“সড়ক পরিবহণে চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখে সারাদেশে হাফ ভাড়া অসম্ভব”

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ০২ ২০২১, ২০:০২

ফাইজ তাইয়েব আহমেদ


সড়ক পরিবহণে চাঁদাবাজি অব্যহত রেখে সারাদেশে হাফ ভাড়া আসলে অসম্ভব। হাফ ভাড়া বাস্তবায়ন করতে হলে সবার আগে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। এর পরে আরো দুটা জিনিস আসবে। ক্ষতিপূরণ এবং ব্যবস্থাপনা।

হাফ ভাড়ার ক্ষতিপূরণের কত অংশ মূল ভাড়ায় যোগ হবে, কত অংশ চাঁদাবাজি থেকে রিকভারি হবে, আর কত অংশ সরকার ভর্তুকি দিবে? বিষয়টা হচ্ছে, হাফ ভাড়ার যে ক্ষতি, তার কম্পেন্সেসান দরকার। জনসংখ্যার একটা বড় অংশ তরুণ ও ছাত্র। আবার শহরে শহরে গণপরিবহণও সরকার করেনি, সব পরিবহণ বেসরকারি ও বাণিজ্যিক খাতে, ফলে সরকারের ভর্তুকির প্রশ্নও ন্যায্য। হাফ ভাড়ার ক্ষতিপূরণের একটা অংশ হয় ফুল ভাড়ায় গিয়ে মূল ভাড়া বাড়বে (ধরেন ২০%), না হয় চাঁদাবাজি কম বা বন্ধ হবে (এখান থেকে ৬০% রিকভার হবে), অথবা সরকার কর ও ভ্যাট থেকে কিছু ক্ষতিপূরণ দিবে (২০%)। অন্যথায় উই টক এবাউট রাবিশ!

যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসেবে সড়ক পরিবহণ খাত থেকে প্রতি মাসে ৩০০ কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি হয়। বছরে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়। এসব চাঁদা অতিরিক্ত ভাড়ার অংকে যাত্রীদের কাঁধেই চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন যেটা হচ্ছে সেটা অসম্পূর্ণ দাবির আন্দোলন মনে করি। জনাব ইলিয়াস কাঞ্চনের কাজ খুবই সম্মানিত এবং নিবেদিত, কিন্তু মূল জায়গা গুলোতেও হাত দিতে হবে। তবে উনি একা আর কত করবেন! মৌলিক দাবী সেট করা ছাত্রদের কাজও নয়। এটা বড়দের কাজ।

বিআরটিএ একটা মুর্খ, অপদার্থ, অযোগ্যদের সংস্থা। আধুনিক সড়ক পরিবহণ, লাইসেন্স প্রদান এবং গাড়ির ফিটনেস সম্পর্কে তাদের নূন্যতম কোন ধারণা নেই। আমি তাদের ফিটনেস চেকের কাজ, ড্রাইভিং পরিক্ষা বহুবার খুব কাছ থেকে দেখেছি। তারা ১০০ তে পাঁচ নম্বরও পাবার যোগ্য না, বিলিভ মি।

১। চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। ২। রাস্তা তৈরির ডজন ডজন কারিগরি ভুল শোধরাতে হবে। ৩। পরিবহণ শ্রমিকের কর্মঘন্টা ১৮ থেকে কমিয়ে সর্বোচ্চ ১২ ঘন্টায় নামাতে হবে, মানসম্পন্ন মজুরি ঠিক করতে হবে, বিষাক্ত ধোঁয়া ও ধুলীর রাস্তায় কাজ করার কারনে স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিপরীতে তাকে সুরক্ষা ও ভাতা দিতে হবে। ৪। বিআরটিএ’র ফিটনেস ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানে ঠিক করতে হবে। ৫। বিআরটিএ’র ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানে ঠিক করতে হবে। এই ৫ টা দাবী ই এনাফ। বাকি গুলা মৌলিক দাবী নয়, ওগুলা মানলেও সড়ক নিরাপত্তা আসবে না। ফালতু ও হাস্যকর পরিক্ষা ও ঘুষের প্রক্রিয়ায় লাইসেন্স থাকলেও, কিংবা গাড়ির নাম্বার প্লেটে টর্চ মেরে যে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া হয়, সেই লাইসেন্স ও সেই ফিটনেস সব চালকের ও সব গাড়ির থাকলেও সমস্যার কোনই সমাধান হবে না।

এগুলা করতে গেলে সবার আগে পরিবহণ চাঁদাবাজি এবং বিআরটিএ’র ঘুষ বন্ধ করতে হবে। সড়কের মূল ঘাতক মাফিয়াদের চাঁদাবাজি এবং বিআরটিএ’র দুর্নীতি।

ছাত্রদের ৯ দফা দাবীকে সম্মান করি, কিন্তু মূল জায়গায় হাত না দিলে, ২০১৮, ২০২১, ২০২৩ সড়ক আন্দোলন চলতে থাকবে। আর থেমে থেমে এবং নিয়মিত রাস্তায় খুন হবে আমাদের ছেলে-মেয়েরা, ভাই বোন, মা-বাবা, আত্মীয়-পরিজন, ভাই-বন্ধু এবং আমরা নিজেরাই।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ হেলথ ইনজুরি সার্ভে (বিএইচআইএস-২০১৬) মতে, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৬৪ জন। প্রতিবছর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ হাজার ১৬৬ জন নিহত হন, বছরে ক্ষতি অন্তত ৩৪ হাজার কোটি টাকা।

আমি ছাত্রদের আন্দোলনের ভাষা ও দাবী চেঞ্জ করতে বলি না। যারা রাস্তার আন্দোলন করেন, তাঁদের ভাষা নির্ধারণ করতে পারে না অন্যরা। তবে সাংবাদিক, সম্পাদক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং নাগরিক সমাজকে মূলে গিয়েই ভাবতে হবে। নাইলে সড়ক নিরাপদ হবে না। আবার রাষ্ট্র ও রাজনীতি নিরাপদ না করলে, সড়কও নিরাপদ হবে না। কারণ আমি যে পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করেছি, সেটা জবাবদিহি এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।