আদর্শ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ০৯ ২০১৯, ২২:৩৩

।। এহসান বিন মুজাহির ।।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনে রয়েছে মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। মহানবী (সা.) যখন এ ধরায় শুভাগমন করেন, সেই যুগ ছিল আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ। সে সময়ে গোটা জাতির ওপর অন্যায়-অত্যাচার, অবিচার, অস্থিরতা, নৈরাজ্য, স্থবিরতা জেঁকে বসেছিল। আরব দেশে বিরাজ করছিল অসংখ্য সংকট ও সমস্যা। যুদ্ধ-সঙ্ঘাত, রক্তপাত ছিল তখন নিত্যদিনের ঘটনা। সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়, মিথ্যা, অসত্য, কুসংস্কার, কুপ্রথা, বিভ্রান্তি, নারী জাতির অবমাননা, শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন, ধর্মের নামে অধর্ম প্রভৃতি এমন কোনো দিক ছিল না, যেখানে অবক্ষয় ও সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করেনি। এমনই এক পরিবেশের মধ্যে শান্তি, মুক্তি ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে তিনি আগমন করেছিলেন। তাঁর আগমনের বদৌলতে জাহেলিয়াত, শিরক, পৌত্তলিকতা ও বর্বরতার ঘোর অমানিশায় নিমজ্জিত দুনিয়ায় হেদায়েতের নুর উদ্ভাসিত হয়। জাহেল ও পথভ্রান্ত জাতি হেদায়েতের পরশ পেয়ে জান্নাতের সন্ধান পায়। নবীর আগমনে মানবজাতি দ্বীনের রাস্তর সন্ধান লাভ করে।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনে রয়েছে মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। পুত্র দেখতে পাবে তাঁর মাঝে মাতৃ-পিতৃভক্ত আদর্শ পুত্রের সর্বোত্তম চরিত্র। পিতা দেখতে পাবে তাঁর মধ্যে ক্ষমতাশীল কর্তব্যপরায়ণ আদর্শ পিতার চরিত্র। স্বামী দেখতে পাবে তাঁর মধ্যে স্ত্রী-অনুরাগী আদর্শ স্বামীর চরিত্র। ব্যবসায়ী দেখতে পাবে তাঁর মধ্যে সত্যবাদী আদর্শ ব্যবসায়ীর চরিত্র। যোদ্ধারা দেখতে পাবে তাঁর মধ্যে আদর্শ যোদ্ধার চরিত্র। সেনাপতিরা দেখতে পাবে তাঁর মধ্যে রণকৌশল, স্থির মস্তিষ্ক ও বীর সেনাপতির চরিত্র। জনসেবকরা দেখতে পাবে তার মধ্যে আদর্শ জনসেবকের চরিত্র। বিচারকরা দেখতে পাবে তার মধ্যে ন্যায়-নিরপেক্ষ বিচারকের চরিত্র। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মহামানব বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) এর অনুপম আদর্শ বিদ্যমান। এমন নবীর আগমনের মাস এবং বিশ্বনবীর সিরাত আলোচনা নিঃসন্দেহ গুরুত্বপূর্ণে এবং সওয়াবের কাজ। নবীর জীবনচরিত আলোচনার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ ঈমানি চেতনাকে আরও শানিত, উদ্বেলিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রদত্ত দ্বীন ইসলামের পূর্ণতা বিধান করেছেন। বিশ্বনবী (সা.) তাঁর ২৩ বছরের সাধনায় নির্মাণ করেছিলেন শোষণহীন ও অবিচারমুক্ত একটি খেলাফতি রাষ্ট্র ব্যবস্থা। তার খেলাফতি রাষ্ট্র ব্যবস্থা গোটা মানবজাতির জন্য আদর্শ হয়ে আছে। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনাদর্শ গ্রহণ ব্যতীত ইহকালে ও পরকালে মুক্তি অর্জন সম্ভবপর নয়।
১২ রবিউল আওয়ালে নবীজির জন্ম হয়েছিল, এ নিয়ে ঐতিহাসিকরা একমত নন। জন্ম তারিখ নিয়ে তাদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, ৯ রবিউল আওয়াল, আবার কারও মতে, ১২ রবিউল আওয়াল। পক্ষান্তরে ১২ রবিউল আওয়াল যে নবীর ইন্তেকাল হয়েছিল, এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। তাঁর মিলাদ (জন্ম) ১২ রবিউল আওয়াল সবার কাছে যেমন ছিল আনন্দের, তেমনি ওফাতুন্নবী (নবীর ইন্তেকাল) ১২ রবিউল ছিল বিরহ শোকের। মিলাদুন্নবী অর্থ হলো নবীর জন্ম। সিরাতুন্নবী অর্থ হলো নবীর জীবনী। জন্ম পালন করার বিষয় নয়; বরং আলোচনার বিষয়। সিরাতুন্নবী (৬৩ বছরের জীবনী) উম্মতের জন্য অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। মহান আল্লাহপাক এরশাদ করেনÑ ‘যদি তোমরা রাসুলকে অনুসরণ কর; তবেই তোমরা সত্যপথের সন্ধান পাবে।’ (সূরা নুর : ৫৪)।
মহান আল্লাহ এরশাদ করেনÑ ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আহজাব : ২১)। এ রাসুল (সা.) এর চরিত্র সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা আরও এরশাদ করেনÑ ‘আপনি অবশ্যই উত্তম চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা কলাম : ৪০)। অন্য আয়াতে এরশাদ করেনÑ ‘হে নবী আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস; তবে আমাকে অনুসরণ করো, তাতে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপ মাফ করবেন।’ (সূরা নুর : ৫৪)। যারা নবীর (সা.) বিরোধিতা করবে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘যারা নবী (সা.) এর আদর্শের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের স্পর্শ করবে, যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদের গ্রাস করবে।’ (সূরা নুর : ৬৩)।
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেনÑ ‘যে কেউ আল্লাহর আনুগত্য করে এবং রাসুলের অনুসরণ করে, সে অবশ্যই মহাসাফল্য লাভ করবে।’ (সূরা আহজাব : ৭১)। নবীজি বলেনÑ ‘আমার উম্মতের সব লোকই জান্নাতি হবে, অস্বীকারকারী ব্যতীত। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) অস্বীকারকারী কে? উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, যে আমার অনুসরণ করবে, সে বেহেশতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার নাফরমানি করবে, সে অস্বীকারকারী।’ (বোখারি : ৩১৮৭২)। রাসুলুল্লাহ (সা.) কে অনুসরণের অর্থ হলো, তাঁর আদর্শ গ্রহণ করা, ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় জীবন থেকে নিয়ে সর্বক্ষেত্রে রাসুলের আদর্শ মেনে চলা। রাসুল (সা.) এর অনুসরণ ব্যতীত ইহ-পরকালে নাজাত পাওয়া নিতান্তই দুরূহ ব্যাপার। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর অনুসরণের মাঝেই সবধরনের সাফল্য নিহিত রয়েছে।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও শিক্ষক