সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি: যমুনা টিভিকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ডিসেম্বর ০৪ ২০১৯, ১৫:২৩

সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমেদ্বীন, প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর বিরুদ্ধে যমুনা টিভির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা সংবাদ প্রচারের প্রতিবাদে দেশের শীর্ষ ইসলামি নেতৃবৃন্দ সাংবাদিক সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. আমাদের সকলের মুরুব্বি। তার বণার্ঢ্য কর্ম জীবনের উপর এই আঘাত বরদাশত করা হবে না। যমুনা টিভি যদি তাদের কৃতকর্মের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা না চায়, সরকার যদি তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে সর্বদলীয় ইসলামি নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে যমুনা টিভির বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে ইনশাআল্লাহ।

আজ (৪ ডিসেম্বর) বুধবার ঢাকার পুরানা পল্টনে (সুরমা টাওয়ারের পিছনে) বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল ১১টায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন,  শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ও সম্মানীত একটি নাম। একজন প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ও বুযুর্গ আলেমেদ্বীন হিসেবে তিনি পরিচিত। অর্ধশতাব্দীরও অধিককাল তিনি বুখারি শরিফের অধ্যাপনা করেছেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। বাংলা ভাষায় তিনিই প্রথম বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাসহ পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করেছেন। এর মাধ্যমে লক্ষ কোটি বাংলা ভাষী মুসলমান মহানবী সা. এর হাদিসের জ্ঞান লাভ করতে পেরেছে। ঢাকার উল্লেখযোগ্য পাচঁটি মাদরাসায় তিনি একই সাথে বুখারি শরিফের দরস দিয়েছেন। সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে তার লক্ষ লক্ষ ছাত্র। শুধু তাই নয়, বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার হিসেবে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে অধ্যাপনা করেছেন। জাতীয় ঈদগাহের খতিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এদেশের রাজনীতি ও ইসলামি আন্দোলনের ময়দানে শাইখুল হাদীস রহ. এর ভূমিকা ও অবদান অসামান্য।

১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের সময়ে থেকে শুরু করে শারীরিক সক্ষমতার শেষ সময় পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে কোনো ইস্যুতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ইসলাম বিরোধী ও দেশ বিরোধী যে কোনো অপতৎপরতার বিরুদ্ধে এবং ইসলামের গৌরব প্রতিষ্ঠার সকল আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন শাইখুল হাদীস রহ.। স্বাধীনতার পর উন্মুক্ত রাজনীতির সূচনা হলে তৎকালীন সময়ে উলামায়ে কেরামের একমাত্র দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। এবং তিন বছর তিনি সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮১ সালে হাফেজ্জী হুজুরের ডাকে খেলাফত আন্দোলন গঠনে ভূমিকা রাখেন। তখন তিনি হাফেজ্জী হুজুরের দক্ষিণহস্ত ও খেলাফত আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির হিসেবে ভূমিকা রাখেন। ১৯৮২ সালে হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর মুখপাত্র হিসেবে ইরান-ইরাক, মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন। এ সফরে মুসলিম উম্মাহর শান্তি স্থিতিশীলতা ও মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধতার ব্যাপারে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সাথে ফলপ্রসূ আলাপ-আলোচনা করেন। ইরান-ইরাক যুদ্ধ বন্ধের জন্য আয়াতুল্লাহ খোমেনি ও প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সাথে দীর্ঘ আলোচনা করেন। এভাবেই তিনি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। হাফেজ্জী হুজুরের ইন্তেকালের পর ইসলামি রাজনীতির নেতৃত্বের ভার চলে আসে শাইখুল হাদীস রহ.-এর ওপর।

১৯৮৯ সালের ৮ ডিসেম্বর উলামায়ে কেরাম ও দ্বীনদার বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। ১৯৯১ সালে সমমনা ইসলামি কয়েকটি দল নিয়ে ইসলামি ঐক্যজোট গঠন করেন এবং এর চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর দল ও জোট একাধিকবার জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে।

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের উগ্র হিন্দু কর্তৃক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হলে এর প্রতিবাদে শাইখুল হাদীস মিছিল, মিটিং ও আন্দোলনে সক্রিয় হন। ১৯৯৩ সালের ২-৪ জানুয়ারি বাবরি মসজিদ পুনঃনির্মাণের উদ্দেশে ঢাকা থেকে যশোর বেনাপোল হয়ে অযোধ্যা অভিমুখে লংমার্চে নেতৃত্ব দেন। উক্ত লংমার্চে পাঁচ লক্ষাধিক লোক স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। শাইখুল হাদীস রহ. এর সেই লংমার্চ মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসিত হয়।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, শাইখুল হাদীস শুধু এদেশের ধর্মীয় অঙ্গনই নয়, মূল ধারার রাজনীতিতে ছিলেন ব্যাপক পরিচিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। ১৯৯৯ সনে তৎকালীন বিরোধীদল বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন শাইখুল হাদীস রহ.। এবং ঐক্যবদ্ধ নিবার্চন করে ক্ষমতায় এসেছিল চারদলীয় জোট সরকার। ক্ষমতার অন্যতম অংশীদার ছিল শাইখুল হাদীস রহ.-এর নেতৃত্বাধীন ইসলামি ঐক্যজোট।

