সেই ভয়ঙ্কর প্রতাপ শারেঙ্গী আজকের তৃণমূল মন্ত্রী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুন ০১ ২০১৯, ১৯:১৬

একুশে জার্নাল ডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক গ্রাহাম স্টুয়ার্ট স্টাইন ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে মিশনারি হিসেবে কাজ করতেন। তিনি এই রাজ্যের হত-দরিদ্র অস্পৃশ্য কুষ্ঠ রোগীদের নিয়েই কাজ করতেন। মূলত তিনি ছিলেন খৃস্ট ধর্ম প্রচারক। গ্রাহাম স্টুয়ার্টকে সহ্য হচ্ছিলো না রাজ্যের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বজরং দলের।

খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার কাজকর্ম তারা এই রাজ্যে মেনে নিবেন না। সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় স্টুয়ার্টকে। কিন্তু স্টুয়ার্ট বজরং দলের লোকজনদের বিধি নিষেধ মানেননি। তিনি তার মতো করে মানবতার কাজ করে যাচ্ছিলেন।ফলশ্রুতিতে বজরং দলের উগ্র হিন্দুরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।

এর জেরে ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে উড়িষ্যা রাজ্যের আদিবাসী গ্রাম হিসেবে পরিচিত মনোহরপুরের জঙ্গলে স্টুয়ার্টকে তার দুই শিশুপুত্রসহ ফিলিপ ও টিমোথিকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে বজরং দলের নেতৃত্বে আসা শতাধিক উগ্র হিন্দু। দলের দারা সিং প্রকাশ্যে এই হত্যায় সামিল ছিলেন। তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু কার্যকরের রায় দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তিতে এই রায়কে পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন করা হয়।

বিজেপি ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় ১৯৯৯ সালের সেই হত্যাকাণ্ডের সময় উড়িষ্যার বজরং প্রধান ছিলেন মোদীর মন্ত্রিসভায় পশুকল্যাণ মন্ত্রী প্রতাপ সারেঙ্গি। সেই হত্যাকাণ্ডের আগে বজরংয়ের হয়ে খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্মপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে চালিয়েছিলেন প্রতাপ। করেছিলেন অনশনও। তাই কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের মিশনারিদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলার ক্ষেত্রে তাকে দায়ী করা হয়।

২০০২ সালে উড়িষ্যার বিধানসভায় উগ্রবাদীদের নেতৃত্বে হামলা ও দাঙ্গা সৃষ্টির দায়ে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন প্রতাপ সারেঙ্গি। বর্তমানে ভারতের দ্বিতীয় ‘মোদী’ হিসেবে খ্যাত প্রতাপ চন্দ্র শারেঙ্গী। উড়িষ্যার বালেশ্বরের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য। বিজেডি প্রার্থী রবীন্দ্র কুমার জেনাকে ১২ হাজার ৯৫৬ ভোটে হারিয়েছেন তিনি। এবার লোকসভা নির্বাচনে উড়িষ্যার বালাসোর আসনে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে একেবারেই তৃণমূল থেকে নরেন্দ্র মোদির নতুন মন্ত্রিসভায় ডাক পাওয়ায় তিনি এখন চমকের নাম। তিনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পশুপালন দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা দ্বিতীয়বার শপথ গ্রহণ করেছেন নরেন্দ্র মোদি। তার মন্ত্রিসভায় একেবারে তৃণমূল থেকে মন্ত্রিত্বের ডাক পেলেন এই নেতা।

অনেকেই বলছেন মূলত তার অতীতের সেইসব ভয়ংকর কর্মকাণ্ড ঢাকতেই ভারতীয় মিডিয়ায় তার ভাঙা ঘর আর ভাঙা সাইকেলে গল্প প্রচার করছে। তাকে সাধাসিধে একজন ধর্মীয়গুরু হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।