়ে এসো। আমি একা একা পথ ধরলাম কিছু খাবার সংগ্রহ করতে।অনেক খুঁজাখুঁজির পর খুঁজতে খুঁজতে একটা হোটেলের দেখা পাই!সেখানে গিয়ে ভাত মাছ পেট ভরে খেয়ে নিই।আসার সময় ওর জন্য কি নেব না নেব ভাবছিলাম।সামনে দেখলাম রুটি কলা নিয়ে এক দোকানদার বসে আছে। রুটি কলাও অল্প ছিল।আমি বললাম ভাই রুটি কলা কতো?দোকানি উত্তর দিল না।দোকানিকে বললাম ভাই!আমায় সবগুলো রুটি কলা দিয়ে দিন!দোকানের কয়েক লোক আমার অস্থির কণ্ঠ শুনে একলোক বলল ভাই এগুলো নিয়ে যান টাক লাগবে না। আমি টাকা দিয়ে দেব।এ নিয়ে কে টাকা দেবে না দেবে তা নিয়ে ঝগড়া চলল কিছুস