স্বাধীনতা যুদ্ধে আলেমসমাজ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ০১ ২০১৮, ১৭:১৪

হাবীব আনওয়ার: আজ ১৬ ডিসেম্বর! ৪৯ বছর আগে আজকের দিনটি এমন ছিল না।ছিল না আজকের মত এত আনন্দ -উল্লাস।এত সুন্দর প্রকৃতি -পরিবেশ।ছিল না এত বড় বড় অট্টালিকা,সুখ-শান্তি ও আরাম আয়েশের জীবন-যাপন।

তখন বিরাজ করছিল চারদিকে এক ভীতিকর পরিবেশ।দীর্ঘ ২৩ বছর যাবত চলে আসা পাকিস্তানিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন,এদেশের আলেম-ওলামা,কৃষক-মুজুর,ধনী-গরিবসহ সর্বস্তরের মুক্তিকামী জনতা।

সেদিন চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল গলিত অর্ধগলিত মুক্তিকামী মানুষের লাশ! সম্ভম হারা নারীর আর্তনাদ আর স্বজন হারা প্রিয়জনের বুকফাঁটা চিৎকারে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল এদেশের আকাশ-বাতাস।

অনেক ঘাত প্রতিঘাত আর রক্ত নদী পেড়িয়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা।দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রাম আর বর্ণনাতীত নির্যাতন ভোগ করার পর আমরা পেয়েছি ‘৫৬ হাজার বর্গমাইলের একটি ভূখণ্ড।যার নাম বাংলাদেশ।সোনার বাংলাদেশ।পেয়েছি লাল-সবুজের একটি পতাকা।পেয়েছি একটি স্বাধীন ভূখণ্ড।কিন্তু আজও মনে একটি সংশয় বারবার উঁকি দিয়ে যায়, সত্যি কি আমরা স্বাধীন হতে পেরেছি? পেয়েছি কি বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মত সাহস।স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও কি পেরেছি ভারতের গোলামীর জিঞ্জির থেকে বের হয়ে স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে?

আজও বীর মুক্তিযুদ্ধারা বিনা চিকৎসায় ধুকে মরে।সন্তান হারা মা, স্বামী হারা বধুদের চোখের পানি কি আজও দূর করতে পেরেছি।স্বাধীন দেশে আজও অলিতে-গলিতে লাশের মিছিল চোখে পরে।ধর্ষিতার আত্মচিৎকার আজো শুনি স্বাধীন এই দেশে।লুটতারাজ, দুর্নীতি আর চোরাকারবারে চ্যাম্পিয়ন আমার দেশ ।আজও মাটিতে লাশের নগ্ন নৃত্য চোখে পরে।ক্ষমতার লড়ায়ে আজ দেশের কোটি কোটি টাকার অর্থ বিনষ্ট করা হচ্ছে।তারপরও কিভাবে বলি আমাদের দেশ আজ স্বাধীন?

১৯৭১ সাল।পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন এদেশের মুক্তিকামী সর্বশ্রেণীর মানুষ।যাদের অবদান অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই।দেশের মুক্তিকামী সৈনিকদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ রক্ষায় ঝাপিয়ে পড়েছেন দ্বীধাহীন ভাবে।পিছিয়ে ছিলেন না, এদেশের আলেম ওলামা।নিজে যুদ্ধ করার পাশাপাশি উৎসাহিত করেছে লাখো মানুষকে।যাদের মাঝে উল্লেখ্যযোগ্য: মাওলানা আব্দুল হামীদ খান ভাসানী,মাও.আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ,মাও.আহমাদুল্লাহ আশরাফ,মাও.উবায়দুল্লা­হ বিন সাঈদ জালালবাদী,মাও. ওলীউর রহমান,মুহাদ্দিস আব্দুস সোবাহান,শহীদ আল্লামা দানেশসহ অসংখ্য ওলামায়ে কেরাম।শুধু কি আলেম সমাজ? মাহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশের মাদরাসাসমূহ ছিল এক একটি মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প।ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মেজর জিয়াউর রহমান পটিয়া মাদরাসায় অবস্থান নিয়েই চালু করেছিলেন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র। আজও সেই অস্থায়ী বেতার কেন্দ্র “পটিয়া মাদরাসার মেহমানখানা” ইতিহাসের বিরল সাক্ষী হয়ে আছে।

যশোর রেল স্টেশন মাদরাসা প্রাঙ্গণে ২১ শহীদের গণকবরও এটাই সাক্ষী দেয় মুক্তিযোদ্ধারা মাদরাসায় অবস্থান করতো।বারিশালের চরমোনাই মাদরাসা ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রগার।ছিল তাদের আশ্রয় কেন্দ্র। এমন অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে যা এখানে বলে শেষ করা সম্ভব নয়।

অথচ, স্বাধীনতার ইতিহাস রচনা হয়েছে তাদের এড়িয়ে।সুকৌশলে বাদ দেওয়া হয়েছে হযরত ওলায়ে কেরামকে।রাজাকার, আল বদর আর দেশদ্রোহীদের কাতারে দাঁড় করানো হয়েছে আলেমদের।আক্রোমণ করা হচ্ছে বিভিন্ন ভাবে। আঁকা হয়েছে/হচ্ছে বিভিন্ন কালিগ্রাফি।নির্মাণ করা হয়েছে,এখনো হচ্ছে অসংখ্য মুভি,নাটক,ফানি ভিডিও! উপস্থান করা হচ্ছে ব্যঙ্গাত্বক ভাবে।

যার মূলে রয়েছে স্বাধীনতা ও দেশ বিরোধী শক্তি। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে আজও মেনে নিতে পারছে না।

আমাদের মনে রাখতে হবে, আলেম ওলামা কখনো দেশ বিরোধী ছিলেন না। এদেশ স্বাধীনের পিছনে যেমন আলেম ওলামার প্রয়োজন হয়েছে, ঠিক দেশকে এগিয়ে নিতে হলেও আলেম ওলামার প্রয়োজন আছে! আলেম ওলামাকে এড়িয়ে দেশ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ আমাদের সকলের শুভবুদ্ধির উদয় করুন!

লেখক: সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয় লেখক পরিষদ হাটহাজারী শাখা।