৪ দলীয় জোট সরকারের কাছে প্রত্যাশা ছিল অনেক, কিন্তু…

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ২০ ২০১৯, ১৪:১৪

কোনো সরকার যখন ইসলামপন্থীদের ভোটে ক্ষমতায় যায়, তখন তাদের প্রতি তাওহিদী জনতার প্রত্যাশাটা একটু বেশিই থাকে। ইসলামী ঐক্যজোট থেকে নাকি একজনকে মন্ত্রীত্ব দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঐক্যজোট ভাগ হওয়ায় আর একজনকেও মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়নি। ভাগ হয়ে যাওয়ায় ১ জনের স্থলে ২ জনকে দুজনকেই যদি তিনি মন্ত্রিত্ব দিতেন, কী সমস্যা হয়ে যেত? অবিসংবাদিত ধর্মীয় নেতা শাইখুল হাদিস আল্লাম আজিজুল হক ও মুফতি আমীনী (রহ.) কি মন্ত্রিত্বের যোগ্য ছিলেন না? এদেশে গণবিচ্ছিন্ন ইনু মেননরা মন্ত্রিত্বের স্বাদ নিলেন তখন যদি বিভক্ত ঐক্যজোটের দুজন নেতাকেই মন্ত্রিত্ব দেওয়া হতো তাহলে কী ক্ষতি হয়ে যেত তাদের? দেশের দুজন শীর্ষ আলেমকে মন্ত্রী বানাবার সুযোগ ছিল সে সুযোগ তিনি গ্রহণ করেননি। কাজে লাগাননি। এটা তার জন্য আফসোসের বিষয় নয় কি?

অবিসংবাদিত ধর্মীয় নেতা শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.) এর জেল খাটা ও ফতোয়া বিরোধী আন্দোলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাতজন শহীদ হওয়ার পর ততকালীন সরকারের প্রতি গণমানুষের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল তার ফলেই তো জোট ক্ষমতায় এসেছিল। মন্ত্রিত্ব পাননি শাইখুল হাদিস। কিন্তু যে ফতোয়াবিরোধী রায়ের ফলে সৃষ্ট জনক্ষোভের ফসল ছিল ৪ দলীয় জোট সরকার হাইকোর্টর সে ফতোয়াবিরোধী রায় কি তারা বাতিল করতে পেরেছিলেন? কেন পারেননি? এটা কি ব্যর্থতা ছিল না?

কওমি সনদের স্বীকৃতির জন্য সেই শাইখুল হাদিসের নেতৃত্বে, মুক্তাঙ্গণে অবস্থান করে করেছিলেন হাজার হাজার আলেম। প্রিয় উস্তাযের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ছাত্র ফজলুল করীম (রহ.)। ঘোষণা করা হয়েছিল স্বীকৃতির। তবে এমনই শেষ সময়ে যে, তা বাস্তাবায়ন করে যেতে পারেননি।

ইসলামী মূল্যবোধের সে সরকার একটি আলিয়া মাদ্রাসাও সরকারি করেনি। অবশ্য বর্তমান সরকারও করেনি। এজন্য হয়তো তারাও একদিন আফসোস করবে।

রেজিস্টার্ড প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের সুবিধা দিয়েছিলেন সে ৪ দলীয় জোট সরকার। কিন্তু আলিয়া ধারার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের কি অপরাধ ছিল ৪দলীয় জোট সরকারের কাছে? তারা কি কিছু করেছিলেন? ইবতাদায়ি শিক্ষকদের জন্য ৪দলীয় জোট সরকার যদি তাদের আমলে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী শিক্ষকদের প্রাথমিকের সমান স্কেল দিয়ে সবগুলো মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্ত করতেন তাহলে আলিয়া মাদ্রাসা যে বর্তমানের শিক্ষার্থী সঙ্কটে পড়েছে তা হতো না। তাওহিদী জনতার ভোটে নির্বাচিত সরকারের কাছে জনগণের কি এতটুকু প্রত্যাশা ছিল না যে যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি শিক্ষকদের জন্য তারা কিছু করবেন?

হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের স্কেল ছিল আলিম (আলিয়া) মাদ্রাসার অধ্যক্ষের। এ বৈষম্য রোধের কাজটুকু কি তারা করেছিলেন। ৫ বছর ‘ইসলামী মূল্যবোধের সরকার’ ক্ষমতায় থাকার পরও কেন এ কাজটুকু এ সরকারকে করতে হলো?

হাইস্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক কামিল পাস হলে বিএড স্কেল পান, কিন্তু দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভিরা কামিল পাস হলেও বিএড স্কেল পান না। এ বৈষম্য দূর করার দায়িত্ব কি ছিল না সে সরকারের?

কামিলকে মাস্টার্সের স্বীকৃতি প্রদান আর কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির ঘোষণা ও গ্যাজেট (বাস্তবায়ন হয়নি) ছাড়া ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষার জন্য খুব কিছু করেছিলেন এমন চোখে পড়ে না। আমি মনে করি, গতকালের বক্তব্যে আল্লামা আহমাদ শফী যথার্থই বলেছেন। যদিও হুজুরের এভাবে বলাটা আমার কাছে কেমন লেগেছে। সরকার আমাদের পাওনা দিয়েছে। এটা তাদের কর্তব্য ছিল। মৌলিক অনেক কাজ তারা করেনি।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০১০ সালের ২০ জানুয়ারি এক সমাবেশে ঘোষণা করেছিলেন প্রতিটি প্রাইমারি স্কুলে ১জন করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রাথমিকে বিজ্ঞান থেকে ২০ শতাংশ শিক্ষক নিয়োগ এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতির শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

প্রাইমারি স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগর ঘোষণার প্রায় ৯ বছর হয়ে গেল। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পরও যদি এ সরকার এ কাজটি করে যেতে না পারে তাহলে সেই ৪ দলীয় জোট সরকারে মতো হয়তো এদেরও পরবর্তীতে আফসোস করতে হবে।

এ সরকার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী শিক্ষকদের প্রাথমিকের শিক্ষকদের সমমর্যাদা ঘোষণা করেছে। সে স্কেল প্রদানের ঘোষণাও করেছে, কিন্তু তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। যদি এরাও এ কাজটি করে যেতে না পারে তাহলে ৪ দলীয় জোট সরকারের মতো এদেরকেও পরবর্তীতে আফসোস করতে হবে।

৬০০ স্কুল-কলেজ সরকারি করা হয়েছে, একটি মাদ্রাসাও এ সরকারের আমলে সরকারি করা হয়নি। বাকি সময়ে এ বৈষম্য দূর না করলে এটিও বর্তমান সরকারের জন্য আফসোসের বিষয়।

‌লি‌খেছেন- মাওলানা যুবাইর আহমদ
আলেম ‌, কলাম লেখক ও আলোচক