হবিগঞ্জে সাংবাদিককে পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের অভিযোগ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুন ০২ ২০১৮, ০৯:৩৭

হবিগঞ্জে মাদক বিক্রির অভিযোগ তুলে যুক্তরাজ্যভিত্তিক চ্যানেল এস এর সহকারি জেলা প্রতিনিধি ও নাট্যকর্মী সিরাজুল ইসলাম জীবনকে অমানবিক-নৃশংস নির্যাতন করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে জীবনের দোকানে ও থানা হাজতে চোখ বেঁধে জীবন ও তার ছোট ভাই আজিজুল ইসলাম হৃদয়কে লাঠিপেটা করা হয়। শুধু তাই নয়, নির্যাতনের একপর্যায়ে পায়ুপথে উত্তপ্ত গলিত মোম ঢেলে দেয় পুলিশ। এরপর শুক্রবার (০১ জুন) পুলিশ অসুস্থ অবস্থায় জীবনকে সদর হাসপাতালে নিয়ে পুলিশ সেখানে ‘গণপিটুনিতে আহত’ বলে চিকিৎসা করায়। শুক্রবার বিকেলে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন হবিগঞ্জ কোর্ট পুলিশের ওসি ওহিদুর রহমান।
শুক্রবার বিকেলে জীবনকে হবিগঞ্জ কোর্ট হাজতে দেখতে যান গণমাধ্যমকর্মীরা। সে সময় দেখা যায় জীবন ও তার ভাই দাঁড়াতে পারছেন না। শরীরের পেছনের অংশে অত্যধিক নির্যাতনের ফলে রক্ত জমাট হয়ে থাকতে দেখা গেছে। এ সময় সহকর্মীদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে জীবন। জানান তার ওপর চালানো অত্যাচারের বর্ণনা।
জীবন সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে ও আমার ভাইকে পুলিশ বাসায় বেধড়ক লাঠিপেটা করে চোখ বেঁধে থানায় নিয়ে আসে। হাজতে ঘন্টাব্যাপী একনাগাড়ে লাঠিপেটা করে পুলিশ। একপর্যায়ে আমার পায়ুপথে উত্তপ্ত গলানো মোম ঢেলে দেয়া হয়। তারপর নির্যাতনের কথা যদি কাউকে না জানানোর জন্য ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার হুমকি দেন সদর থানার এসআই রকিবুল হাসান।
জীবন আরো বলেন, হবিগঞ্জ খোয়াই নদীর অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে রিপোর্ট করায় তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে স্থানীয় বালুখেকোরা। এ কারণে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতরা পুলিশকে ইন্ধন দেয়। এরপর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইয়াছিনুল হকের নির্দেশে এসআই রকিবুল হাসান ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেয়ায় আমাকে ও আমার ভাইর উপর পুলিশ অকথ্য নির্যাতন করেছে।

হবিগঞ্জ মডেল থানার সামনে সাংবাদিকদের অবস্থান কর্মসূচি

সিরাজুল ইসলাম জীবনের ছোট বোন মোছাঃ পারভীন আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টায় ৪/৫ জন পুলিশ আমাদের দোকানে যায়। সেখানে পুলিশ ইয়াবা বিক্রির অভিযোগ তুলে। সে সময় আমার ভাই সাংবাদিক জীবন পুলিশের সাথে কথা বলতে চাইলে পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তারপর সদর থানা থেকে আরো দুই ভ্যান পুলিশ এনে আমার দুই ভাইকে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে বেধড়ক লাঠিপেটা করে। আমরা আটকাতে চাইলে পুলিশ আমাদেরও মারপিট করে। পুলিশ মারধোরের পাশাপাশি আমার ভাইয়ের কাছে থাকা ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। তারপর চোখ বেঁধে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে আমরা দেখতে গেলে পুলিশ আমাদের থানায় ঢুকতে দেয়নি। এসময় তিনি তিনি এ বর্বরোচিত নির্যাতনের বিচার দাবি করেন।

সাংবাদিক জীবনকে নির্যাতন ও তার কাছে চাঁদা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, এসআই রকিবুল হাসানের সাথে কথা বলেন।
সাংবাদিক জীবনের অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্ত নির্যাতনকারী এসআই রকিবুল হাসান।
তবে মাদক ব্যবসা তো নয়ই বরং মাদক বিক্রি, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক জীবন ছিলেন সোচ্চার, এই দাবি শহরের যশেরআব্দা-গরু বাজার এলাকার স্থানীয়দের। তারা জীবন ও তার ভাইয়ের ওপর মাদক বিক্রির অভিযোগকে মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেন।

এ ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। গতকাল শুক্রবার দুপুরে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে এনিয়ে প্রতিবাদ সভা ও পরে সদর থানার সামনে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ করে হবিগঞ্জে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা। এসময় বক্তারা বলেন, জীবন সিগারেটই খায় না। তার ওপর তোলা হয়েছে মিথ্যা মাদক বিক্রির অভিযোগ। তাই তারা অবিলম্বে সদর থানার ওসি ইয়াছিনুল হক ও এসআই রকিবুল হাসানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এসময় জেলা পুলিশের ইফতার এবং পুলিশের সংবাদ বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শনিবার (০২ জুন) বৃহত্তর কর্মসূচী নেয়ার কথা রয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা রফিক।