অনন্য বৈশিষ্ট্যের কালজয়ী মনীষী আল্লামা খলিলুর রহমান হামিদী রহ.

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ফেব্রুয়ারি ২৫ ২০২২, ১৯:১২

মাওলানা আহমদ কবীর খলীল: পৃথিবীতে কতো মানুষ আসে যায়! কে কাকে নিয়ে কতটা আর ভাবে! আর কে কাকে কতটুকু স্মরণ রাখে! কিন্তু কিছু মানুষ এমন আছেন, যাদেরকে নিয়ে ভাবতেই হয়। যাদেরকে ভুলে থাকা যায়না। তারা কীর্তিগুণে মরেও অমর হয়ে থাকেন। যাদের মৃত্যুর কারণে আসমান যমীনও আর্তনাদ করে। কেঁদে ওঠে আকাশ বাতাসও। কারণ, তাদের শুন্যতা মানে মহাপ্রলয় ঘনিয়ে আসা। তখন তো আর আসমান যমীনও ঠিকে থাকবে না। তরুলতা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ এমনকি সব কিছুই তাদের মৃত্যুতে ধ্বংসের ভয়ে প্রকম্পিত থাকে। তাই তারা ক্রন্দন করে। এইসব মহা মনীষী দুনিয়া থেকে চলে গেলে দুনিয়া ও দুনিয়াবাসীর যে ক্ষতি সাধিত হয় তা কখনও পুষিয়ে উঠা সম্ভব হয় না। তাদের শুন্যস্হান পুরণের চেষ্টা করেও লাভ হয় না। তাঁরা শুধু মানুষের জন্যই যে নেয়ামত হন এমন নয়, বরং সমস্ত জগতের জন্যেই আল্লাহ প্রদত্ত মহা নেয়ামত হয়ে থাকেন। তাদের মাধ্যমে শুধু যে মানব জনগোষ্ঠীর মাঝে শান্তি বিরাজ করে এমন নয়, বরং পশুপাখিও তাদের দ্বারা প্রশান্তির ভাগী হয়।

এমনই একজন মহা মনীষী হলেন আমাদের মৌলভীবাজারের মাটি ও মানুষের ভালোবাসা, কুতবে দাওরান আল্লামা লুৎফুর রহমান শায়খে বরুণী রহমাতুল্লাহি আলাইহির বড়ো ছাহেবযাদা, ফেদায়ে ইসলাম, শায়খুল হাদীস আল্লামা খলিলুর রহমান হামিদী, পীরসাহেব বরুণা, রাহিমাহুল্লাহ। তাঁর মৃত্যুতে আমাদের মাঝে যে শুন্যতা তৈরি হয়েছে, তা কখনও পূর্ণ হবার নয়।

তাঁকে যথাযথ মূল্যায়ন করে কিছু লেখার মতো যোগ্যতা এবং বর্ণনা করার মতো ভাষা আমার নেই, তারপরও তাঁর জীবনের কিছু বৈশিষ্ট্য আমি আমার মতো করে তুলে ধরার চেষ্টা করছি মাত্র।

সেই শৈশব থেকে তাঁর গুণকীর্তন শুনে শুনে আসছিলাম এবং তাঁকে দেখা ও তাঁর সুহবত লাভের আকাংখা লালন করে আসছিলাম, কিন্তু দাওরায়ে হাদিসের বছর পর্যন্ত তা সম্ভব হয়ে উঠেনি।

অতপর দু’হাজার বারো সালে সর্বপ্রথম সরাসরি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ নসীব হয়। তখন আমি মৌলভীবাজার দারুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক।

একদিন আমার ভগ্নিপতি হযরত মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম শ্রীমঙ্গলী সাহেবের সাথী হয়ে উপমহাদেশের সর্বজন স্মীকৃত হাদীস বিশারদ আল্লামা খলিলুর রহমান হামিদীরহ. ‘র কাছ থেকে হাদীসের ইজাজত লাভের আশায় তাঁর দরবারে হাজির হই। কারণ, তাঁর হাদীসের সনদ বর্তমান বাংলাদেশের শীর্ষ মুহাদ্দিসীনে কেরামের অনেকের তুলনায় সনদে আলীর মর্যাদায় উত্তীর্ণ। আর সনদে আলীর মর্যাদা মুহাদ্দিসে কেরামের কাছে সর্বজন স্বীকৃত। আলহামদুলিল্লাহ, তখন তিনি আমার ভগ্নিপতি এবং আমার কাছ থেকে বুখারী শরীফের প্রথম হাদিস শ্রবণ করে এর উপর সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা করতঃ আমাদের উভয়কে “সেমাআতান এবং ক্বেরাআতান” তাঁর নিসবতে হাদিস বর্ণনার ইজাজত প্রদান করেন।

