মুনিয়া হত্যা: জনসমক্ষে আসলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে আসামি আনভীর

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ০১ ২০২১, ০০:১৪

কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার (২১) রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় লোকচক্ষুর আড়ালে থাকার ৩৩ দিনের মাথায় হঠাৎ জনসমক্ষে আসেন মামলার প্রধান আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর। জামিন না নিয়ে গুরুতর একটি মামলার আসামি এমন প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার ঘটনায় নানা মহলে তীব্র সমালোচনা ও বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় নিন্দা জানিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, মুনিয়া ‘হত্যার’ ঘটনায় অভিযুক্ত আনভীরকে কেন পুলিশ গ্রেফতার করছে না। তিনি জামিন না নিয়ে কীভাবে প্রকাশ্যে ঘুরছেন, টাকা ও ক্ষমতার কাছে কি আইন অসহায়, সামনে পেয়েও গণমাধ্যম কেন মুনিয়ার মৃত্যুর বিষয় তাকে প্রশ্ন করল না।

ব্যঙ্গ করে একজন জনপ্রিয় সাংবাদিক তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘আনভীর কি পলাতক, টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেখলাম, কেউ কি আপডেট দিতে পারেন? ফরেনসিক প্রতিবেদন হলো কি?’

গত শনিবার কুড়িল বিশ্বরোড সংলগ্ন বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনকালে আচমকা বসুন্ধরা এমডি আনভীরের দেখা মেলার পর থেকেই সচেতন নাগরিক সমাজ এভাবেই নিন্দা ও সমালোচনা করছেন। চাঞ্চল্যকর এ মামলার এত দিন পরেও মূল আসামি গ্রেফতার না হওয়া ও প্রকাশ্য বের হওয়ার সাহস দেখানোর ঘটনায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুনিয়ার বড় বোন ও মামলার বাদী নুসরাত জাহান তানিয়া।

তিনি বলেন, আসামি প্রভাবশালী হওয়ার পরও পুলিশ মামলা গ্রহণ করায় তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই। এখনো নিরপেক্ষ তদন্ত ও অভিযুক্ত আনভীরকে গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখি করবে বলে আমি আশাবাদী।

অন্যদিকে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নেয়ার প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে আনভীরের কঠোর বিচার দাবি করায় প্রতিনিয়ত নানামুখী ও জঘন্য মিথ্যাচার করা হচ্ছে বলে জানান নুসরাত।

তিনি জানান, যেকোনো অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নিতে ও চুপ থাকার প্রস্তাব দিয়ে প্রতিনিয়ত বাসায় লোক পাঠাচ্ছে আমার বোন মুনিয়ার ঘাতক আনভীর। শর্ত দিচ্ছে সাংবাদিক ও সিসি ক্যামেরাবিহীন জায়গায় গোপন বৈঠকে বসার।

নুসরাত আরো বলেন, ওইসব প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অপপ্রচার ও কুৎসা রটানো হচ্ছে। মুনিয়ার হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত ও আমাদের মানসিকভাবে দুর্বল করতে অভিযুক্ত বসুন্ধরা গ্রুপ ওই সব নানামুখী জঘন্য প্রচারণা করাচ্ছে বলে সহজেই সবাই অনুমান করতে পারে।

গুলশানে ‘নিহত’ মুনিয়ার ঘাতক বসুন্ধরা এমডি আনভীরকে জনসমক্ষে আসার ছবি শনিবার বিকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। অনেকে মন্তব্য করছেন, আমাদের পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক ভালো কাজ করছে। বহু গুরুত্ব মামলার আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছে। সেক্ষেত্রে আনভীরের মতো একজন আসামি যদি জামিন না নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় তাহলে পুলিশই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

সাধারণ জনগণের কাছে নেতিবাচক বার্তা যেতে পারে যে, বিত্তশালী ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে অপরাধ আরো বাড়তে পারে। সুতরাং আনভীরকে দ্রুত গ্রেফতার করে মুনিয়ার মৃত্যু রহস্য উন্মোচনের দাবি জানান সচেতন মহল।

মুনিয়ার বোন নুসরাত জানান, তাদের বাসা কুমিল্লা শহরে। তার বাবা শফিকুর রহমান ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মা ছিলেন সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার। মা-বাবা দুজনেই কয়েক বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মুনিয়া ছিল ছোট।

তিনি আরো জানান, বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ভাই সবুজের সঙ্গে তাদের বিরোধ দেখা দেয়। এরপর থেকে মুনিয়াকে তিনি নিজের সন্তানের মতো করে মানুষ করার চেষ্টা করেছেন। বাবা-মার রেখে যাওয়া আমানত (মুনিয়া) রক্ষা করতে পারেনি বলে আক্ষেপ করেন নুসরাত। তবে অন্তত বিচারটা পেলে মনকে বুঝ দিতে পারবেন।

এদিকে আনভীরকে প্রকাশ্য দেখা যাওয়া ও গ্রেফতার না করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা কথা বলতে রাজি হননি। তারা শুধু বলছেন, আমরা এখনো ময়নাতদন্তসহ ফরেনসিক প্রতিবেদন পাইনি। তবে থেমে নেই তদন্ত।

তবে গোয়েন্দা সূত্র বলছে, দুই সন্তানের জনক আনভীরের পরকীয়াকাণ্ডে প্রেমিকা মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় আপাতত তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও শেষ রক্ষা নাও হতে পারে। গ্রেফতার না হলেও তিনি গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যার পর গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার তৃতীয় তলার একটি অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া বাদী হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন।

এতে বলা হয়, মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মোসারাত জাহান মুনিয়ার আনভীরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রতি মাসে এক লাখ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে আনভীর মুনিয়াকে ওই ফ্ল্যাটে রেখেছিল। নিয়মিত ওই বাসায় যাতায়াত করতো বসুন্ধরার এমডি। তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো করে থাকতো।

নুসরাতের অভিযোগ, তার বোনকে বিয়ের কথা বলে ওই ফ্ল্যাটে রেখেছিল। একটি ছবি ফেসবুকে দেয়াকে কেন্দ্র করে আনভীর তার বোনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। ফলে মুনিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে।