আমাদের অঙ্গনে শারীরীক ফিটনেসহীনতা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ০৪ ২০১৮, ০৪:২৮

 

মুফতী জিয়াউর রহমান

আমাদের অঙ্গনে স্বাস্থ্যসচেতনতার প্রচুর অভাব৷ বিশেষ করে শারীরীক ফিটনেসের দিকে আমরা মোটেও খেয়াল করি না৷ অনিয়ন্ত্রিত ও অসেচতন জীবনযাপনের কারণে অনেকেই ভুঁড়িমোটা রোগে আক্রান্ত৷ শারীরীক কসরত, ব্যায়াম, অনুশীল, ঘামঝরানো কায়িক পরিশ্রম, ভোরবেলা হাঁটা-চলা করা- কোনো কিছুরই বালাই নেই আমাদের৷ সারাদিন বসে বসে কাজ করা, পড়া, পড়ানো সবকিছু শরীরের জোড়াগুলোকে ক্রমশ অচলাবস্থার দিকে নিয়ে যায়৷ আলস্য আমাদের নিজের কাজ নিজে করা থেকে বঞ্চিত রেখে দেয়৷ সুস্থ-সবল শরীর থাকা সত্ত্বেও নিজের কাপড় অন্যকে দিয়ে ধোয়াই৷ কারণ সেই আলস্য, সেই অসচেতনতা৷

ফজর পর হাঁটতে বেরোই৷ (যদিও সব দিন সম্ভব হয় না৷) পরিচিত অনেক ভুঁড়িমোটা আহলে ইলমকে চিনি, যাদেরকে কখনোই শরীরকে একটুখানি ঝাঁকুনি দেওয়ার জন্যে হলেও বেরুতে দেখি না৷ সেদিন প্রায় ৩০শের মতো বয়েসি এক বন্ধু মানুষকে পেলাম৷ ইয়া মোটা হয়ে গেছেন! চেনাই যাচ্ছিল না৷ মনে হয়েছে পঞ্চাশোর্ধ একজন প্রৌঢ়৷ স্ত্রীদেরকেও এরা বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেয়৷ স্ত্রীরা চায় তাদের স্বামী হবে স্লিম এবং স্মার্ট৷ কিন্তু আমরা তাদের চাহিদাকে থোরাই কেয়ার করি৷

আমাদের শারীরীক ফিটনেসহীনতার সবচে বড় কারণ হলো, আমরা খাওয়া এবং পান করার ক্ষেত্রে সুন্নাতের পাবন্দ নই৷ অথচ শরীয়তে শারীরীক ফিটনেস গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ আল্লাহ তাআলার কাছে শক্তিশালী মানুষ অধিক প্রিয়৷ আর সেই শক্তির অন্যতম রহস্য শারীরীক ফিটনেস৷

সুন্নাহসম্মত খাওয়া এবং পান করার কৌশল সম্পর্কে চমৎকার একটি ভিডিও দেখেছি৷ বারবার দেখেছি৷ আমার টাইমলাইনে সেটি শেয়ারও করেছি৷ পাকিস্তানি একজন হাকীমের ভিডিও বক্তব্যের মূল কথাগুলো নিচে তুলে ধরলাম৷

তাঁর দাবি হলো, পাকিস্তানে তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি মুটিয়ে যাওয়ার চিকিৎসা করেন৷ কোনো ওষুধ, শারীরীক ব্যায়াম কিংবা ডায়েট ছাড়াই৷ কেবল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পানি পানের সুন্নাত তরিকা অবলম্বন করেই শারীরীক স্থুলতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব৷ পানি পানের সুন্নাত তরিকার মধ্যে সুন্নাত আদায়ের পাশাপাশি সাইন্স এবংগৈ আরোগ্যও রয়েছে৷

হাদিসে এসেছে পানি সবসময় (১) সোজা হাতে ধরে (২) বসে (৩) বিসমিল্লাহ বলে (৪) তিন নিঃশ্বাসে পান করো৷ অন্য হাদিসে পানপাত্রে শ্বাস ছাড়তে নিষেধ করা হয়েছে৷ ভিডিওতে তিনি দেখিয়েছেন তিন শ্বাসে কীভাবে পানি পান করতে হয়৷ লম্বা সময় ধরে শ্বাস আটকে রেখে একটু একটু করে পানি পান করা৷ এরপর গ্লাস থেকে মুখ সরিয়ে শ্বাস ফেলা৷

তিনি পানি পান করে দেখালেন যে, আমি পানি পান করেছি ধৈর্যের সাথে, প্রশান্তির সাথে, ইতমেনানের সাথে, আরামের সাথে, ধীরস্থিরভাবে৷ আজ তো সবাই তার জীবনে এই বিষয়গুলোই চায়৷ কিন্তু পানি পান করার সময় অস্থিরভাবে পান করে৷ মনে রাখবেন, এটা শুধু পানিই নয়, এর অপর নাম জীবন৷

কিয়ামতের অন্যতম আলামত হলো, মানুষ মোটাসোটা হয়ে যাবে৷ ভুঁড়িমোটা লোককে (তার অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে) আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না৷ তাই খানাপিনার শরয়ী তরিকা ছেড়ে দেওয়ার কারণে আল্লাহ তাআলার অপছন্দনীয় লোকদের মধ্যে শামিল হয়ে গেলেন৷

ওজন কমাতে চান, তাহলে খাবার গ্রহণের আধাঘন্টা আগে পানি পান করবেন এবং খাবার গ্রহণের দেড়ঘণ্টা পর পানি পান করবেন৷ কুরআনে কারীমে বলা হয়েছে- খাও এবং পান করো, অপচয় করো না৷ খাওয়া এক জিনিস, পান করা আরেক জিনিস৷ খাবার এক দিকে, পানি আরেক দিকে৷ জগতের কোনো প্রাণিই খাবার গ্রহণের সঙ্গে পানি পান করে না৷ উট, গরু, কুকুর, বিড়াল, জিরাফ ইত্যাদি কোনো প্রাণি খাবার খাওয়ার সময় পানি পান করে না৷ এ জন্যে তারা অসুস্থ হয় না৷

হাদিসে এসেছে তোমার পেটকে তিনভাগ করে নাও৷ এক অংশ খাবারের জন্যে, এক অংশ পানির জন্যে আরেক অংশ নিজের নফসের জন্যে ছেড়ে দাও৷

আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ৩২ টি দাঁত দিয়েছেন৷ চার দানা বিশিষ্ট, তিন দানা বিশিষ্ট, দুই দানা বিশিষ্ট ও এক দানা বিশিষ্ট৷ যে ব্যক্তি এক লুকমা খাবারকে ৩২ বার চিবিয়ে খাবে, তার পেটের পীড়া ও পাকস্থলিজনিত রোগ হবে না৷ তাই দাঁতের কাজ দাঁতকে করতে দিতে হবে৷ পাথরের তৈরি দাঁত আল্লাহ বানিয়েছেন খাবার পিষার জন্যে৷ ফাইবারের তৈরি পাকস্থলির জন্যে তা রাখা যাবে না৷ লুকমান হাকিম তাঁর পুত্রকে নসিহত করেছেন, হে প্রিয় বৎস! দাঁতের কাজ অন্ত্র দিয়ে নিয়ো না৷

তাই আসুন, যদি ওজন কমাতে চান, প্রশান্তির জীবন চান; এক লুকমা খাবারকে ৩২ বার চিবান ৷