সালাফিজম রাজনৈতিক সমস্যা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ০৭ ২০১৯, ০০:৫০

আবুল কাসেম আদিল:

মতের বিরোধ থাকলেও ইসলামপন্থীদের মধ্যে পারষ্পরিক ঐক্য চাই। বিশ্বব্যাপী ইসলাম-বিরোধীরা যখন ইসলামের বিরোধিতায় ঐক্যবদ্ধ, সেসময় মুসলমানদের মধ্যে পারষ্পরিক ঐক্যের বিকল্প নেই। সালাফীরাও এর মধ্যে শামিল। তবে সত্য হলো, সালাফীরা চাইলেও ঐক্য করতে বা ধরে রাখতে পারবে না। সালাফীরা যদি স্রেফ একটি চিন্তাগত সম্প্রদায় হতো, তাদের সঙ্গে যদি অন্যদের বিরোধ শুধু ফিকহি গবেষণাগত হতো— তাহলে ঐক্য সম্ভব ছিল। কারণ মতের পার্থক্য থাকলেও সবার কেন্দ্রীয় আদর্শ এক। কিন্তু সালাফীদের সঙ্গে অন্যদের বিরোধ শুধু ফিকহি গবেষণাগত নয়। বরং মূল বিরোধ রাজনৈতিক। কারণ সালাফীরা ঐতিহাসিকভাবেই সৌদি সরকারের অনুগত। যে কোনো সরকার দেশের ও দলের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কারণে কৌশল পরিবর্তন করে। কোনো দেশের ও দলের চিরস্থায়ী শত্রু-মিত্র থাকে না। নিয়ত শত্রু-মিত্র পরিবর্তন হয়। সৌদি রাজ-পরিবারের ক্ষেত্রেও এ কথা সত্য। বাধ্য হয়েই সালাফীদেরকে সৌদি সরকারের সঙ্গে তাল মেলাতে হবে। ফলে সালাফীরা নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় অন্যদের সঙ্গে ঐক্য করতে ও ধরে রাখতে পারবে না। বিগত দিনগুলোতে এর নজির দেখা গেছে। সৌদি সরকারের সঙ্গে যখন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সদ্ভাব ছিল, সালাফীরা জামায়াতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখত। সৌদি সরকার যখন জামায়াত ত্যাগ করেছে, সালাফীরা জামায়াতের বিরোধিতায় লিপ্ত হয়েছে।

তবে আনন্দের কথা হলো, খুব বেশি অন্ধ ও বধির না হলে সামনের দিনগুলোতে কেউ সালাফী হয়ে থাকতে পারবে না। সৌদি সরকার সামনে আরো বেশি বেশি বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নেবে। যার অনেকগুলোই হবে কুরআন-সুন্নাহর বিরোধী। সালাফীদেরকে ক্রমাগত অন্ধ ও বধিরের ভূমিকা পালন করে যেতে হবে। কুরআন-সুন্নাহর প্রতি ন্যূনতম দায়বদ্ধতা থাকলে সৌদি আনুগত্য ছাড়তে হবে। সালাফীরা এখন পর্যন্ত অন্ধ ও বধিরের ভূমিকা পালন করছে। আরো কতদিন পারবে, দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এটি একদিক থেকে যেমন আনন্দের, এরচে বেশি দুঃখ ও পরিতাপের। হারামাইনের ভূমিতে কুরআন-সুন্নাহ লঙ্ঘিত হবে, এরচে দুঃখের আর কিছু নেই।

যাঁরা সালাফীদেরকে শুধু ফিকহিভাবে মোকাবেলা করতে চান, আমার ধারণা তাঁরা মূল সমস্যাটা ধরতে পারছেন না। রফয়ে ইয়াদাইন করা বা না করা দ্বারা ইবাদাতে বিশেষ হেরফের হয় না। শরীয়ায় এসব ক্ষেত্রে বেশ প্রশস্ততা আছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক সঙ্কট মুসলমানদের জীবন ও জগৎ ওলট-পালট করে দিতে পারে। ইতিমধ্যে মুসলিম বিশ্বে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশেষত মিশরের আজকের অবস্থার জন্য এই সঙ্কট অনেকখানি দায়ী। রাজনৈতিক আনুগত্য মানুষকে এত অন্ধ বানিয়ে দিতে পারে, মুসলিম মুরসিকে শত্রু মনে হয়, ইহুদিবান্ধব সিসিকে আপন লাগে। গণতন্ত্র ইসলামে নেই, এই অজুহাতে মুসলিমবান্ধব সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে ইহুদিবান্ধব সরকারের আগমন তরান্বিত করতে পারে। ইহুদিবান্ধব সরকারও ভালো, কারণ তারা গণতান্ত্রিক নয়। অন্ধ আনুগত্য মানুষকে কতটা নির্বোধ বানিয়ে দিতে পারে, চিন্তা করাও মুশকিল।