বিশ্ব শান্তির জন্য একমাত্র ইসলামই অপরিহার্য্য 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ০৭ ২০১৯, ১৮:০৯

আহমদ কবীর খলীল

মানব জাতি পৃথিবীতে মহান স্রষ্টার প্রতিনিধি। সমস্ত সৃষ্টির উপর মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্ব সর্বজন স্বীকৃত। মানব জাতির এ শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষত রাখার স্বার্থে এবং সুন্দর ও আদর্শ জীবন যাপনের লক্ষ্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে সুনির্ধারিত জীবন বিধান। মানব জীবনে এ বিধান বাস্তবায়নই মানবতার মৌলিক দায়িত্ব।

যুগে যুগে আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং আসমানী কিতাবাদীর মাধ্যমে এ দায়িত্ব পালনের পথ ও পন্থা বাতলে দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে আল্লাহ প্রদত্ব এই বিধানের পুর্ণতা দান করা হয়েছে এবং এর নাম দেয়া হয়েছে ইসলাম।

এখন পৃথিবীতে আল্লাহ প্রদত্ব জীবন বিধান বলতে একমাত্র ইসলামই কার্যকর। ইসলাম ছাড়া যা কিছু আছে তা হয়তো অকেজো অথবা আমূল ভ্রান্ত। আল্লাহর কাছে যা একেবার মুল্যহীন এবং অগ্রাহ্য। অতএব, বাচতে হলে এখন একমাত্র ইসলামকেই আকড়ে ধরতে হবে। ইসলাম ছাড়া শান্তি ও মুক্তির বিকল্প কোনো পথ ও মত নেই । পৃথিবীর ইতিহাস, আবর্তন-বিবর্তন ও বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ইসলাম ছেড়ে বিকল্প পথে শান্তি ও মুক্তির অন্বেষা করেছে যারা, প্রকারান্তরে অশান্তির দাউদাউ অনলে দগ্ধ হয়েছে তারা, অথবা তারা ভ্রান্ততার তিমির অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছে।

ইসলাম আরবী শব্দ, যার মৌলিক দুটি অর্থ রয়েছে। পূর্ণ আনুগত্য ও শান্তি। অর্থ দুটি থেকে ইসলামের একটা সামগ্রিক পরিচয় সুস্পষ্ট হয়ে যায়, অর্থাৎ মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত পয়গাম্বরের পুর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমে উভয় জগতে শান্তি অর্জনের যে নিশ্চিত মাধ্যম রয়েছে, তার নামই ইসলাম। ইহ ও পরকালীন শান্তি-মুক্তির গ্যারান্টি কেবলমাত্র এই ইসলামেই রয়েছে। এখানে লক্ষনীয় বিষয় হলো, শান্তি-মুক্তি অর্জন হচ্ছে ফলাফল, যার জন্য পুর্বশর্ত হলো পূর্ণানুগত্য। অর্থাৎ পয়গাম্বরদের আনীত বিধান ও শেখানো পদ্ধতিতে যে বা যারা আল্লাহর পুর্ণ আনুগত্য করবে, তাদের জীবনে সে ফলাফল অবশ্যম্ভাবী। তাদের জীবনে শান্তি ও মুক্তির ব্যাপারটা সুনিশ্চিত। এতে দ্বিধা-সংকোচের অবকাশ নেই।

বর্তমান বিশ্বে, বিশেষভাবে পশ্চিমাদের ধনসম্পদ, ক্ষমতা ও যান্ত্রিক জীবনোপকরণের অগ্রগামিতা সবার কাছে স্বীকৃত। অথচ শান্তি অর্জনের ক্ষেত্রে তারা যে কতটা বিফল হয়ে ঘুরছে, তাও অস্বীকার করতে পারবে না কেউই। এর কারণ হলো, তাদের কাছে সবকিছু থাকলেও ইসলাম নেই। পৃথিবীর ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম প্রতাপশালী বাদশাহ ফেরাউন, নমরুদ এবং হিটলারকে কেউ সফল এবং মহান ব্যক্তিত্ব বলে না ৷ এরা জনগণের ওপর শাসন ও প্রভাব বিস্তার করতে পারলেও শান্তি উপহার দিতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এরও প্রধান কারণ, তাদের মধ্যে ইসলামের আদর্শ ছিলো না।