তখন কিছু সময় হযরতের ছুহবত লাভ করে অনুভব করেছিলাম আল্লাহর ওলীদের ছুহবতে সত্যিই অন্তরাত্মায় মা’রিফাতের নূর পয়দা হয়।

তখন তাঁর চেহারার দিকে তাকিয়ে দ্বীনের যে জযবা পয়দা হয়েছিল এবং আল্লাহর মুহাব্বাতের যে জাগরণ তৈরি হয়েছিল, তা ভাষা দিয়ে ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। হাদিসে আছে ; আল্লাহর ওলীদের ছুহবতে গেলে মরা অন্তরে প্রাণ সঞ্চার হয়। সত্যিই তাঁর কাছে গেলে মরা দিল যিন্দা হয়ে উঠত। এটা তাঁর ওলী হওয়ার সুস্পষ্ট একটা নিদর্শন বলা যায়।

দু’হাজার পনেরোতে তাঁর সাথে আরও চমৎকার ভাবে সাক্ষাৎ নসীব হয়। তখন তাঁর বড়ো ছাহেবযাদা, তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরী, বরুণা মাদ্রাসার সাবেক প্রেন্সিপ্যাল এবং বর্তমান ছদরে মুহতামিম, মাওলানা শেখ নূরে আলম হামিদী হাফিজাহুল্লাহুর আমন্ত্রণে আমি এবং মুহতারাম মাওলানা শায়খ কবি মুসা আল হাফিজ সাহেব গিয়ে ছিলাম বরুণা মাদ্রাসায়। বাদ এশা মসজিদে আবুবকরে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে আমরা কিছু কথা বলতে হয়েছিল, অতপর শায়খ নূরে আলম হামিদী সাহেবের অনুরোধে তাঁদের বাসভবন ‘আলম মঞ্জিল’-এ রাতের খাবার গ্রহণ করতে যাই। আমরা যখন খাবার শুরু করব তখন আমাদের খোঁজখবর নিতে হযরত ফেদায়ে ইসলাম রহ. আমাদের কাছে চলে আসেন। তিনি তাঁর স্বভাবতই মেহমানের মেহমানদারি কেমন হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। নিজে কাছে থেকে ছেলেকে নির্দেশনা দিতে থাকলেন; মেহমানদেরকে যেনো খেয়াল করে খাওয়ানো হয়। সেই দিন আমার মতো একটা সাধারণ মেহমানের প্রতি তাঁর আন্তরিকতা ও মেহমান নেওয়াজী দেখে অবাক হয়ে ভাবছিলাম যে, আল্লাহর ওলীদের মেহমান নেওয়াজী আর বিনয় সত্যিই অতুলনীয়। তাদেরকে আল্লাহ তা’লা এতো উঁচু মাকামে পৌঁছে দেওয়ার পরও তাদের বিনয়ে সামান্যতম ঘাটতি পরিলক্ষিত হয় না। সেই দিন তিনি আমাদেরকে যথেষ্ট সময় দিয়ে ছিলেন এবং আমরা তাঁর সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বলার এবং তাঁর ছুহবত লাভের সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার জীবনের ডায়রিতে এই সময়টা অনন্য হয়ে থাকবে ইনশাআল্লাহ।

