বাবার রোগেই আক্রান্ত দুই ছেলে, অর্থাভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ডিসেম্বর ২২ ২০১৯, ০২:৩০

জন্ম থেকেই সাইদুর রহমানের ডান গালে একটি তিল ছিল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সেই তিলও বড় হতে থাকে। বর্তমানে সেই তিল এতটাই বড় হয়েছে, যার কারণে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সাইদুর রহমানের বয়স এখন ৩৬ বছর। তিনি দুই মেয়ে ও ২ ছেলের জনক। তার দুই ছেলেও একই রোগে আক্রান্ত। সাইদুর রহমানের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার বিকপাশা গ্রামে।

সাইদুর রহমান জানান, ছোট বেলায় ডান গালে (নাকের কাছে) একটি তিলের মতো দেখা দেয়। ধীরে ধীরে সেটিও বড় হতে থাকে। বাড়ির পাশের একটি স্কুলে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়াশুনা অবস্থায় বাবা আঃ গনি হাওলাদার মারা যান। অভাব-অনটনের সংসারে ৬ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় হওয়ায় পড়াশোনা ছেড়ে সংসারের হাল ধরতে হয়। কাজের ব্যস্ততায় কখনও চিকিৎসা করা হয়নি।

তিনি বলেন, বড় হওয়ার পর সেই তিল বড় আকার ধারণ করে পুরো গাল ছেয়ে যায় এবং ভারি হতে থাকে। ৭ বছর ধরে এ তিল নিয়ে অস্বাভাবিক যন্ত্রণায় ভুগছি। অভাবের সংসারে অনেক জায়গায় হোমিও চিকিৎসা করিয়েছি কিন্তু কোনো সুফল আসেনি।

nalcitry-said

বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখালে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সহজ পরিচিতি পিজি) প্লাস্টিক সার্জারি করানোর কথা বলেন। টাকার অভাবে সেখানে আর যাওয়া হয়নি।

সাইদুর রহমান বলেন, কাঠমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে। সামনে ঝুঁকে যখন কাজ করি তখন মুখ ভারি হয়ে যায়। অজু করতে গেলে তিলের স্থানে লাগলে রক্ত ঝড়তে শুরু করে। কোনো কিছু দিয়ে চেপে না ধরলে রক্ত ঝড়তেই থাকে।

হতাশা প্রকাশ করে তিনি জানান, বড় ছেলে ওয়াজ কুরুনী পার্শ্ববর্তী একটি নুরানী মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। জন্মের পর থেকে তার কোমরের নিচে একটি তিল ছিল। সেটিও বড় হয়ে হাটু পর্যন্ত লেপ্টে গেছে। ছোট ছেলে আব্দুল্লাহও একই মাদরাসায় পড়ে। তার ডান গালের নিচের দিক থেকে একটি জট (তিলের মতো) লক্ষ্য করছি এক বছর ধরে। সেটিও দিন দিন বড় হচ্ছে। অথচ চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই আমার।

নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাচ্চু জানান, বিকপাশা গ্রামের সাইদুর রহমান দরিদ্র পরিবারের সন্তান। যৌথ পরিবারে একমাত্র আয়কারী সে। সাইদুরের গালে বড় একটা কালো তিলের মতো আছে। সেটার সুচিকিৎসা করানো দরকার। না হলে ওই রোগ থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা থাকতে পারে।

এ ব্যাপারে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আবুয়াল হাসান জানান, এটা এক ধরনের চর্ম রোগ। এটাকে আমরা বলি অটোজম অ্যান্ড ডমিনাল ডিসিস। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গোটা গোটা জাগতে পারে। এ রোগটির নাম নিউরো ফাইবারমেটিস। এটা ২ ধরনের হতে পারে। একটা চামড়ার বাইরে আরেকটা ভেতরে। ভেতরেরটায় ঝুঁকি বেশি, কিন্তু বাইরেরটাতে ঝুঁকি কম হলেও রোগ তো রোগই। এধরনের রোগীর ক্ষেত্রে প্লাস্টিক সার্জারি সর্বোত্তম পন্থা।