৯ বছর পর মায়ের বুকে মেয়ে!

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

নভেম্বর ০১ ২০১৯, ১৫:১৩

ঢাকা অফিস: আখাউড়া সীমান্তের নো-ম্যান্সল্যান্ড।বুধবার(৩০ অক্টোবর)সকাল থেকেই মেয়ের জন্য অপেক্ষা মা সাফিয়ার।সূর্য যখন ঠিক মাথার উপরে, ঠিক তখনই এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। নোম্যান্সল্যান্ডের সাদা দাগের এপাড়ে দাঁড়িয়ে মা ও বড় বোন কবিতা খানম। তাদের দেখেই সীমান্ত রেখা ভুলে দৌঁড়ে জড়িয়ে ধরে মায়ের বুকে মাথা রাখে বিথী।দীর্ঘদিনের জমে থাকা মেয়ের চোখের জলে ভাসে মায়ের বুক।

মনিকা বিথী মাকে জড়িয়ে ধরে গালে মুখে কপালে চুম্বন করেন।চোখের জল সংবরণ করতে পারেননি মা সাফিয়াও। মা-মেয়ের আদরের কান্নায় উপস্থিত সবার চোখ ভিজে যায়।এ যেন মহামিলন!
৯ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে মনিরা খানম বিথীকে (৩৫) ফিরে পেয়ে এমন আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও ত্রিপুরার আগরতলা স্থলবন্দর নোম্যান্সল্যান্ডে।

বিথীর মা সাফিয়া বেগম (৬০) বলেন, ২০১০ সালে ভারসাম্যহীন মনিরা খানম বিথী নিখোঁজ হন। অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পাওয়া যায়নি। তারপরও বিথীর আশা ছাড়েননি তার পরিবার। মাঝেমধ্যে নানা স্থানে খুঁজেছেন তাকে। অবশেষে ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন ও রাজ্যের মডার্ন সাইক্রেটিক হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় পরিবার ফিরে পেলেন মানসিক ভারসাম্যহীন মনিরা খানম বিথী।

বুধবার দুপুর ১২ টা ০৯ মিনিট। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর চেকপোস্ট সীমান্ত পথে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার কীরিটি চাকমা ও ত্রিপুরা রাজ্যের মডার্ন সাইক্রেটিক হসপিটালের চিকিৎসক ডা. জ্যোতিময় ঘোষ বাংলাদেশের সরাইল ২৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কবিরের কাছে বিথীকে হস্তান্তর করেন। তিনি নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার পাচুয়া গ্রামের মৃত হিমায়েত খন্দকারের মেয়ে।

ত্রিপুরা রাজ্যের বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার কীরিটি চাকমা​ বলেন, সে ২০১০ সালে তার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। তবে ২০১২ সালের ১২ মার্চ
ত্রিপুরার ধলাই জেলার সালেমা থানা পুলিশ তাকে স্থানীয় একটি বাজারে মানসিক ভারসাম্যহীন পায়। পরে তাকে ভারতের আদালতে সোপর্দ করে। বিজ্ঞ আদালত মানসিকভাবে অসুস্থ বিথীকে চিকিৎসার জন্য ত্রিপুরা
রাজ্যের মডার্ন সাইক্রেটিক হসপিটালে (মানসিক হাসপাতাল) ভর্তির নির্দেশ দেন। সেখানে সে ডা. জ্যোতিময় ঘোষের তত্ত্বাবধানে এতদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন।

ত্রিপুরার রাজ্যের মডার্ন সাইক্রেটিক হসপিটালে ডা. জ্যোতিময় ঘোষ​ বলেন, যখন তাকে হাসপাতালে আনা হয় তখন তার অবস্থা খুবই অসুস্থ ছিল। চিকিৎসা ও সেবা দেয়ার পর সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠে। এখন সে অনেকটা ভালো। বিথী তার মা-বোন পরিবারকে চিনতে পেরেছে। এখানেই আমাদের স্বার্থকতা। তবে তার জন্য আমাদের অনেক মায়া হচ্ছে।

বিথীর না সাফিয়া বেগম বলেন, তার হারানো মেয়েকে বুকে ফিরে পেতে যারা বিভিন্নভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন সবার কাছে তিনি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।

আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তের নো-ম্যান্সল্যান্ডে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্যের বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি মো. জাকির হোসেন ভূঁইয়া, সেকেন্ড সেক্রেটারি এসএম আসাদুজ্জামান, হাই কমিশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান, আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনা, আখাউড়া থানার ওসি রসুল আহম্মদ নিজামী, ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.হামিদুর রহমান প্রমুখ।

খোরশেদ আলম বিপ্লব।
একুশে জার্নাল
ঢাকা বাংলাদেশ।