আমেরিকাতে কৃষ্ণাঙ্গরা কেনো দলবেঁধে মুসলিম হচ্ছেন?

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুন ০৭ ২০২০, ২২:০৮

জুবের আহমদ, পর্তুগাল থেকে: আমাদের প্রিয় নবী বিশ্বনবী মোহাম্মদ (স.) প্রায় ১৫০০ বছর আগেই বলে গেছেন, দুনিয়ার সকল মানুষ এক আদমের সন্তান। এখানে আরবের উপর কোন নন-আরবের অগ্রাধিকার নেই কিংবা নন-আরবের উপর আরবের। তেমনি সাদা চামড়ার উপরে কালো চামড়ার কোনো অগ্রাধিকার নেই কিংবা কালো চামড়ার উপর সাদা চামড়ার। শুধুমাত্র ধার্মিকতা এবং সৎ কর্ম ছাড়া।

আমাদের প্রিয় নবীজী (স.) যতো হাদিস আছে তার মধ্যে  অন্যতম এই হাদিসটি আমেরিকাতে এবং অন্যান্য বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়।

আপনারা সবাই জানেন যে, বর্ণবাদিতা আমেরিকা এবং ইউরোপে ভয়ংকর রূপ ধারণ করে আছে। গত শতাব্দি অবধি সারা বিশ্বে শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্য আর কৃষ্ণাঙ্গরা নির্যাতিত ছিলো। এমনকি একবিংশ শতাব্দিতে এসেও কৃষ্ণাঙ্গদের পরিস্থিতিতে তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি।

এইতো গত সপ্তাহে আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্যে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ। এর এক সপ্তাহ আগে ব্রাজিলের শ্বেতাঙ্গ পুলিশ ১৪ বছরের কিশোর কৃষ্ণাঙ্গ জুয়াও পেডরোকে নিজ বাসভবনে গুলি করে হত্যা করে। ২০১৯ সালে শুধু ব্রাজিলে প্রায় ১৯০০ কৃষ্ণাঙ্গকে গুলি করে হত্যা এবং এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৬০০ কৃষ্ণাঙ্গকে ইতিমধ্যেই হত্যা করে ফেলেছে ব্রাজিলের বর্ণবাদী পুলিশ।

আর ইউরোপ এবং আমেরিকার পরিসংখ্যান যোগ হলে প্রতিবছর পুলিশ কর্তৃক কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রকৃত সংখ্যা যে কত হবে তা সহজেই অনুমেয়। অথচ তাঁরাই বিশ্বের অন্যান্য দেশকে মানবতার সবক দেয়। এরা একদিকে সমমর্যাদার শ্লোগান দেয় আর অন্যদিকে কৃষ্ণাঙ্গদের নির্যাতন করে। এদের চেয়ে বেশি প্রতারক আর ভণ্ড কে হতে পারে?

তবে এর কি কোনো সমাধান নেই? তাদের জীবনের কি কোনো মূল্য নেই? এর উত্তর হলো- আছে এবং অবশ্যই আছে। ইসলামই হচ্ছে এর মূল সমাধান। যেখানে বর্ণবাদিতার কোনো স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে, এই শতাব্দিতে কৃষ্ণাঙ্গরা বেশি বেশি ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তন করছে। কারণ ইসলাম তাদেরকে একটি বর্ণবাদ মুক্ত সমাজের প্রস্তাব দেয়; যেখানে প্রত্যেকেই সমান।

পিউরিসার্জের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায়, আমেরিকায় টোটাল মুসলিমদের মধ্যে পাঁচ ভাগের একভাগ হচ্ছেন কৃষ্ণাঙ্গরা। এর মধ্যে অর্ধেক হচ্ছেন কনভার্টেট মুসলিম যারা কিনা বর্ণবাদে অতিষ্ঠ হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে।

তবে আমেরিকার ইতিহাস থেকে জানা যায়, যেসব কৃষ্ণাঙ্গরা আমেরিকায় স্লেইভ (দাস) হিসাবে এসেছিলো তাঁরাই আমেরিকায় ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলো। তবে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে কৃষ্ণাঙ্গরা দলবেঁধে খ্রিষ্টিয়ানিটি ছেড়ে ইসলামের দিকে ফিরে আসতে থাকে এবং পরবর্তীতে পুরো আমেরিকা জুড়ে সবাই তাদের ফলো করতে থাকেন।

এইসব কৃষ্ণাঙ্গরা তাদের পুরোনো ধর্ম ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে মুক্তি পেয়েছে বর্ণবাদিতা থেকে। এইসব কনভার্টেট মুসলিমরা শুধু শাহাদাত পড়ে কিংবা নাম পরিবর্তন করেই ক্ষান্ত হননি, সময় সময় নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছে ইসলামের সাথে। এমনকি অনেকেই ইসলামি দাওয়াত সেন্টার খুলে বিধর্মীদের দাওয়াত দিচ্ছেন।