এমসি কলেজে গৃহবধূ গণধর্ষণের মূল হোতা কে এই সাইফুর 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ২৭ ২০২০, ২১:৩১

আবুল কাশেম অফিক,বালাগঞ্জ থেকে: সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারী চাঁদ (এম.সি) কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনার মূল হোতা হিসেবে কথিত সাইফুর রহমানের বাড়ি বালাগঞ্জ উপজেলায়।

গত শুক্রবার রাতে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে বেঁড়াতে আসেন এক দম্পতি। এসময় কথিত ছাত্রলীগ ক্যাডাররা স্বামী ও স্ত্রীকে কলেজ ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। পরে, স্বামীকে বেধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষন করে ওই নরপিশাচরা।

ওইদিন মধ্যরাতে পুলিশ অভিযান চালায় এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে। মূলহোতা সাইফুরের দখলকৃত কক্ষে অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হতে থাকে মূলহোতা সাইফুরসহ অন্যদের ছবি। সাইফুরের ছবি দেখে চিহ্নিত করা হয় তার গ্রামের বাড়ি বালাগঞ্জ উপজেলায়।

এরপর থেকেই শুরু হয় কানাঘুষা আলোচনা সমালোচনা। কে এই সাইফুর? কি তার পরিচয়? সে কিইবা করে?

জানা যায়, সাইফুরের গ্রামের বাড়ি বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের চান্দাইর পাড়া গ্রামে। তার পিতার নাম- মো. তাহিদ মিয়া। মাতার নাম আছিয়া বেগম, তাহিদ মিয়া ২ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তানের জনক। সাইফুর সবার বড়, ছোট ভাই সাদিক থাকেন গ্রীসে আর বোন বিবাহিত।

স্থানীয় বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, একাধিকবার সাইফুরের এসব বেপরোয়া কর্মকান্ডের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তার পরিবারকে। তার কারণে আত্মীয়স্বজন সহ সব মহলে প্রহসনের শিকার তার পরিবার।

সাইফুর ছিল উগ্র স্বভাবের ছেলে, তার চলাফেরা ছিল বেপরোয়া। সে স্থানীয় চাইন্দার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা পর তাজপুর ডিগ্রি কলেজে ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিল।

সেখানে পড়ালেখার সময় একটি গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পরে। ২০১৬ সালে স্থানীয় এলাকায় ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুইগ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে সে অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের  উপর হামলা করেছি,পরে এই ঘটনার আসামিও হয়।

এর পর সে সিলেট এমসি কলেজে ভর্তি হয়। এমসি কলেজ ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নানা কারণে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করত সাইফুর। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বেড়ধক পেঠানোরও অভিযোগ আছে সাইফুরের বিরুদ্ধে। কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ জিনিষপত্র চুরিরও অভিযোগ আছে সাইফুরের বিরুদ্ধে।

এমনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার একাধিক সহপাঠীরা জানান, কলেজ ছাত্রবাসে তার দখলে ১০/১২ টা রুম থাকতো, সেই রুম বহিরাগতদের বাড়া দিয়ে টাকা আদায় করতো।

সে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য নাজমুল ইসলামের অনুসারী হিসেবে পরিচিত যা ফেসবুকে নাজমুল ও তার একাধিক ছবি সহ ভাইরাল হয়েছে।

এদিকে, ধর্ষক সাইফুরের বাড়ির পাশেই বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বোয়ালজুড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনহার মিয়ার বাড়ি। যে কারণে আনহার বিদ্রোহীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আনহার মিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলছেন- “সাইফুর আনহার মিয়ার চাচাতো ভাই”। আদৌ ধর্ষক সাইফুর আনহার মিয়ার চাচাতো ভাই কি না জানতে চাইলে তিনি জানান- এসব মিথ্যা। আমাকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তিনি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।

আনহার সমর্থকদের প্রশ্ন- সাইফুরের বাড়ির পাশেই আনহার মিয়ার বাড়ি হওয়ায় সে কি আনহার মিয়ার চাচাতো ভাই হয়ে গেলো? এ বিষয়টিকে নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে বলে তাঁর অভিযোগ। যে কারণে আনহার মিয়াও পড়েছেন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখী।

ধর্ষক সাইফুর ছাত্রলীগের সাইনবোর্ডের আড়ালে সর্বত্র বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থাকতো। যার কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখী হয়েছেন মূলধারার ছাত্রনেতারা। সাইফুরের গ্রামের বাড়ি বালাগঞ্জ হওয়ায় এখানকার স্থানীয় ছাত্রনেতারা পড়েছেন বেকায়দার মধ্যে।

সর্বত্র জবাবদিহীতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাদের। হচ্ছেন বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন। পরিবার থেকে শুরু করে সামাজিক ভাবে খারাপ মন্তব্য শোনতে হচ্ছে তাদের।

হাতেগোনা কয়েকজনের জন্য ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠন আজ বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন।

ঠিক এমন ভাষ্যই বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রকীব জুয়েলের।

তিনি জানান, ধর্ষক সাইফুর ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট বিধায় এর দায় পড়ছে আমাদের উপর। হাতেগোনা দুইএকজনের কারণে গোটা সংগঠন আজ প্রশ্নবিদ্ধ। ছাত্রলীগ অনেক ভালো কাজের কৃতিত্বের দাবিদার। এই ধর্ষকদের এসব অপকর্মের কারণে এসব কৃতিত্ব আজ ধুলিসাৎ। আমি সাইফুরসহ অভিযুক্ত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যাতে আর কোনো ধর্ষক ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে এসব অপকর্ম করে গোটা ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে।

এদিকে সাইফুরের ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক সহ বালাগঞ্জের দেশ-বিদেশে বসবাসরত সচেতন নাগরিকরা এ ঘটনায় পুরো বালাগঞ্জ জুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে।

উল্লেখ্য, রবিবার সকালে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে সাইফুরকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।