ফেদায়ে ইসলাম আল্লামা শায়খ খলিলুর রহমান হামিদী রহ. ছিলেন আমাদের মৌলভীবাজারের নারী পুরুষ সকলের কাছে প্রবাদতুল্য আদর্শ ব্যক্তিত্ব। শৈশবে আমার আম্মাজানের কাছেই তাঁর অনেক গুণকীর্তন শুনেছি। আর আব্বাজান শায়খুল হাদীস মাওলানা আবদুল মালিক রুপসপুরী তো আপাদমস্তক তাঁর গুণের বক্ত। যেহেতু আব্বাজান এককালে বরুণা মাদ্রাসার মুহাদ্দিস হিসেবে ছিলেন ; তাই তিনি ফেদায়ে ইসলাম রহ.’র তত্ত্বাবধানে শিক্ষকতা করেছেন। শিক্ষকদের সাথে একজন মুহতামিম সাহেবের ব্যবহার যে কতটা চমৎকার হতে পারে! বা আচরণ যে কতটা সুন্দর হলে একজন শিক্ষক সেই মুহতামিম সাহেবের বক্ত হয়ে যেতে পারেন! তা আব্বাজানের কথা থেকে খুব সহজেই অনুমেয় হয়ে যায়। তিনি বলেন; বরুণা মাদ্রাসার মুহতামিম সাহেব (ফেদায়ে ইসলাম রহ.) মাদ্রাসার কোনো শিক্ষকের সাথে কোনো দিন এমন কোনো কথা কিংবা আচরণ করেননি যে কারণে কোনো শিক্ষকের মনে সামান্যও কষ্ট পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। শুধু এখানে শেষ নয়, বরং আজ পর্যন্ত বরুণা মাদ্রাসার নবীন প্রবীন এমন কোনো শিক্ষক নেই, যে তাদের পরিচালক থাকা সত্বেও শায়খ রহ.’র কাছ থেকে কখনও কোনো কটু কথা কিংবা সামান্যটুকু মন্দ আচরণ পেয়েছেন ; অথচ দ্বায়িত্বশীল হলে স্বাভাবিক ভাবেই কখনো কখনো কটু কথা শুনাতে হয়। আসলে শায়খ রহ. ছিলেন নববী আদর্শের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।

আমার ছাত্রত্বের সময়ে বহু উস্তাদের যবানে ফেদায়ে ইসলাম আল্লামা খলিলুর রহমান হামিদী রহ.’র ভূয়সী প্রশংসা শুনেছি। কোনো দিন কাউকে তাঁর নিন্দা কিংবা কোনো দোষ বলতে শুনিনি। পরবর্তীতে আমার মুর্শিদ মুহিউসসুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান শায়খে যাত্রাবাড়ী দামাত বারাকাতুহুমের সাথে যখন আমার সম্পর্ক হল, তখন তাঁর যবানেও ফেদায়ে ইসলাম রহ.’র ইলম ও আমলের গুণকীর্তন শুনে ভাবতে লাগলাম, একজন আলেম কতটা মাক্ববুল হলে, কতটা গুণী হলে, কতটা উঁচু মাকামের হলে এবং আল্লাহর কতটা প্রিয় হলে সর্বমহলের আলেম উলামা এবং আল্লাহর নেক বান্দারা তাঁর প্রশংসায় এভাবে পঞ্চমুখ হতে পারেন! আল্লাহু আকবর!

যাক, গত কয়েক বছর ধরে বরুণার ফ্যামিলির সাথে আল্লাহর ফজলে আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরী হওয়ায় এবং বিভিন্ন ভাবে বরুণা মাদ্রাসায় আসা যাওয়া থাকায় ফেদায়ে ইসলাম রহ. সম্পর্কে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে আমার জানার পরিধি আরো সমৃদ্ধ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। তাঁকে পাঠ করার এবং তাঁর আলো থেকে আলো গ্রহণ করার অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছিল। সুতরাং এই সময়ে তাঁর যেই গুণগুলো আমার নগন্য দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করতে পেরেছি এবং তাঁর জীবনের যে অনন্য বৈশিষ্ট্য গুলো আমার হৃদয়ের খাতায় নোট করতে পেরেছি ; তা এখন পাঠকের সামনে সরল ভাষায় তুলে ধরছি; যাতে করে সেই গুণগুলো অর্জণ করতে আমরা সবাই স্বচেষ্ট হতে পারি।

হযরত ফেদায়ে ইসলাম রহ.’র অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল; তিনি এতো বড়ো আলেম হওয়া সত্বেও তাঁর মধ্যে কোনো আত্মগরিমা ছিলো না।

