সেভ সিলেটের শেখ হাসিনা ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড জয়

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জানুয়ারি ০১ ২০২২, ১৬:০৭

জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের যুবাদের অনন্য মানবিক অবদানের স্বীকৃতি দিতে ‘ঢাকা ওআইসি ইয়্যুথ ক্যাপিটাল ২০২০’- এর অধীনে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর নামে ‘শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ অনুষ্ঠান ওসমানী মেমোরিয়াল অডিটোরিয়ামে আয়োজন করা হয়। সেই অ্যাওয়ার্ড পেলেন সিলেট বিভাগের সর্ববৃহৎ সামাজিক প্লাটফর্ম ‘সেভ সিলেট’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আয়ান মুমিনুল হক।

বিশ্বের ৬০০০ আবেদনের মধ্যে বাংলাদেশের সিলেট বিভাগ থেকে একমাত্র ব্যাক্তি হিসেবে এই ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ১০টি ক্যাটাগরির মধ্যে “মোস্ট ইন্সপায়ারিং স্টোরি” ক্যাটাগরিতে সেভ সিলেট এই চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তাঁর হাতে অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন। গত বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। অনুষ্ঠানের শুভ কামনা জানিয়ে ভিডিও বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক তাঁদের একক ও দলীয়ভাবে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। এদিকে মহামারি করোনায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ ও দৃঢ় নেতৃত্বে এ বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ সংকট থেকে সফলভাবে উত্তরণ করতে পেরেছে।

যা প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বব্যাপী একজন আদর্শ পথিকৃৎ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। অপরদিকে, কোভিড-১৯ মহামারি প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ও আহ্বানে বাংলাদেশের যুবারাও অদম্য মানসিকতাকে তুলে ধরে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এ অনন্য মানবিক অবদানের স্বীকৃতি দিতে ‘ঢাকা ওআইসি ইয়্যুথ ক্যাপিটাল ২০২০’- এর অধীনে ও বাংলাদেশ সরকারের ছয়টি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামে ‘শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

তরুণ উদ্যোক্তা ও গবেষক আয়ান মুমিনুল হক ২০২০ সালের ২৬শে মার্চ প্রতিষ্ঠা করেন সেভ সিলেট নামের সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় সামাজিক প্লাটফর্ম। যার সদস্য সংখ্যা এক লক্ষ আট হাজার ও এক্টিভ ভলান্টিয়ারের সংখ্যা সাড়ে পাচ হাজার। করোনা ক্রান্তিকালে মাত্র ১৫০দিনে সাধারণ জনগণের সহায়তায় এক লক্ষ সতের হাজার পরিবারের কাছে ইমারজেন্সি ফুড প্যাক পৌছে দিয়েছিলেন। যা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে অনন্য খ্যাতি অর্জন করেছে। ভলান্টিয়ারদের আন্তরিকতা ও ভালোবাসাকে মূলমন্ত্র ধরে সিলেট বিভাগের প্রতিটি উপজেলায়, ইউনিয়নে ও ওয়ার্ডে গড়ে তোলা হয় আলাদা আলাদা ভলান্টিয়ারদের টিম। যার মাধ্যমে সহজেই অসহায়দের মাঝে সাহায্য পৌছে দেয়া হয়।

অসহায়দেরকে ইমারজেন্সি ফুড প্যাক, সেইফি প্যাক, বিনামূল্যে সবজি, বিনামূল্যে ওষুধ, বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবাসহ ২৪ঘন্টার হেল্প সাপোর্ট সেবা দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করে। পরবর্তীতে সিলেট ব্লাড সেন্টারের মাধ্যমে শুরু থেকে প্রায় ষাট হাজারের বেশি ব্লাড ডোনেশন করা হয়। তরুণ তরুণীদেরকে বিনামূল্যে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করার জন্য বাংলা ইউনিভার্সিটি শুরু করা হয়। এখন পর্যন্ত ছয় হাজার তরুণী ও প্রায় চার হাজার তরুণদেরকে এই ট্রেনিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও মিশন তিন মিলিয়ন ট্রি প্লানটেশনের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদের রুহের মাগফেরাত এর জন্য ৩০লক্ষ গাছ লাগানো হবে। যার মধ্য থেকে সাতানব্বই হাজারের মতো বৃক্ষরোপণ করা হয়ে গেছে।

পুরস্কারপ্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় আয়ান মুমিনুল হক বলেন, আমরা সেভ সিলেট (মার্চ ২৬, ২০২০) শুরু করি কোনো কিছু পাওয়ার বা সন্মাননা বা পুরস্কার বা স্বীকৃতির জন্য নয়। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে দেশের মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ পেয়েছিলাম, তা কাজে লাগিয়েছি, আর কিছু নয়। সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে আমরা এসব করেছি। আমাদের মানবিক ভলান্টিয়াররা জীবিত ও সুস্থ হয়ে বেঁচে আছেন – এটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার বা সম্মাননা।

মানুষের দোয়া আর ভালোবাসার চেয়ে বেশি কিছু আমি চাইনা। আত্মতৃপ্তি এইটুকু – এই জীবনে মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি আমরা – গর্ব করে বুক ফুলিয়ে বলতে পারবো সিলেট বিভাগে আমরা অসাধারণ একটা পরিবার বানাতে সক্ষম হয়েছি। কৃতজ্ঞতা সাধারণ মানুষ, ভলান্টিয়ার ও দাতাদের প্রতিও। এই পুরস্কারটিকে বিশ্বের সকল মানবিক ভলান্টিয়ারদের প্রতি উৎসর্গ করলাম।

সেভ সিলেট এর প্রতিষ্ঠাতা আয়ান মুমিনুল হক বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল লিডিং টু পিএইচডি কোর্স করছেন এবং পাশাপাশি একজন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার। উনার দাদা বিজ্ঞানী রফিক উদ্দিন আহমেদ প্রথম বাংলাদেশী নাসা বিজ্ঞানী ও একমাত্র বাংলাদেশি বিজ্ঞানী যিনি চন্দ্রজয়ের এপোলো ১১ মহাকাশযান যানের রাডার ডিজাইনিং এ কাজ করেন।

ইতিমধ্যে আয়ান মুমিনুল হক রয়েল কমনওয়েলথ ফেলো, ইয়ুথ হিরো ও দুবাইয়ের গ্লোবাল পিস এওয়ার্ড এর খেতাব অর্জন করেন। এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) সেক্রেটারি জেনারেল, অ্যাম্বাসেডর হিসেইন ইব্রাহিম তাহা। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, রাশিয়ার যুব বিষয়ক ফেডারেল এজেন্সির প্রধান (মন্ত্রী) সেনিয়া রাজুভায়েভা, মালদ্বীপের যুব, ক্রীড়া এবং সামাজিক ক্ষমতায়ন মন্ত্রণালয়ের আহমেদ মাহলুফ, তাতারস্তান প্রজাতন্ত্র যুব মন্ত্রী তিমুর সুলেমানভ, ইসলামিক কো-অপারেশন ইয়্যুথ ফোরাম (আইসিওয়াইএফ) প্রেসিডেন্ট তাহা আয়হান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী মো জাহিদ আহসান রাসেল প্রমুখ।