৫ বছরের মাথায় আইএসের ‘খেলাফত’ বিলুপ্ত

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ২৪ ২০১৯, ০৫:৩৮

আবির আবরার: ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ‘খেলাফত’ শেষ হয়ে গেছে বলে ঘোষণা দিয়েছে সিরিয়ায় কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)। আইএসের সর্বশেষ ঘাঁটি ছিল সিরিয়ার বাগুজ এলাকায়। এরই মধ্যে তা দখলমুক্ত করে সেখানে বিজয় পতাকা উত্তোলন করেছে এসডিএফ।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, আইএসের খেলাফতের সমাপ্তি টানার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই উল্লাসে মেতে উঠেছে সিরিয়া। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে উদ্‌যাপন।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, খেলাফত শেষ হলেও সহিংসতার আশঙ্কা শেষ হয়ে যায়নি। এখনও আইএস বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি। কারণ, আইএস ছড়িয়ে পড়েছে নাইজেরিয়া থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত। আর সিরিয়াতেও একেবারে নিকেশ হয়নি আইএস, বিক্ষিপ্তভাবে টিকে আছে এর অস্তিত্ব।

প্রায় ৫ বছর ধরে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলেছে সিরিয়ায়। অবশেষে সেখানের আইএস উচ্ছেদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলো। গতকাল রাতেই অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছিল যে, সিরিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে আইএস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন।

কিন্তু এর পরপরই এসডিএফ জানায়, যুদ্ধ নাকি তখনও চলছে! আজ শনিবার এসডিএফ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে যে, আইএসের খেলাফত শেষ।

চলতি মার্চ মাসের শুরু থেকে এসডিএফ জোট আইএসের ওপর চূড়ান্ত আক্রমণ শুরু করে। এ সময় সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলের বাগুজে আইএসের শক্ত ঘাঁটি অবশিষ্ট ছিল। ওই এলাকায় আইএসের পাশাপাশি অনেক বেসামরিক মানুষও ছিল। এ কারণে হামলার মাত্রা কিছুটা কমাতে হয়েছিল।

আইএসের বিরুদ্ধে বিজয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে এসডিএফের মিডিয়া উইংয়ের প্রধান মুস্তাফা বালি বলেছেন, ‘আইএসের ১০০ ভাগ পরাজয় হয়েছে।’ এসডিএফের জেনারেল কোবানি বলেছেন, আইএসের গোপন দলগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে। তিনি বলছেন, এই গোপন দলগুলো মধ্যপ্রাচ্য ও পুরো বিশ্বের জন্য বিশাল হুমকি।

এক সময় সিরিয়া ও ইরাকের ৮৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল আইএস। বাগুজের লড়াইয়ে পরাজিত হওয়ার পর অবশিষ্ট শেষ এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারালো তারা। কিন্তু এরপরও আইএসকে বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কারণ সামরিকভাবে পরাজিত হলেও সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের উপস্থিতি বজায় আছে এবং নাইজেরিয়া, ইয়েমন, আফগানিস্তান ও ফিলিপিন্সে তাদের আনুগত্য স্বীকার করা গোষ্ঠীগুলো তৎপর রয়ে গেছে।
মার্চের শুরুর দিকে কুর্দি নেতৃত্বাধীন এসডিএফ জোট আইএসের বিরুদ্ধে তাদের চূড়ান্ত আক্রমণ শুরু করেছিল। তখন পূর্ব সিরিয়ার বাগুজ গ্রামে আইএসের অবশিষ্ট যোদ্ধারা অবস্থান নিয়েছিল।

কিন্তু অভিযান শুরু করার পর বোঝা যায় অনেক বেসামরিক লোক বাগুজে রয়ে গেছেন। এতে আক্রমণের গতি মন্থর হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তাদের সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে আক্রমণ বন্ধ করে এসডিএফ।

তখন বিদেশি নাগরিকসহ কয়েক হাজার নারী ও শিশু বাঘুজ ছেড়ে বের হয়ে আসে। এসডিএফ পরিচালিত উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেয় তারা। এ সময় আইএসের অনেক যোদ্ধাও বাগুজ ত্যাগ করে।

কিন্তু যারা রয়ে যায় তারা তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা আত্মঘাতী হামলা ও গাড়ি বোমা হামলা চালিয়ে এসডিএফের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ রক্ষা আর সম্ভব হয়নি।

বিজয়ের দিনে টুইটে বালি বলেছেন, “এই অনন্য দিনটিতে আমরা হাজারো শহীদদের স্মরণ করছি যাদের প্রচেষ্টায় এই বিজয় সম্ভব হয়েছে।”