সুপার ওভারে কুমিল্লার জয়; নিজেদের মাঠেও পরাজয়ের বৃত্তে সিলেট

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জানুয়ারি ০৩ ২০২০, ০০:২৭

কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স করলো ১৪০ রান। সিলেট থান্ডারও করলো ঠিক ১৪০। তুমুল নাটকীয়তার ম্যাচ তাই গড়ালো ‘সুপার ওভারে’। সেখানে সিলেটকে ১ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা।

সুপার ওভারে সিলেট থান্ডারের দুই ব্যাটসম্যান আন্দ্রে ফ্লেচার ও রাদারফোর্ড তুলেন মাত্র ৭ রান। কুমিল্লার মুজিব উর রহমান দারুণ বোলিংয়ে আটকে যান সিলেটের এ দুই ব্যাটসম্যান। সুপার ওভারে এই লক্ষ্য ছুঁতে গিয়েও ক্ষণিকের নাটকীয়তা ছিল। নাভিন উল হকের করা ওভারের প্রথম বলে ২ রান নেন ডেভিড ওয়েইজ। দ্বিতীয় বলে লাগে তার প্যাডে। রান নিতে দৌড়াচ্ছিলেন সৌম্য। বল ধরে স্টাম্প ভেঙে দেন নাভিন। টিভি আম্পায়ার নট আউটের সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর এলবিডব্লিউর জন্য রিভিউ করে সিলেট। তবে রিভিউয়ে দেখা যায় বল স্টাম্প মিস করছিল। পরের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সৌম্য।

চতুর্থ বলে চার মেরে ম্যাচের পাল্লা নিজেদের দিকে নিয়ে আসেন ডেভিড ওয়েইজ। ম্যাচে সমতা। পরের বলে ১ রান তুলে ম্যাচ শেষ করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন ওয়েইজ। তবে শর্ট মিড অনে থাকা রাদারফোর্ড যদি ঠিকমতো বল ধরে থ্রো করতে পারতেন, তবে সম্ভাবনা ছিল রানআউটের।

সুপার ওভারের নিয়মে ১ উইকেটে জয় পায় কুমিল্লা। ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করা আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমানের হাতে ওঠে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার।

২০১২ সালে শুরু হওয়া বিপিএল প্রথম সুপার ওভার দেখেছিল ২০১৯ সালে। চিটাগং ভাইকিংস ও খুলনা টাইটান্সের ম্যাচ ছিল সেটি। এবার বিপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো সুপার ওভার দেখা গেল।

বঙ্গবন্ধু বিপিএলের সিলেট পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে টসে জিতে বোলিংয়ে নামে সিলেট থান্ডার। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হয় ম্যাচটি। নিয়মিত অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেনকে চোটের কারণে তাকে আজ দলে পায়নি সিলেট। তার বদলে আন্দ্রে ফ্লেচার করেন অধিনায়কত্ব।

টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সিলেট থান্ডারকে ১৪১ রানের লক্ষ্য দেয় কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। টি-টোয়েন্টিতে আহামরি কোনো লক্ষ্য নয় মোটেও। কিন্তু সেই লক্ষ্যকে পাহাড়সম বানিয়ে ফেললেন সিলেট থান্ডারের ব্যাটসম্যানরা। ৩৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে সিলেট যখন শোচনীয় হারের অপেক্ষায়, তখনই দৃশ্যপটে আবির্ভাব ঘটে সোহাগ গাজীর। বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলে ঘুরিয়ে দেন ম্যাচের মোড়। শেষদিকে নাভিন উল হক আর মনির হোসেনের ব্যাটে নাটকীয়তায় রূপ নেয় বিপিএলের সিলেট পর্বের দ্বিতীয় এই ম্যাচ।

কুমিল্লার লক্ষ্যের জবাব দিতে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই উইকেট হারায় সিলেট। জনসন চার্লসকে ফিরিয়ে দেন সানজামুল ইসলাম। পরের ওভারে রনি তালুকদারকে ফেরান মুজিব উর রহমান। মোহাম্মদ মিঠুন আর রাদারফোর্ড মিলে বাঁধ হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। দু’জনকেই একই ওভারে ফিরিয়ে দেন পেসার আল আমিন। ওপেনিংয়ে না নেমে মিডল অর্ডারে আসা আন্দ্রে ফ্লেচার উইকেটের পেছনে অঙ্কনের হাতে ক্যাচ দেন ডেভিড ওয়েইজের বলে।