বর্তমান সরকার কওমি মাদরাসা শিক্ষার যে সনদ প্রদান করেছে এই স্বীকৃতি আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন শাইখুল হাদীস রহ.। ২০০৬ এর ২৩ ডিসেম্বর কওমি সনদের স্বীকৃতিসহ ইসলামি আদর্শিক পাঁচ দফার ভিত্তিতে শাইখুল হাদীসের সাথে জোট করেছিল বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আল্লামা আজিজুল হক এর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাথে এক নির্বাচনী সমঝোতার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল শাইখুল হাদীস এর বাসভবনে এসে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।

আল্লামা আজিজুল হক রহ. আমৃত্য বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস করেছেন। দলটি বাংলাদেশ সরকারের সকল নিয়ম কানুন মেনে নির্বাচন কমিশনের একটি নিবন্ধিত ইসলামি দল। যার নিবন্ধন নম্বর ৩৩।

রাষ্ট্রীয়, আন্তর্জাতিক কিংবা অন্য যে কোনো জায়গা থেকে আজ অবধি আল্লামা আজিজুল হক রহ. কিংবা তাঁর দলের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার ন্যূনতম কোনো অভিযোগ ওঠেনি। এমন একজন জাতীয় নেতাকে হুজির প্রতিষ্ঠাতা পরিচয় দিয়ে গত ২৬ নভেম্বর সংবাদ প্রচার করে যমুনা টিভি।

প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা, শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের মত প্রয়াত একজন শ্রেষ্ঠ আলেম ও জাতীয় নেতাকে হুজির প্রতিষ্ঠাতা আখ্যায়িত করে যমুনা টিভির এহেন প্রতিবেদন প্রচার চরম বিভ্রান্তিমূলক ও ধৃষ্টতার শামিল। বাংলাদেশের ইসলামি শিক্ষা ও রাজনীতির এই বাতিঘরকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা কেবল ঘৃণ্যই নয় বরং জলজ্যান্ত ইতিহাসকে বিকৃত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা।

আল্লামা আজিজুল হকের বিরুদ্ধে যমুনা টিভির এহেন মনগড়া অপপ্রচার দেশবাসীর মনে তীব্র ক্ষোভ, ঘৃণা, নিন্দা ও প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে। দেশের সর্বস্তরের উলামায়ে কেরাম ও ইসলামপ্রিয় জনতা এহেন কর্মকান্ডকে ইসলাম ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে আঘাত বলে মনে করছে। এটা দেশে বিদ্যমান গণমাধ্যম আইন ও সম্প্রচার নীতিমালাসহ, প্রচলিত ফৌজদারি আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আলোকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সর্বজন শ্রদ্ধেয় শায়খুল হাদীসকে জঙ্গিনেতা আখ্যা দিয়ে মিথ্যা বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রচারের জন্য যমুনা টিভিকে অবশ্যই নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। প্রতিবেদক, নিউজরুম এডিটর, সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদকসহ এই মিথ্যা প্রতিবেদনের প্রচার ও সম্পাদনা কাজে সম্পৃক্ত দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে অনতিবিলম্বে যমুনা টিভির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। যারা এই মিথ্যাচারের সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। অন্যথায় এদেশে তাওহিদি জনতা এর সুমচিত জবাব দেবে।

শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. আমাদের সকলের মুরুব্বি। তার বণার্ঢ্য কর্ম জীবনের উপর এই আঘাত বরদাশত করা হবে না। যমুনা টিভি যদি তাদের কৃতকর্মের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা না চায়, সরকার যদি তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহন না করে তাহলে সর্বদলীয় ইসলামি নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে যমুনা টিভির বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে ইনশাআল্লাহ।

সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, মাওলানা ইসমাঈল নূরপুরী, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফি, মাওলানা নূরুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল হালিম পীর সাহেব মধুপুর, মাওলানা মাহফুজুল হক, ড. ঈসা শাহেদী, মাওলানা শফিকুদ্দীন, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মাওলানা সাখাওয়াত রাজি, মাওলানা মুসা বিন ইজহার, মাওলানা মুহিউদ্দীন ইকরাম, জনাব আবুল খায়ের প্রমুখ।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মাওলানা সাঈদ নূর, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা কুরবান আলী কাসেমী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ, মাওলানা এনামুল হক মুসা, মাওলানা রুহুল আমিন খানসহ অন্য উলামায়ে কেরাম।