তবে প্রশ্ন হতে পারে; তাহলে বর্তমান মুসলিম সমাজে এতো অশান্তি কেনো? প্রশ্নটির সহজ সমাধানের লক্ষ্যে একটি মৌলিক সূত্র সকলের স্বরণ রাখা দরকার। আর তা হলো, পূর্ণ শান্তি তখনই অর্জিত হবে যখন পূর্ণ আনুগত্য পাওয়া যাবে। কারণ, পূর্ণ আনুগত্যের শর্তেই শান্তির গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে ইসলামে। অতএব, দেখতে হবে বর্তমান মুসলিম সমাজে আল্লাহ পাকের পূর্ণ আনুগত্য আছে কি নাই? যদি না থাকে তাহলে পূর্ণ শান্তির আশা করাটাই তো বাস্তব সম্মত নয়।

বরং আমরা আমাদের অনুপযোগিতা উপলব্ধি পূর্বক অনুতপ্ত হয়ে সংশোধনীর পথ খোঁজা দরকার। তাই এটিই বাস্তব সম্মত কথা যে, বর্তমানে মুসলিম সমাজে আল্লাহর বিধানের পূর্ণ আনুগত্য নেই, ফলে কাংখিত শান্তিও অর্জিত হচ্ছে না। সে শান্তি ফিরে পেতে হলে পূর্ণ আনুগত্যের পথকেই দৃঢ় ভাবে আকড়ে ধরতে হবে, যেমন ধরে ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম রা.।

আমরা প্রায় সবাই জানি, ঐতিহাসিকভাবে মূর্খতা ও বর্বরতার যুগ হিসেবে পরিচিত বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনপুর্ব মূহুর্তে আরবের অবস্থা কেমন অশান্ত ছিলো? অথচ, সেই সমাজের মানুষগুলোই যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পূর্ণ আনুগত্যের পথে চলে আসল, তখন সমাজ রূপান্তরিত হলো সোনালী সমাজে আর সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়লো অভূতপূর্ব শান্তির আবহ।

সাহাবাদের সেই সোনালী সমাজ শান্তি-মুক্তি আর মানবিক উন্নতি-অগ্রগতির চূড়ান্ত শিখরে আরোহন করেছিল। যা ছিলো মূলত আল্লাহ প্রদত্ব বিধানের সুফল এবং দীন-ইসলামের প্রকৃতি ও রূপের বহিঃপ্রকাশ। যা থেকে বর্তমান বিশ্ববাসী চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছে, কেবল তাদের কৃতকর্মের কারণেই।

আর এভাবে বঞ্চিত হতেই থাকবে, দিন দিন অধঃপতনের স্তুপের নিচে তলিয়ে যেতেই থাকবে, যদি না এই ইসলামের ছায়াতলে আল্লাহর পূর্ণ আনুগত্যের পথে ফিরে আসে। কিন্তু আহ! আর কতটা অধঃপতন ঘটলে মানুষ ফিরে আসার চেষ্টা করবে!

বিশ্বের সবাই শান্তি চায়, যারা অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়াচ্ছে তারাও শান্তির শ্লোগান মুখে রাখে। আর সাধারণ মানুষ তো শান্তিকামী এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষাবলম্বনকারী হয়েই থাকে। অতএব, সবাইকে ইসলামের পথেই আসতে হবে। কারণ, ইসলাম ছাড়া যে শান্তি অর্জনের বিকল্প কোনো পথ নেই তা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত এবং ইসলাম যে শান্তির ধর্ম তা এখন সবার কাছেই স্বীকৃত। যার প্রমান হলো, যারা ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রুসেড ঘোষণা করেছে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, তারাও বলতে বাধ্য হচ্ছে ” ইসলাম শান্তির ধর্ম”। তাদের এই স্বীকারোক্তি প্রমাণ বহন করে যে, ইসলাম শান্তির ধর্ম হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করার সুযোগ নেই, তাই বিশ্বশান্তির জন্য ইসলামই অপরিহার্য্য।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, চিরবক্রতা ও বিদ্বেষ প্রবণতার কারণে তারা ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার ঘোর বিরোধিতা করে থাকে। অথচ, শান্তির ধর্ম ইসলামের যারা বিরুদ্ধাচরণ করবে কিংবা যারা ইসলামকে অবহেলা, অবজ্ঞা অথবা উপেক্ষা করে চলবে, বিশ্বের অশান্তির জন্য তারাই যে প্রথম দায়ী হবে, আশা করি বিষয়টা আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই।

