আজ জুনায়েদ জামশেদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ০৭ ২০১৮, ০৯:২৫

পাকিস্তানের জনপ্রিয় পপ তারকা থেকে দ্বীনের দাঈ হওয়া জুনায়েদ জামশেদের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ ৭ নভেম্বর (শুক্রবার )।

২০১৬ সালের আজকের এ দিনে একটি দ্বীনী দাওয়াতের কাজ শেষে চিত্রল থেকে ইসলামাবাদ ফেরার পথে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) যাত্রীবাহী ফ্লাইট পিকে-৬৬১’র মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় স্ত্রীসহ জুনায়েদ জমশেদ শহীদ হন।

পাকিস্তানের কে. কে স্টেডিয়ামে লাখো মানুষের সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর জানাযা। যেখানে পাকিস্তানের সামরিক-বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি শীর্ষস্থানীয় আলেম ও দাঈগণ উপস্থিত ছিলেন। মাওলানা তারিক জামিলের ইমামতিতে নামাজে জানাযা শেষে তাঁর অসীয়ত অনুসারে তাঁকে দাফন করা হয় পাকিস্তানের বিখ্যাত দ্বীনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলূম করাচির কবরস্থানে।

Image result for জুনায়েদ জামশেদ

কে এই জুনায়েদ জামশেদ?

জুনায়েদ জামশেদ ছিলেন পাকিস্তানী পপ ও রক শিল্পী, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, ফ্যাশন ডিজাইনার, অনিয়মিত অভিনেতা, গায়ক-গীতিকার এবং সর্বশেষে তিনি একজন মুবাল্লিগ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিলো ৫১ বছর। পরিবারে তাঁর এক স্ত্রী, তিন পুত্র এবং এক কন্যা ছিল।

তাঁর জন্ম সেপ্টেম্বর ৩, ১৯৬৫তে। লাহোর প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন জুনায়েদ। পাকিস্তানি পপ সঙ্গীত শিল্পে জুনায়েদ ১৭ বছর কাটিয়েছেন। এছাড়া তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতেও অল্প কিছুদিন বেসামরিক ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন।

Image result for জুনায়েদ জামশেদ

সংগীত জগতে জুনায়েদ জামশেদের পদচারণা সর্বব্যাপী-
১৯৮৩ সাল। রোহাইল হায়াতের ব্যান্ড ‘ভাইটাল সাইন’-এ যোগ দেন তিনি। কয়েকটি গান গেয়ে সর্বস্তরে ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন জুনায়েদ। তন্মধ্যে ‘দিল দিল পাকিস্তান’, ‘সওলি সালোনি’, ‘ইয়ে শাম’, ‘না তু আয়েগি’ অন্যতম।

আধুনিক পপ কর্মকাণ্ডের মধ্যে তিনি হয়ে উঠেন অন্যতম। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে চারটি সেরা অ্যালবাম রিলিজ করেন এবং বিশ্বের শীর্ষ দশের কনসার্টের রেকর্ড অর্জনে সক্ষম হন। এছাড়াও এই ব্যান্ড পেপসি কোং পাকিস্তানের সাথে বৃহৎ লাভজনক চুক্তি করে।

Related image

তাঁর মিউজিক-ইন্ডাষ্ট্রি Vitalsings -এর গান আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। তার অ্যালবাম পাকিস্তানের সঙ্গীত চ্যানেলচার্টে শীর্ষস্থানে। ২০০২-এর পর তার মধ্যে পরিবর্তন আসে এবং মিউজিক-এর প্রতিষ্ঠিত জগৎ ছেড়ে তিনি চলে আসেন ইসলামী ভুবনে। পরবর্তীতে জুনায়েদ জামশেদ প্রখ্যাত দায়ী মাওলানা তারিক জামিলের মাধ্যমে হেদায়েতের পথে আসেন। আর তখনই তিনি আর পপ সঙ্গীত গাইবেন না বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।

একবার দারুল উলুম করাচির এক অনুষ্ঠানে আল্লামা ত্বাকি উসমানি নিজের লিখিত একটি হামদ জুনায়েদ জমশেদকে প্রদান করে তা পরিবেশন করার জন্য বলেন। তখন থেকেই তিনি আল্লাহর শানে হামদ এবং রাসুলের শানে নাত গাইতে শুরু করেন। তারপর জীবনের শেষ ক্ষণ পর্যন্ত তিনি দ্বীনের দায়ী হিসেবে বিভিন্ন স্তরে কাজ করে গেছেন।

২০০৪ সালে জুনায়েদ জামশেদ একটি লাইভ কনসার্টে সঙ্গীত শিল্প ছেড়ে ধর্মীয় কার্যক্রমের জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ইসলামের রঙে রঙিন হয়ে ২০০৫ সাল থেকে ইসলামি সংগীতে তাঁর অবস্থান পোক্ত করেন। ধারাবাহিকভাবে ২০০৫এ ‘জালওয়া-এ-জানান’ ২০০৬ এ ‘মেহবুব-এ-ইয়াজদান’, ২০০৮-এ ‘বদর-উদ-দুজা’ ও ২০০৯ ‘বাদি-উজ-জামান’ নামে ইসলামি সংগীতের অ্যালবাম প্রকাশ করেন।

Related image

পাকিস্তানের জিও টিভি থেকে জুনায়েদ জামশেদের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিল। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ঝলমলে জীবন ত্যাগ করে বর্তমান লম্বা কোর্তা ও উঁচু পায়জামার দরবেশী (ইসলামী) জীবনে আপনি কেমন বোধ করছেন? উত্তরে তাঁর জবাব ছিল, ‘আমি আমার লাইফস্টাইল সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করেছি। আমি এতে যে প্রশান্তি পেয়েছি তা অতীত জীবনে কখনো অনুভবই করিনি।’

রাসূলের তিনটি হাদিস-

“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মারা গিয়েছে, সে শহীদ।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫৪৬)
“দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণকারী শহীদ।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১১১)
“যে ব্যক্তি তার সওয়ারী-বাহন থেকে (দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে) অধঃপতিত হয়েছে, সে শহীদ।” (মু‘জামে কাবীর–তাবরানী, হাদীস নং ১১৬৮৬)
এসব হাদিস অনুযায়ী তিনি শহীদী মর্তবায় মৃত্যুবরণ করেছেন।

জুনায়েদ জামশেদ মহান প্রভুর কাছে চলে গেছেন। রেখে গেছেন বহু ত্যাগ ও কুরবানী, আদর্শ ও কামিয়াবীর ফিরিস্তি। আল্লাহ তাঁর জান্নাতের মর্তবাকে আরো বৃদ্ধি করে দিন।

একুশে জার্নাল/টি এ