ইসরাইলের সাথে গোপন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা থেকে সরে আসতে হবে

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ৩০ ২০২১, ১৯:১৩

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, ইসরাইলের সাথে গোপন সম্পর্ক স্থাপন চেষ্টা, ওলামা নির্যাতন, গণবিরোধী বাজেট ও শিক্ষাখাত ধ্বংসের ষড়যন্ত্র থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে।

আজ রোববার দুপুরে পুরানা পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে “একসেপ্ট ইসরাইল” শব্দ বাদ, আসন্ন জাতীয় বাজেট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়াসহ দেশব্যাপী চলমান জেল-জুলুম ও মামলা প্রসঙ্গে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পীর সাহেব চরমোনাই এসব কথা বলেন।

যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, নায়েবে আমীর আল্লামা আব্দুল হক আজাদ, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহজ্ব খন্দকার গোলাম মাওলা, আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ্ব আমনিুল ইসলাম, সহকারি মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম ও হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, কেএম আতিকুর রহমান, মাওলানা আহমদ আবদুুল কাইয়ূম, জিএম রুহুল আমীন, উপাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা শেখ ফজুলল করীম মারূফ, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, মাওলানা নেছার উদ্দিন, এডভোকেট লুৎফুর রহমান শেখ, এড. শওকত আলী হাওলাদার, মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, আলহাজ্ব জান্নাতুল ইসলাম, ছাত্রনেতা নূরুল করীম আকরাম প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন চরমোনাই পীর। কর্মসূচিগুলোর মধ্যে রয়েছে– ২ জুন ঢাকায় মানববন্ধন, ৩ জুন দেশব্যাপী প্রতিটি জেলা ও মহানগরে মানববন্ধন, পাসর্পোট থেকে ‘একসেপ্ট ইসরাইল’ বাদ দেয়ার প্রতিবাদ ও তা সংযোজনের দাবীতে ৫ জুন ঢাকায় বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইট থেকে বিক্ষোভ মিছিল।

লিখিত বক্তব্যের শুরুতে স্বাধীনতার ৫০তম বছরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল দেশপ্রেমিক বীর সেনানীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন চরমোনাই পীর। ওলামা ও রাজনৈতিক কর্মীদের মামলা প্রসঙ্গ তিনি বলেন, আটককৃত নিরপরাধ সকল ওলামায়ে কেরাম এবং তুচ্ছ কারণে বা হয়রানীমূলক মামলায় আটককৃত অন্যান্য সকল রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবি করেন। অন্যথায় সরকার ওলামা নিপীড়ক শক্তি হিসেবে ইতিহাসে কলঙ্কিত হবে বলে তিনি সতর্ক করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরকার পক্ষ সবসময়ই নিয়মতান্ত্রিক বাদ-প্রতিবাদকে দমন-পীড়ন করে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেয়। তার জের ধরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হামলা মামলা দিয়ে নির্যাতন ও হয়রানি করে। সরকারের ফ্যাসিবাদী এই চরিত্রের সর্বশেষ শিকার ওলামায়ে কেরাম। নরেন্দ্র মোদীর আগমনের প্রেক্ষিতে জনমনের ক্ষোভ প্রকাশ ও তাতে সরকারের দমন-পীড়নমূলক আচরণের প্রেক্ষিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে পবিত্র রমজানে যেভাবে ওলামায়ে কেরামকে আটক করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে, তাতে এ দেশের মুসলমানদেরকে ১৮৫৭ এর সিপাহী বিপ্লবোত্তর ওলামাদের সাথে সা¤্রাজ্যবাদী ইংরেজদের আচরণকে মনে করিয়ে দেয়। তিনি বলেন, উলামায়ে কেরাম সবচেয়ে শান্ত ও নির্ঝঞ্জাট জীবন যাপন করেন। তাদেরকে ঠুনকো অযুহাতের ভিত্তিতে মামলা দিয়ে জর্জরিত করা এবং গ্রেফতার করে দিনের পর দিন রিমান্ডে নেয়ার ফলে জনমনে এই সরকার ইসলাম বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে।

ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অবস্থান সাধুবাদ যোগ্য। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশের জন মানুষের আবেগ অনুভূতিকে আমলে নিয়ে জনতার পক্ষ থেকে প্রস্তাব করছি যে, আসন্ন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ইসরাইলের সাম্প্রতিক বর্বরতার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাশ, জাতিসংঘ অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন পুন:ব্যক্ত করে ইজরাইলের নিন্দা করতে হবে। আসন্ন জাতিসংঘ অধিবেশন চলাকালে স্বাধীন সার্বভৌম একক ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্যও বাংলাদেশ সরব ভূমিকা পালন করবে। মুসলমানদের প্রথম কেবলা বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্তকরণ কল্পে বহুজাতিক মুসলিম সেনাবাহিনী গঠনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

