আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জীর ইন্তেকালে আল্লামা বাবুনগরীর শোক

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জানুয়ারি ০৫ ২০২০, ২২:২৪

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর, হবিগঞ্জ জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া উমেদনগন মাদরাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস, জামেয়া রেঙ্গা সিলেটের শায়খুল হাদিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি, আল্লামা বদরুল আলম শায়খে রেঙ্গা  রহ. এর খলিফা শায়খুল হাদীস আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদরাসার সহযোগী পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।

৫ ই জানুয়ারী শনিবার সংবাদমাধ্যমে প্রেরিত এক শোকবার্তায় আল্লামা বাবুনগরী বলেন,আল্লামা তাফাজ্জল হক হবিগঞ্জী রহ.দেশের একজন শীর্ষ স্থানীয় আলেম ও বড় মুহাদ্দিস ছিলেন। ইলমে হাদীসে তাঁর দক্ষতা সর্ব মহলে প্রসিদ্ধ ছিলো ৷ তিনি মুহাদ্দিসে হবিগঞ্জী হিসেবে সর্বত্র পরিচিত ছিলেন। সিলেটবাসীর জন্য তিনি ছিলেন রত্নতুল্য ৷ তার ইন্তেকালে বাংলার ইলমাকাশের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র ঝরে পড়েছে। তাঁর ইন্তেকালে ইলমী অঙ্গনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা কভু পূরণ হবার নয়। ইতিহাস তার অমর কীর্তি চিরকাল স্মরণ রাখবে।আমি তাঁর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত।

স্মৃতিচারণ করে আল্লামা বাবুনগরী বলেন,আল্লামা তাফাজ্জল হক রহ.আমার আব্বাজান রহ. মিশকাত শরীফের বিশ্ববিখ্যাত ব্যখ্যাগ্রন্থ “তানজিমুল আশতাত”রচয়িতা আল্লামা আবুল হাসান রহ.এর হাতে গড়া সুযোগ্য শাগরেদ ছিলেন।তাঁর সঙ্গে আমার ছিলো বেশ সখ্যতা ছিলো।দেশের বড় বড় বিভিন্ন ইসলামি মহা-সম্মেলনে একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। সাক্ষাতকালে ইলমি-আমলি, মুসলিম উম্মাহর কল্যাণময় বিষয়াবলী এবং বিশ্ব মুসলিমের নাজুক পরিস্থিতি থেকে উত্তোরনের পথ ও পন্থা নিয়ে আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হতো।

হবিগঞ্জী রহ. এর দাওয়াতে তাঁর
সাহেবযাদা আমার স্নেহধন্য ছাত্র মাওলানা মামনুনুল হকের মাধ্যমে আমি একাধিকবার উমেদনগর মাদরাসায় গিয়েছি।তিনি বারবার আমাকে তাঁর মাদরাসায় যাওয়ার জন্য দাওয়াত করলেও দরস-তাদরীস ও দাওয়াতি সফর সহ বিভিন্ন ব্যস্ততার দরূন যাওয়ার বেশি ফুরসত হতো না।

স্মৃতিচারণ করে আল্লামা বাবুনগরী আরো বলেন,যুবক বয়সে একবার আমি চট্টগ্রাম জিরি মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে বয়ান করছিতেছিলাম।তিনি দীর্ঘ সময় আলোচনা শুনে খুশী প্রকাশ করে আমাকে বলেছিলেন,সাজিয়েগুছিয়ে
কুরআন-সুন্নাহর আলোকে আপনি যেই তথ্য সমৃদ্ধ চমৎকার বয়ান পেশ করেছেন।আমাদের সিলেটে আপনার এমন বয়ানের খুব বেশী প্রয়োজন।

২০১৩ সালের হেফাজতে ইসলামের নাস্তিক মুরতাদ বিরোধী আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়ার পর অসুস্থ অবস্থায় যখন রাজধানীর বারডেম হসপিটালে আইসিউতে চিকিৎসাধীন ছিলাম তখন তিনি আমাকে দেখতে গিয়েছিলেন।এবং সাহস যুগিয়ে হযরত খোবাইব রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহুর একটি শে’র কবিতা শুনিয়ে বলেছিলেন,দ্বীন ও ইসলামের জন্য সকল ত্যাগ আর বিসর্জন একমাত্র আল্লাহ তায়া’লার জন্য। আল্লাহ তায়া’লা চাইলে এর বিনিময় হিসেবে শরীরের সকল জোড়ায় জোড়ায় বরকত দিতে পারেন।

তিনি দারুল উলুম হাটহাজারীর কৃতি শিক্ষার্থী ও বিশিষ্ট ফাযেল ছিলেন এবং তিনি ছিলেন দারুল উলুম হাটহাজারীর একনিষ্ঠ কল্যাণকামী।তাঁর ইন্তেকালে দেশবাসী একজন নিবেদিতপ্রাণ দ্বীনের খাদেমকে হারাল।

আল্লামা বাবুনগরী আরো বলেন,আল্লামা তাফাজ্জল হক রহ.হবিগঞ্জ উমেদনগর মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মোহতামীমের গুরু দায়িত্ব পালন সহ আমরণ হাদীসে রাসুলের গুরু দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন।

পুরো জীবন মুসলিম উম্মাহর ঈমান-আকিদা রক্ষায় ওয়াজ-নসিহত সহ দ্বীনের বহুমুখী খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন।

আল্লামা তাফাজ্জল হক হবিগঞ্জী রহ. ইসলামী রাজনীতির অন্যতম সিপাহসালার। আমরণ তিনি কোন বাতিলের সাথে আপোষ করেননি।সমস্ত বাতিল ও তাগুতের বিরুদ্ধে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও কঠোর ভূমিকা ইতিহাসের পাতায় সোনালী অক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।

মৃত্যুকালে তিনি অসংখ্য ভক্তবৃন্দ ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর সন্তানরাও সুযোগ্য আলেম হয়ে দ্বীন ও ইসলামের খেদমত করে যাচ্ছেন।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মরহুমের শোক সন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, মহান প্রভুর দরবারে আমি দুআ করি, আল্লাহ তাআলা তাঁর সকল দ্বীনি খেদমতকে কবুল করুন এবং ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন, আমিন।