তিনি আজীবন জ্ঞান সাধনায় নিমগ্ন ছিলেন। এতো উঁচু মাপের আলেম হওয়া সত্বেও ইলম অর্জন অব্যাহত রাখা; যা তাকে যুগের ‘বাক্বিয়্যাতুস সলফ’-এর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছিল। কারণ, এটা পূর্বসূরী আকাবির আসলাফের অভ্যাস ছিল।

আজীবন হাদীসের খেদমতে অতিবাহিত করেছেন। যা কেবল আল্লাহর মাকবুল বান্দা এবং নবীজির সত্যিকার ওয়ারিশ এবং প্রেমিকদের পক্ষেই সম্ভব হয়।

খেদমতে খালক্বের সাথে নিঃস্বার্থ ভাবে জড়িত ছিলেন; এমনকি তাঁর সন্তানদেরকেও সেই কাজে নিঃস্বার্থ ভাবে লাগিয়ে রেখে ছিলেন। তাঁর সন্তানরাও পিতার যথাযথ উত্তরসূরী হিসেবে দেশ বিদেশে সুনাম কুড়াচ্ছেন, মাশাআল্লাহ।

আমরণ মাদ্রাসা ও মসজিদের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে গেছেন।পাশাপাশি জনসাধারণের ইসলাহের ফিকির এবং দাওয়াতি কাজও অব্যাহত রেখেছেন। আর তাতে এতটা আন্তরিক ছিলেন যে, মনে হয়েছে যেন তাঁর কাজ বলতে এগুলোই। অন্তিম সময়েই এই কাজগুলোর ব্যাপারে তিনি খবরাখবর নিতে ভুলেন নি।

এতসব দায় দ্বায়িত্ব থাকার পরেও ইবাদত বন্দেগিতে কোনো কমতি করতেন না। জিকির আজকার ও নফল নামাজ ইত্যাদি তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। তাহাজ্জুদ নামাজের প্রতি তাঁর এহতেমাম ছিল অবর্ণনীয়।

সুন্নতের প্রতি খুবই যত্নবান থাকতেন। তিনি যখন হাসপাতালের আই সি ইউতে, তখনও তিনি মেসওয়াক সহ অন্যান্ন সুন্নত গুরুত্ব সহকারে আদায় করেছেন। যা অনেক ডাক্তারকেও হতভম্ব করে দিয়েছে।

বিনয় ও নম্রতায় তিনি ছিলেন প্রবাদতুল্য। তাঁর সন্তান, ছাত্র এমনকি ছাত্রের ছাত্রদের সাথে তিনি যেভাবে বিনয় প্রদর্শন করতেন ; তা ভাষা দিয়ে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়।

তিনি ছিলেন এতটা নিরহংকার যে, তাঁর চলনে-বলনে বুঝা যেতো- অহংকার কি জিনিস! তিনি হয়তো চিনেন ই না!

তাঁর তাওয়াযু ও ইনকেসারী (নিজেকে ছোট মনে করা) ছিল বর্ণনাতীত।

আর হয়তো একারণেই আল্লাহ পাক তাঁকে এতো উঁচু মাকামে পৌঁছিয়ে ছিলেন। কারণ, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম বলেছেন ; যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নিজেকে ছোট করে দেখবে আল্লাহ পাক তাকে উঁচু মর্যাদায় উত্তীর্ণ করে দিবেন।

ছোট বড়ো সবার সাথে তাঁর ব্যবহার ছিল অত্যন্ত মার্জিত। তিনি কাউকে কথা কিংবা কাজে কখনো কষ্ট দিতেন না। বরং সবার মন রক্ষা করার চেষ্টা করতেন। কেউ তাঁর আচরণের দ্বারা কোনো রকম কষ্ট পেয়েছেন জানলে তিনি সাথে সাথে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে দ্বিধা করতেন না, চাই সে ব্যক্তি যত ছোট হোকনা কেন!