পাসপোর্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে ইজরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে যখন গোটা বিশ্বের মানুষ সোচ্চার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতেও যখন প্রথাগত ইসরাইলি পক্ষপাতের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক নেতৃত্ব জোড়ালো প্রতিবাদ গড়ে তুলেছে, এ সময় বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ৫০ বছরের ঐতিহ্য ছুড়ে ফেলে “একসেপ্ট ইজরাইল” শব্দদ্বয় বাদ দেয়া অশুভ ইঙ্গত বহন করে। স্বাধীনতার শুরু থেকে ৫০টি বছর ধরে অনুসৃত একটি রীতি, যে রীতির সাথে আমাদের মৌলিক চেতনা সম্পৃক্ত; এমন একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণে জন পরিসরে ও সংসদে আলোচনা হয় নাই; বিষয়টি আলোচনায় আসার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি বক্তব্য আরো হতবাক করেছে। কারণ, তিনি আন্তর্জাতিক মান রক্ষার যে যুক্তি দিয়েছেন, তা কেবল অ-যুক্তিই নয় বরং একই সাথে অসত্য যুক্তি। পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মান রক্ষায় “একসেপ্ট ইজরাইল” শব্দদ্বয় কোন বাধা নয়। এর পক্ষে অনেক যুক্তি থাকলেও সহজ অর্থে কেবল এতটুকু উল্লেখই যথেষ্ট হবে যে, এই শব্দদ্বয় সহই মালয়েশিয়ার পাসপোর্ট বিশ্বের ১৯তম শক্তিশালী পাসপোর্ট।

বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৩ জুন জাতীয় বাজেট ঘোষিত হবে। বাজেট হলো একটি দেশের আগামী একবছরের ব্যয় নির্বাহের জন্য জনমানুষের দেয়া টাকা খরচের পরিকল্পনা। এখানে আশা করা বাঞ্ছনীয় যে, বাজেট প্রণয়নের আগে জনমানুষের সাথে আলাপ করা হবে। আদতে তা হয় না। অর্থ মন্ত্রণালয় কিছু ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সাথে আলাপ করে, সমাজ ও বাস্তবতা বিমুখ আমলাদের দিয়ে বাজেট তৈরি করে। ফলে আমাদের বাজেটের কলেবর বাড়ে, কথার ফুলঝুরি উপচে পরে, কিন্তু কাজের কাজ কমই হয়।

বাজেট সম্পর্কে মৌলিক কিছু দাবী উপস্থাপন করছি-

১. বাজেট উপস্থাপনের আগে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে আলাদা করে আলোচনা করতে হবে।

২. কল্পনাবিলাস বাদ দিয়ে রাষ্ট্র যন্ত্রের সক্ষমতা পরিমাপ করে সে অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া। আমরা জানি গত অর্থবছরে চিকিৎসা গবেষণায় টাকা রাখা হলেও তার কোন টাকা ব্যবহার হয় নাই। তারপরেও এবছর আবারো চিকিৎসা গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এমন উদাহরণ আরো অনেক দেয়া যাবে। সক্ষমতাহীন এমন বরাদ্দ দুর্নীতির রাস্তা খুলে দেয়।

৩. ঋণ ও অনুদান নির্ভর বাজেট থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছরের কোনো দেশের পক্ষে ঋণ ও অনুদান নির্ভর বাজেট শোভা পায় না।

৪. শিক্ষা ও জনসম্পদ উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। এখানে প্রসঙ্গত বলে রাখি, বাজেটের বরাদ্দ দেখানোর ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা কাম্য। শিক্ষাখাতে যে বরাদ্দ দেখানো হয়, তার সাথে অন্যখাতও জুড়ে দেয়া হয়। আমরা মনে করি, এই চতুরতা বাদ দেয়া উচিৎ।

৫. আমরা গত বাজেটেও দেখেছি যে, বাজেটের ১৫% এর মতো অর্থ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় হচ্ছে। এটা শোভনীয় না। এটাকে যুক্তিসংগত করতে হবে।

৬. থোক বরাদ্দ কমাতে হবে।

৭. এডিপি বাস্তবায়নের হার খুবই কম। আমলাদের অদক্ষতার কারণেই এটা হয়। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার।

৮. প্রতিরক্ষা ব্যয় কমাতে হবে। দেশের উল্লেখযোগ্য অংশের নাগরিককে মৌলিক প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা না করে প্রতিরক্ষায় অস্বাভাবিক ব্যয় অগ্রহণযোগ্য। প্রতিরক্ষা ব্যয় কমিয়ে জনস্বার্থ ও সামাজিক সুরক্ষা নির্ভর বাজেট দিতে হবে। সামরিক বাহিনীর ব্যয়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও যৌক্তিকতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোকে একটি উৎপাদনশীল বাহিনীতে পরিণত করে গড়ে তুলতে হবে।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, জনগণের পক্ষে জনস্বার্থে যে প্রস্তাব তুলে ধরেছি, আশাকরি সরকার এগুলোকে আমলে নিয়ে আশু সমাধানের উদ্যোগ নিবে। বিশেষত: সন্ত্রাসী ইসরাইলের সাথে অশুভ গোপন সম্পর্ক স্থাপন চেষ্টা,ওলামা নির্যাতন, গণবিরোধী বাজেট, শিক্ষা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র ও নতজানু ভারত নির্ভর আত্মঘাতী পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে আসতে হবে। স্বাস্থ্যখাত ধ্বংসে জড়িত মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের সরাতে হবে। অন্যথায় দেশের প্রতিনিধিত্বশীল সচেতন নাগরিকদের সঙ্গে পরামর্শ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।

ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারি আকার ধারণ করার পরে প্রায় দুই বছরে হতে চললো, টিকা আবিষ্কার ও গণ-টিকাদান প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে প্রায় অর্ধ বছর হতে চললো। কিন্তু বাংলাদেশে টিকা প্রাপ্তি ও বিতরণ প্রক্রিয়া ভুল সিদ্ধান্ত, অদক্ষতা ও নৈরাজ্যের কবলে পড়ে অনিশ্চিত হয়ে আছে। যেই ভারত সামান্য পেঁয়াজ নিয়ে নোংরা রাজনীতি করে, টিকার জন্য সেই ভারতের ওপর একক নির্ভরতা চরম পর্যায়ের বোকামি ছিল। যুক্তিহীন নতজানু ভারত নির্ভরতার চড়া মূল্য দিচ্ছে বাংলাদেশ। টিকা প্রাপ্তিতে ভারতের বিশ্বাসঘাতকতার পরও টনক নড়েনি সরকারের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সরকার রাশিয়া ও চীনের থেকে টিকা সংগ্রহ করা নিয়েও টালবাহানা করেছে। স্বয়ং পররাষ্ট্রমন্ত্রীও স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের মতলববাজী সময়ক্ষেপণ ও দিধাদ্বন্দ্বের জন্য আক্ষেপ করেছেন এবং টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আশংকা প্রকাশ করেছেন।

প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী দেড় বছরের মতো নিয়মিত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। এমন গুরুতর পরিস্থিতিতে টিকা সংগ্রহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতলববাজী সময়ক্ষেপণ, সিদ্ধান্তহীনতা এবং তারপরেও তারা বহাল তবিয়তে থাকা আমাদেরকে হতবাক করে। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অশুভ শক্তি কি স্বয়ং সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী? তারা কি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চেয়েও ক্ষমতাবান? না কি স্বয়ং সরকারই এই অশুভ চক্রের অংশ? করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা, টিকা সংগ্রহ ও বিতরণ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অশুভ শক্তিকে চিহ্নিত করতে এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে অবিলম্বে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া প্রসঙ্গে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, মহামারি করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষার সঙ্গে জড়িত সবকিছুতেই বিপর্যয় নেমে এসেছে। লাগাতার ১৫ মাস ধরে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। মাঝখানে কিছুদিন কওমি মাদরাসা চালু থাকলেও গত এপ্রিল থেকে আবারো তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আলিয়া মাদরাসাও খোলেনি গত ১৫ মাসে। স্কুল, কলেজ ও আলিয়া মাদরাসার সকল ধরনের পরীক্ষা বন্ধ। গত বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অটো পাস দেয়া হয়েছে। এ বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এখনো হয়নি। পরীক্ষা হবে কি না, তাও স্পষ্ট নয়। শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিল ছেড়ে এবারও অটো পাসের অপেক্ষায়।

দেশের প্রায় ৪ কোটি ছাত্র-ছাত্রী নিয়মতান্ত্রিক লেখাপড়া থেকে শুধু বঞ্চিত হচ্ছে তাই নয়, অনেকের শিক্ষাজীবনই শেষ হয়ে গেছে। অনেকে নানারকম অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। মাদকাসক্ত হয়েছে অনেক ছাত্র-ছাত্রী। অনলাইনে পড়াশুনার অজুহাতে ছাত্র-ছাত্রীদের একটি বিপুল অংশ অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন গেমসে আসক্ত হয়ে গেছে। মোবাইল আসক্তি তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এসব বিপর্যয়তো শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সংক্রান্ত। এর বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে আর্থিক বিপর্যয়েও লাখ লাখ পরিবার পথে বসেছে। সরকার বারবার বলছে, “আগে জীবন রক্ষা, তারপর শিক্ষা”। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে লাখ লাখ নন-এমপিও শিক্ষক বেকার হয়ে গেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু না থাকাতে তারা বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। সম্মানিত শিক্ষকগণ চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সরকারের উদাসীনতা, অদূরদর্শিতা ও খামখেয়ালীতে দেশের শিক্ষাখাত আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার কিন্ডার গার্টেন এবং প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, দেশে লাখ লাখ পরিবার আছে যাদের জীবন জীবিকা শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। লাখ লাখ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে শিক্ষা উপকরণকে কেন্দ্র করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাতে সেসব ব্যবসায়ীরা আজ বিপর্যস্ত। তাদের দিকে সরকারেরও কোনো নজর নেই।

সরকার চাচ্ছে সবাইকে ভ্যাকসিন দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে। কিন্তু ভ্যাকসিন নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সহসাই সবাই ভ্যাকসিন পেয়ে যাবে, এমন আশা করা যায় না।

আর সময় না বাড়িয়ে অতিদ্রুত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন। এজন্য যা যা করণীয় তাই করুন। অন্যথায় সরকারের অদূরদর্শী ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক এবং ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীগণকে সঙ্গে নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।