ভণ্ড তাকফিরি জামাআতের মূল টার্গেট দ্বীনের ইসনাদ কেটে দেয়া: আল্লামা বাবুনগরী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ১১ ২০১৯, ২৩:১৮

আবির আবরার:
ইসলামের পবিত্র বিধান জিহাদের নামে সন্ত্রাস পরিচালনা করা ভণ্ড দল বা বাতিল গোষ্ঠি তাকফিরি জামাতের মুখোশ উম্মোচন করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর সহকারি পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী এক নাতিদীর্ঘ বক্তব্য দিয়েছেন।

এতে তিনি ‘ওলামায়ে দেওবন্দ বা ওলামায়ে হাটহাজারী জিহাদ করেন না বলে যে দাবি কেউ কেউ করে থাকেন’ তাদের উদ্দেশ্য করে বিষয়টি পরিস্কার করে ছাত্রদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি এ বক্তব্য দেন।

বক্তব্যে আল্লামা বাবুনগরী বলেন, ইসলামের শুরুকাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি যুগেই কিছু লোক ধরার বুক থেকে আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্ম দীনে ইসলামের নাম মুছে দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল এবং আছে। কখনো প্রকাশ্যে, কখনো গোপনে। কখনো বীরবেশে তো কখনো ছদ্মবেশে। কখনো নাঙ্গা তলোয়ার মাথার উপর রেখে, কখনো গোপনে পিঠে ছুরি চালিয়ে। বলা বাহুল্য, শুরু থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত ইসলামের যতটা ক্ষতি কাফের-বেঈমানেরা করেছে তার চে বহুগুণ বেশি করেছে স্বয়ং মুসলমানরা। সেই ধারাবাহিকতা আজো থেমে নেই। আজও মুসলমানদের অনেক ব্যক্তি কিংবা দল নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থে হরদম ইসলামের পিঠে ছুরি চালিয়েই যাচ্ছে। তাদেরই অন্যতম এক দল হলো, ফিরকায়ে তাকফীরিয়্যাহ বা তাকফীরি জামাত।

গত মঙ্গলবার যোহরের নামাজের পর দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার বায়তুল করীম মসজিদে সকল ছাত্রদের সামনে ‘ফেরকায়ে তাকফীরিয়্যার’ মুখোশ উন্মোচন করে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আরও বলেন, ধর্মপ্রাণ এই জাতির ধর্মীয় মারকাজ কওমী মাদরাসাকে কলুষিত, কওমীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার হীন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এই নতুন দলের আবির্ভাব। সাথে সাথে রসূলের মেহমান কওমীর ছাত্রদের তাদের কর্মকাণ্ড থেকে সতর্কও করেন আল্লামা বাবুনগরী।

তিনি বলেন, এই তাকফিরি জামাআতের মূল টার্গেট হচ্ছে, দ্বীনের ইসনাদকে কেটে দেওয়া। আকাবিরে-আসলাফের উপর থেকে তাদের উত্তরসূরীদের আস্থা উঠিয়ে ফেলা, উস্তাদের উপর থেকে তলাবাদের আস্থা নষ্ট করা, হক্কানী আলেম ওলামা কেরামের উপর থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আস্থা সরিয়ে ফেলা। উস্তাদের উপর ছাত্রদের আস্থা, হক্কানী ওলামাদের উপর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আস্থা এবং আকাবিরে আসলাফের উপর আমাদের আস্থা উঠে গেলে ইসলাম আর ইসলাম থাকবে না। ইসলাম বিকৃত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।

আল্লামা বাবুনগরী বলেন, এই তাকফীরি জামাআত জিহাদের অপব্যাখ্যা করে মাদরাসা ছাত্রসহ সর্বসাধারণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তারা ভার্সিটিতে হল দখল করার জন্য, নিজেদের দল ভারী করার উদ্দেশ্য মারামারি কাটাকাটিকেও জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ বলে চালিয়ে দিতে চায়। আল্লাহ না করুক হয়ত তারা আগামীতে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়াকেও জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ বলে চালিয়ে দিবে।

তারা বলে, ওলামায়ে দেওবন্দ, ওলামায়ে হাটহাজারী জিহাদ করে না। জিহাদে বিশ্বাসী নয়। তারা জিহাদের বিরোধিতা করে। আল্লামা বাবুনগরী তাদের উত্তরে বলেন, আমাদের আকাবীরে দেওবন্দ জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন, শাহাদাতের অনেক দৃষ্টান্ত আছে। কিন্তু আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যারা এসমস্ত কথাবার্তা বলে ছাত্রসমাজ ও সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত তারাই মূলত জিহাদ অস্বীকারকারী এবং সন্ত্রাসের সাথে পবিত্র বিধান জিহাদকে গুলিয়ে ফেলার হীন চেষ্টায় লিপ্ত। তারা ইসলামের কেউ নয় বরং তারা কওমী ও ইসলামের শত্রু।

আল্লামা বাবুনগরী আরো বলেন, জিহাদ বিস-সাইফ যেমন আছে, জিহাদ বিল-কলমও আছে, জিহাদ বিল-লিসানও আছে এবং সবচেয়ে বড় জিহাদ হচ্ছে নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করা। (তখন আল্লামা বাবুনগরী তাহাজ্জুদের উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং কতজন ছাত্র আজকে তাহাজ্জুদ পড়েছে সেটাও দেখেন।) কলমের ও লিসানের জিহাদ করতে হবে। এবং নফসের বিরুদ্ধেও জিহাদ করতে হবে। আমরা এই দুই প্রকারের জিহাদই করতেছি।

তলোয়ারের জিহাদের জন্য অনেকগুলো শর্তও আছে। রাষ্ট্রদ্রোহী, দেশদ্রোহী, নাস্তিক-মুরতাদ, আল্লাহ-আল্লাহর রাসূলের দুশমনদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করাও জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। তবে সেরকম পরিবেশ ও শক্তিমত্তাও থাকতে হবে।

আল্লামা বাবুনগরী ছাত্রদের উদ্দেশ্য বলেন, আপনারা এই তাকফীরি জামাআতের ফাঁদে পা ফেলবেন না। নিজেও ধ্বংস হবেন না এবং অপরকেও ধ্বংস করবেন না। তিনি অজ্ঞাত ব্যক্তির (যোবায়ের আহমদ) বই, লিখা, পত্রিকাসহ সবকিছু বর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ছাত্রদেরকে মওদূদীর বই পুস্তকও পড়া থেকে নিষেধ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি মওদূদীর অনেক কিতাবাদী অধ্যয়ন করেছি। করে যা বুঝলাম, কোন ব্যক্তি যদি এই তার লিখিত বইপুস্তক পড়ে তাহলে মজমূ’য়ীভাবে (সামগ্রিকভাবে) সে সাহাবা ও সলফ-বিদ্ধেষী হয়ে উঠবে।’ পাশাপাশি ছাত্রদের আরও বলেন, কেউ যদি সেই ভয়ংকর ফেরকার দালাল হিসেবে ধরা পড়ে কঠিন শাস্তিসহ বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে।

আল্লামা বাবুনগরীর বয়ানের পর জামিয়ার সিনিয়র শিক্ষক মুফতী জসীমুদ্দীন, মাওলানা ফোরকান আহমদ, মাওলানা মাহবুবুল আলম প্রমুখ সিনিয়র শিক্ষকগণ উক্ত মজলিসে এই ফিরকার ব্যাপারে সাধারণ জনতার সাথে সাথে বিশেষ করে কওমী ছাত্রসমাজকে হুঁশিয়ার করেন।