এটা মুলত তাঁর মাঝে যে নববী আখলাকের প্রতিফলন ঘটেছিল এবং উত্তম চরিত্রের লালন হয়েছিল; তার বহিঃপ্রকাশ।

কারণ, নবিজি সল্লাল্লাহু আললাইহি ও সাল্লামের ঘোষণা হলো ; ক্বেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে উত্তম আমল এবং মিজানে সবচেয়ে ভারী সম্পদ হবে বান্দার উত্তম চরিত্র।

আল্লাহ পাক সেই মহা দৌলত হযরত ফেদায়ে ইসলাম রহ.’র স্বভাবে পরিণত করে দিয়েছিলেন।

তাঁর আখলাক্বে হাসানা বা উত্তম চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাঁর কথা এবং কাজে। তিনি অনর্থক কথা বলতেন না। হাসিতামাশায় জড়াতেন না। কাউকে নিয়ে উপহাস করতেন না।

তাছাড়া খুব কম কথা বলতেন। কম হাসতেন। কম আহার করতেন এবং কম ঘুমাতেন। এবাদত বন্দেগি ও তাসবীহ তাহলীল বেশি করতেন। তাছাড়া তা’লিম তাআল্লুম এবং ওয়াজ নসীহতে সময় অতিবাহিত করতেন।

হাদিস শরীফে এগুলোর প্রতি মুমিন বান্দাকে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং এগুলোকে উত্তম চরিত্রের কাজ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, এমনকি এগুলোকে প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের নববী চরিত্রের অন্যতম অংশ ও বৈশিষ্ট্য বলেও বিবৃত হয়েছে।

হযরত ফেদায়ে ইসলাম রহ. ছিলেন মাহবুবে উলামা ও ছুলাহা, শায়খুল মাশায়িখ, মুহিউসসুন্নাহ, শায়খুল হাদীস এবং শায়খুত তাফসীর, মুর্শিদে কামিল হওয়ার পাশাপাশি আরও বহুগুণের আধার। তিনি যেমন ছিলেন তাক্বওয়া ও খুলুসিয়্যতের অধিকারী একজন আধ্যাত্মিক পীর বা মুর্শিদ। ছিলেন কুরআন হাদিসে গভীর পান্ডিত্বের অধিকারী যুগশ্রেষ্ট আলেম এবং হাজারো আলেমের আদর্শ উস্তাদ। ছিলেন দেশ ও জাতির দরদী মুরব্বি এবং রাহবর। ছিলেন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সফল পরিচালক। ছিলেন প্রচার বিমুখ সমাজ সেবক ও অবিভাবক। তেমনিভাবে তিনি ছিলেন একজন আদর্শ পিতা ও আদর্শ পরিবার গঠনের সফল ব্যক্তিত্ব। শুধু মৌলভীবাজারে কেন গোটা বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের মতো আরও কয়েকটা পরিবার দেখানো সহজ হবে না। তাঁর সন্তান মাওলানা শেখ নূরে আলম হামিদী, মাওলানা শেখ বদরুল আলম হামিদী এবং মাওলানা শেখ হাদি আলম হামিদীদের সংশ্রবে গেলেই বুঝা যায় যে, কেমন আদর্শ পিতা হলেই এমন আদর্শ সন্তান রেখে যাওয়া সম্ভব।

আল্লাহপাক তাদের সবাইকে নিজেদের ঐতিহ্যের ধারক বাহক হয়ে দ্বীন ও মিল্লতের খেদমতের জন্য ইস্তেক্বামত দান করুন।

প্রিয় পাঠক! হযরত ফেদায়ে ইসলাম রহ. ইলমী মাকাম ও বেলায়াতের বর্ণনা পেশ করার যোগ্যতা আমার না থাকায় সে বিষয়ে কথা বলতে যাইনি। সে বিষয় গুলো বড়ো বড়ো উলামা মাশায়েখ ও গবেষক লেখকদের কাছ থেকে আপনারা জানবেন ইনশাআল্লাহ। আমি শুধু আমার মতো করে সরল ভাষায় তাঁর কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আল্লাহপাক আমাদেরকে এগুলো আহরণ করে নিজেদের জীবনকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করার তাওফিক দান করুন। আর হযরত ফেদায়ে ইসলাম রহ.কে গোটা জাতির পক্ষ থেকে জাযায়ে খায়ের দান করতঃ জান্নাতুল ফেরদৌসের উঁচু মাকামে স্থান দান করুন। আমীন।

 

লেখক; মাওলানা আহমদ কবীর খলীল, শিক্ষক, জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা সিলেট।