৩৩ রানে ৫ উইকেট হারানো সিলেটের কাছে শত রান মনে হচ্ছিল আকাশের চাঁদ! সেখান থেকে সিলেটকে জয়ের স্বপ্ন দেখান সোহাগ গাজী। পাল্টা আক্রমণে কুমিল্লাকে দুশ্চিন্তায় ডুবাতে থাকেন এই অলরাউন্ডার। তাকে সঙ্গ দিতে থাকেন নাজমুল হোসেন মিলন। তবে মুজিব উর রহমানের করা ইনিংসের ১৭তম ওভারে দুজনেই ফিরে যান। ৩১ বলে তিনটি চার আর চারটি ছয়ে ৫২ রান করেন সোহাগ গাজী।

এরপর সিলেটের পরাজয় মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু ম্যাচ জমিয়ে দেন নাভিন উল হক আর মনির হোসেন। এ দুজন গড়েন ৩১ রানের জুটি। সিলেটের আশার বাতিঘর হয়ে জ্বলছিলেন তারা। শেষ ওভারে সিলেটের জয়ের জন্য দরকার পড়ে ১৫ রানের। আল আমিনের করা প্রথম বলেই চার হাঁকান নাভিন। পরের বলেও চার। তৃতীয় বলে ২ রান নিতে গিয়ে আউট হন নাভিন, আসে ১ রান। চতুর্থ বলে ইবাদত নেন ২ রান। পঞ্চম বলে ১ রান নিয়ে স্ট্রাইক পাল্টান ইবাদত। শেষ বলে স্ট্রাইকে মনির। জয়ের জন্য দরকার ৩ রান। আল আমিন করেন ওয়াইড বল। জয়ের জন্য সিলেটের দরকার ২ রান। শেষ বলে লং অনে বল ঠেলে দিলেই রানের জন্য দৌড়ান মনির। কিন্তু ২ রান নিতে গিয়ে হয়ে যান রান আউট। এরপরই ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।

সিলেটের মূল ব্যাটিং ইনিংসে দুর্ধর্ষ বোলিং করেন কুমিল্লার মুজিব উর রহমান। ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে তুলে নেন ৪ উইকেট। আল আমিন ৪ ওভারে ৩০ রানে ২ উইকেট, সানজামুল ইসলাম ৪ ওভারে ২৪ রানে ১ উইকেট ও ডেভিড ওয়েইজ ৪ ওভারে ৩১ রানে নেন ১ উইকেট।

এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরু পায় কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের। ৪ ওভারেই স্কোরবোর্ডে রান ওঠে ৪২। পঞ্চম ওভারে ‘লোকাল বয়’ ইবাদত হোসেনের প্রথম বলেই ফিরে যান স্টিয়ান ভ্যানজিল। সৌম্য সরকারও প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন দ্রুত। দারুণ খেলছিলেন উপুল থারাঙ্গা। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে তাকে বিদায় করেন সোহাগ গাজী। ফেরার আগে ৩১ বলে ৯টি চারে থারাঙ্গা করেন ৪৫ রান।

ইয়াসির আলী ফিরেন দ্রুতই। ইবাদতের লাফিয়ে ওঠা বলে এলবিডব্লিউতে কাটা পড়েন ডেভিড ওয়েইজ (১২ বলে ১৫)। সাব্বির রহমান ‘টেস্ট ক্রিকেট’ খেলে ২৫ বলে ১৭ রানে বোল্ড হন রাদারফোর্ডের বলে। শেষ দিকে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ব্যাট থেকে আসে ১৪ বলে অপরাজিত ১৯ রান। ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪০ রান তুলে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স।

৪ ওভারে ১৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সিলেটের সেরা বোলার রাদারফোর্ড। ৪ ওভারে ৩৩ রানে ইবাদত হোসেন ৩টি, ৩ ওভারে ২৩ রানে সোহাগ গাজী ২টি উইকেট নেন।

৯ ম্যাচে এ নিয়ে সিলেট থান্ডারের হার ৮ ম্যাচে। ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে যেন বেরোতেই পারছে না সিলেট। এক পয়েন্ট নিয়ে বঙ্গবন্ধু বিপিএলে পয়েন্ট তালিকার একেবারে তলানিতে পড়ে আছে তারা। প্লে-অফে খেলার আশা আগেই শেষ। সিলেট থান্ডারের কোচ হার্শেল গিবস শেষ দিকের ম্যাচগুলোতে ভালো খেলার কথা বলেছিলেন। দলের খেলোয়াড়দের ‘নায়কের ভূমিকায়’ দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই ‘নায়ক’ হতে যেন সিলেট থান্ডারের কেউই ‘রাজি নন’!