হলুদ সাংবাদিকতা যাদুঘরে, এখন পুলিশ ঘুষ খেলেও গোপনে খায় -ডিএমপি কমিশনার

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ২৭ ২০১৯, ১৩:২৮

হলুদ সাংবাদিকতা যাদুঘরে চলে গেছে। এখন পুলিশ এখন ঘুষ খেলেও তা গোপনে খায় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

রোববার দুপুরে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্র্যাব নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, আগে পুলিশ চাঁদাবাজি করত। সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করত। ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে পেন্ডিং মামলায় চালান দিত। প্রকাশ্যে ঘুষ নিত। পুলিশের অপকর্মের সঙ্গে কোনো সাংবাদিকেরও যোগসাজস ছিল। এখন এসব বন্ধ হয়েছে।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, গত ছয় মাসে ডিএমপিতে কোনো ভুয়া মামলা হয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ ভুয়া মামলায় আসামি হয়ে থাকলে তাদের রিলিজ করে দেয়া হবে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, অতীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে তুচ্ছ ঘটনায় পুলিশের মনমালিন্য ঘটনা ঘটলেও এখন এগুলো শুধুই অতীত। এখনকার সম্পর্ক অনেক চমৎকার। বর্তমানে সাংবাদিকতা পেশায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। নবীণ, কর্মঠ ও শিক্ষিত তরুণরা সাংবাদিকতা পেশাকে বেছে নিয়েছেন। সব অবস্থায় সাংবাদিকদের দেশ ও জাতির সার্থে কাজ করতে হবে। দেশে অনেক আন্তর্জাতিক মানের ভালো সাংবাদিক রয়েছে। কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা সত্য লিখতে পারে না। এ থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে।

পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, হাতে ক্ষমতা আছে বলেই যাকে তাকে ধরে চালান দেয়া যাবে না। এ ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ২০১৫ সালে আমি যখন কমিশনার হওয়ার পর দেখি প্রায়ই সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের ভুল বুঝা-বুঝি হয়। আমার অফিসের সামনে, ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের সামনে সাংবাদিকদের মানববন্ধন করতে হয়েছে। কিন্তু এখন এসব অতীত। উভয়পক্ষের মনোভাব পরিবর্তন হওয়ার কারণেই এখন আর অনাকাক্ষিত ঘটনা ঘটছে না।

সেবার মানসিকতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করতে হবে উল্লেখ করে বলেন, পুলিশের মনোভাব পরিবর্তন করতে আমি নিয়মিত কাউন্সিলিং করি। পুলিশ সদস্যদের বল প্রয়োগের চেষ্টা এবং খবরদারীর মনোভাব ত্যাগ করতে হবে।

ট্রাফিক সদস্যদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঘটনাস্থলে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে তাদের সঙ্গে বিরোধে জড়াবেন না। তাদের সঙ্গে বিরোধে জড়ালে উল্টো আসামি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ঘটনাটি ভিডিও করে নিয়ে আসবেন। পরে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। আপনাদের সঙ্গে বডিওর্ন ক্যামেরা আছে। তাই ভিডিও করতে সমস্যা নেই। পুলিশ ভুল করলে মানুষ তা বলবেই। এ জন্য ক্ষুব্ধ না হয়ে নিজেদের সংশোধন হতে হবে। পুলিশ জেগে থাকে বলেই মানুষ ঘুমাতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

পুলিশ কমিশনার বলেন, ২০১৬ সালে উল্টো পথে গাড়ি চলাচলে মহোৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল। এ সমস্যা সমাধানে আগে আমি ক্যাব নেতাদের ডাকি। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করায় এখন পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হয়েছে। এখন ৭০-৮০ ভাগ লোক ট্রাফিক আইন মেনে চলে।

তিনি বলেন, বিদেশে মানুষ ট্রাফিক আইন মেনে বুঝায় যে, তারা কত ভদ্র। আর এদেশে আইন না মেনে বুঝায় যে, তারা কত বড় মাস্তান।

সন্ত্রাস, মাদক এবং জন হয়রানি বন্ধে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, গাড়ি রিকুইজিশন করা, ৫৪ ধারায় গ্রেফতার এবং পেন্ডিং মামলায় আসামি করার কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতো। তাই ওইসব বন্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশকে অমিত সম্ভাবনার দেশ উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, এই দেশের পাসপোর্ট হবে সবচেয়ে দামি পাসপোর্ট।

তিনি বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেক শঙ্কা ছিল। কিন্তু জনগণ সন্ত্রাস নৈরাজ্য চায়নি বলেই তেমন কোনো অনাকাক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।