অবহেলিত দুই আলেম মুক্তিযোদ্ধা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ৩১ ২০১৮, ০০:৩৪

হাবীব আনওয়ার: ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন অসংখ্য আলেম-ওলামা।রক্ত দিয়েছেন দেশের জন্য।মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন যুদ্ধের জন্য।লড়াই করেছেন মাটি ও মানুষের জন্য।কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের কথা হলো আলেমদের সেই অবদানকে বারবার উপেক্ষা করা হয়েছে ও হচ্ছে।রাজাকার বলতে আলেম আর আলেম মানেই রাজাকার(!) এমন একটি তকমা সেঁটে দেওয়া হচ্ছে!! আলেমরাই কি শুধু রাজাকার ছিল? দৈনিক আমার দেশের সাবেক সহকারী সম্পাদক সঞ্জীব চৌধুরীর ভাষায় “একটা মিথ্যা আমাদের সমাজে প্রায় সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের আলেম সমাজের কোনো সক্রিয় ভূমিকা ছিল না।তারা হয় রাজাকার হয়েছে নতুবা গোপনে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে! অথচ ইতিহাস সাক্ষী, একাত্তরের রাজাকারদের মধ্যে টুপি-দাড়িওয়ালা লোকের চেয়ে, দাড়ি কামানো ‘ আধুনিক’ লোকের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল।”

কিন্তু ইসলাম বিদ্বেষী একটি মহল এমন সত্যটি মানতে নারাজ।তাদের বক্তব্যে বারবার আলেমদের রাজাকার বলে তুচ্ছ- তাচ্ছিল্য করে গালিগালাজ করা হয়!!
কিন্তু সত্য সে তো সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল।
তাকে কেউ চেপে রাখতে পারে না।যেমন চামচিকা পারে না সূর্যের আলোকে চেপে রাখতে।
ইতিহাস সাক্ষী শতশত আলেম একত্তরে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তাঁদের মধ্য মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফ রহ. ও আল্লামা মোস্তফা আজাদ রহ. ছিলেন অন্যতম।

মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফ।

১৯৭১ সালে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের মুয়াজ্জিন ছিলেন, অত্যন্ত কাছ থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধকে অবলোকন করেছেন,শিকার হয়েছেন পাকসেনাদের অত্যাচার-নির্যাতনের।প্রতিবাদ করেছেন বর্বরতার।গ্রেফতার হয়েছেন, হয়েছেন নির্যাতিত , তবুও দেশের জন্য লড়াই করেছেন।১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর জুলুম নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকাও।ক্ষুদ্র, অসহায় ব্যবসায়ীদের উপর পাক বাহিনী যখন জুলুম-নির্যাতন করছিল, তখন মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফ বীরবিক্রমে তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন এবং সরাসরি পাক বাহিনীকে প্রতিরোধ করেন।এক পর্যায়ে পাকবাহিনী মাওলানার উপর ক্ষীপ্ত হয়ে তাকে বেধরক প্রহার করে রক্তাক্ত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে। তাকে যাত্রাবাড়ি আর্মি ক্যাম্পে নির্মম নির্যাতন করেন।তবুও তিনি পিছ পা হননি।দমে যাননি। লড়ে গেছেন দেশের জন্য।মাটি ও মানুষের জন্য।

আল্লামা মোস্তফা আজাদ।

এই আলেম মুক্তিযোদ্ধা সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।তার বাবা ছিলেন ইস্ট পাকিস্তানের রাইফেলসের অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার মেজর।স্থানীয় যুবক, ছাত্রদের নিয়ে পাকিস্তানিদের প্রতিহত করতে গ্রামের মাঠে ট্রেনিং দিয়েছেন।
আল্লামা মোস্তফা আজাদ ১৯৭১সালে লালবাগ জামিয়ার ছাত্র ছিলেন।৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে তাঁর সাথে লালবাগ মাদরাসার কিছু ছাত্র যুদ্ধে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধে তার এলাকা ছিল মেজর অব. জলিলের নেতৃত্বাধীন ৯ নং সেক্টর (বৃহত্তর খুলনা ও বরিশাল অঞ্চল)।

মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলা

আল্লামা মোস্তফা আজাদ রাগে-ক্ষোভে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলেছেন! তিনি বলেছিলেন, ‘৭১ এ নয় মাস পাক সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি বহুবার।এটা আমার গর্ব।আমার অহংকার।মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ওসমানীর সার্টিফিকেট ছিল আমার কাছে।সেই প্রমাণপ্রত্র আমি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করেছি! কখন করেছি? যখন দেশের হালচাল পাল্টে গেছে।অযোগ্যরা ক্ষমতার মসনদে বসতে শুরু করেছে।রাজাকাররা রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের পদক নিতে উঠে পড়ে লেগেছে!!
এভাবেই তারা দেশকে ভালোবেসেছেন।তাঁদের আত্মত্যাগ কখনও ভুলবার নয়।কিন্তু আমরা তাঁদের সহজেই ভুলে গেছি।ভুলে গেছি তাঁদের অবদান।মুছে দিয়েছি তাদের রক্তের দাগ!!
অথচ,তাদের এবং তাদের উত্তরসূরীদের গায়ে সেঁটে দেওয়া হচ্ছে রাজাকার আর দেশ বিরুধীর তকমা।জায়গায় বজায়গায় করা হচ্ছে হেনেস্থা।বঞ্চিত করা হচ্ছে সকল অধিকার থেকে।ব্যঙ্গ করা হচ্ছে বিভিন্ন নাটক-সিনেমা আর অভিনয়ের মাধ্যমে! আর প্রকৃত ইতিহাসকে রাখা হচ্ছে ধামাচাপা দিয়ে! নতুন প্রজন্মকে শিখানো হচ্ছে আলেম উলামা বিদ্ধেষী শ্লোগান। শোনানো হচ্ছে কল্পকাহিনী। দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইসলাম ও ইসলামের ধারক-বাহক আলেম সমাজ থেকে।

-হাবীব আনওয়ার
সাংবাদিক