তাছাড়া ইসলামের পক্ষে যারা কাজ করছে বা করবে তারাও যে শান্তির পক্ষেই কাজ করছে এতেও সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। যারা সর্বজন স্বীকৃত শান্তির ধর্ম ইসলামের চর্চা ও লালন-পালনকে অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে প্রকারান্তরে ইসলাম বিলুপ্তির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে, তারা যে মানবতা ও শান্তিময় সমাজের চরম শত্রু, তাও অতি সুস্পষ্ট।

তদুপরি যারা হতভাগা, মানবতার জাতশত্রু,তারা ইসলামের বিরুদ্ধে লেগে থাকবেই। এটা তাদের উপর শয়তান কর্তৃক প্রদত্ব দায়িত্ব। তাদেরকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দিয়েই বিশ্ববাসীকে স্বরণ রাখতে হবে যে, ইসলাম মিটে যাবার ধর্ম নয়। কেয়ামত পর্যন্ত যা সংরক্ষণের ঘোষণা রয়েছে মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে তা মিটে যাবার প্রশ্নই আসে না। বর্তমান পৃথিবীর একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামের মধ্যেই রয়েছে আল্লাহ প্রদত্ব সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ জীবন বিধান। মহাপ্রলয় পর্যন্ত এটাই কার্যকর ও বলবৎ থাকবে। তাকে পৃথিবী থেকে বিদায় জানানোর সাধ্য কোনো জাতি-গোষ্ঠি, ইজম-মতবাদ, দেশ-মহাদেশ, মহাশক্তি-পরাশক্তির হয় নাই, হবেও না ইনশাআল্লাহ।

তবে হ্যাঁ, কোনো জনপদের মুসলমানদেরকে ধ্বংস করা কিংবা ধর্ম ত্যাগে বাধ্য করা যেতে পারে। কোনো মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নির্যাতন, নিপীড়ন করে নির্মূল করা যেতে পারে। আর তখন ইসলাম অন্য জনপদে আরো শক্ত হয়ে জেগে উঠবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, এমতাবস্থায় ইসলামের সেবায় অন্য জনগোষ্ঠী কায়েম করা হবে মর্মে আল্লাহর পক্ষ থেকে আল কুরআনে ঘোষণা রয়েছে। আর এটা পৃথিবীর ঐতিহাসিক বাস্তবতা হিসেবেও বারবার প্রতিফলিত হচ্ছে।

ইসলামের সূচনা থেকেই শত্রুরা কত ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছে, কত শক্তি মহাশক্তি প্রদর্শন করেছে। কত ঐক্য, কত জোট, কত মহাজোট তারা ইসলামের বিরুদ্ধে গঠন করেছে। কত বিভ্রান্তি তারা বিশ্বব্যাপি ছড়িয়েছে এবং ছড়াচ্ছে। কত ক্রুসেডের পর ক্রুসেড ঘোষণা করেছে। কত জনপদের পর জনপদ ধ্বংস করে চলেছে। কিন্তু ইসলাম আজও স্বীয় গতিতে এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোকে পৃথিবীর একমাত্র শান্তি ও শ্রেষ্ঠত্বের ধর্ম হিসেবে স্বগৌরবে টিকে আছে।

এখনও দুশমনদের অন্তরাত্মা ইসলাম ও মুসলমানের ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত তারা এখন মুসলমানদের অনৈক্যের সুযোগ নিচ্ছে। অন্যথায় মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হলে তাদের সমস্ত শক্তি মূহুর্তের মধ্যে তছনছ হয়ে যেতে পারে, এটা তাদের মাথায় অবশ্যই আছে।

মোটকথা, সত্য তো সত্যই! ইসলামের সত্যতার সামনে তাদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। অতএব, মুসলমানদেরকে সত্যের মনোবল নিয়ে থাকতে হবে। পূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমে নিজের পরিচয় নিয়ে বুক টান করে দাঁড়াতে হবে। একমাত্র আল্লাহর সামনেই মাথা নত করতে হবে। ইনশাআল্লাহ চূড়ান্ত বিজয় আমাদেরই আসবে। নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন ক্বারীব।

 

লেখক পরিচিতি: মাওলানা আহমদ কবীর খলীল, শিক্ষক, জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা, সিলেট।