সিলেট বিএনপিতে আসছে ঐক্য

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ২৪ ২০২০, ১৮:১৬

আহমদ মালিক: অবশেষে দ্বিধাবিভক্ত সিলেট জেলা বিএনপির চলমান বিরোধ নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে। আর এ বিরোধ মেঠাতে বর্ধিত করা হচ্ছে জেলা বিএনপির আওতাধীন ১৮টি সাংগঠনিক কমিটি এমনটি এখন জানা যাচ্ছে। সিলেটের ১৩ উপজেলা ও ৫ পৌরসভা বিএনপির গঠিত আহবায়ক কমিটির প্রতিটিতে যুক্ত করা হচ্ছে আরো ৬ জনের নাম। এ অন্তর্ভুক্তির পর জেলা বিএনপির প্রতিটি সাংগঠনিক কমিটি হবে ২৭ সদস্য বিশিষ্টের। ইতিমধ্যে দুই পক্ষই তাদের পছন্দের নাম সিলেট বিএনপির দায়িত্বে নিয়োজিত কেন্দ্রীয় সাংঠনিক টিমের কাছে জমা দিয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের ২ অক্টোবর সিলেট জেলা বিএনপির ২৫ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষণা দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর । কিন্তু এই কমিটি ঘোষণার পর থেকেই জেলা বিএনপি নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। একটি পক্ষকে নেতৃত্ব দেন কমিটির বাহিরে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এই পক্ষের কমিটিতে থাকা ৯ জন নেতা প্রকাশ্যে শুরু করেন বিদ্রোহ। আর কমিটির মধ্যে থাকা বড় আরেকটি অংশ মিলেমিশে চলতে শুরু করেন কমিটি ঘোষণার পরে থেকেই।

দুই পক্ষের অনেক দ্বন্দ্ব-কোন্দলের পর চার মাসের মাথায় সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির আওতাধীন ১৮টি সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা দেন। প্রতিটি কমিটিতে একজন আহবায়ক ও ২৪ জনকে সদস্য করে মোট ২৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটি গঠনের আগে জেলা বিএনপির বিবাদমান দুই পক্ষই অসংখ্য বার বৈঠকে বসে। এমনকি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসভাপতি ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন সিলেটে এসে দুই পক্ষকে নিয়েও বৈঠক করেন।

কিন্তু উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের পর বেকে বসেন জেলা বিএনপির ৯ নেতা। তারা এসব কমিটি প্রত্যাখান করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন। বিচার দেন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতাদের কাছে। একতরফা কমিটি হয়েছে বলে দলের দায়িত্বশীলদের অবগত করেন তারা। তবে, আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারের নেতৃত্বে বড় অংশটি সেই সময়ে দাবি করে, আলোচনার মাধ্যমেই ১৮টি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

দলের চলমান এই বিরোধ মেঠাতে উদ্যোগী হয় কেন্দ্রীয় বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম। দলের কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসভাপতি ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহ-সাংঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন সিলেটের গঠিত ১৩ উপজেলা ও ৫ পৌরসভা বিএনপির কমিটি বর্ধিত করে ব্যালেন্স করার উদ্যোগ নিলে খুশি হয় বিদ্রোহী পক্ষ। সিদ্ধান্ত হয় প্রতিটি কমিটিতে নতুন করে ৬ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন সিদ্ধান্তে জেলা বিএনপির দু’পক্ষই কমিটিতে নাম ঢুকাতে মরিয়া হয়ে উঠে। প্রতিটি কমিটিতে উভয় পক্ষই ভাগ বসাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বিএনপি নেতারা। দলের বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, জেলা বিএনপির ১৮ সাংগঠনিক কমিটির মধ্যে ১২টি কমিটিতে প্রায় সমান ভাগে একেকটি পক্ষ ৩ কিংবা ৪ জন করে অন্তর্ভুক্তি করতে নামের তালিকা দিয়েছেন।

প্রাথমিকভাবে এসব নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন কেন্দ্রিক ইস্যু হওয়ায় দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সালামের দেয়া কয়েকটি নাম প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত হয়েছে। এছাড়া ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদি লুনাও কয়েকটি নাম জমা দিয়েছেন।

কমিটি বর্ধিতের সত্যতা নিশ্চিত করেছনে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন। তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে নামগুলো জমা দিয়েছি দলের মহাসচিব ও যুগ্ম মহাসচিব বরাবরে। এমনও অনেক আছেন কোন পক্ষ্যের নয়, তারা বিএনপি করেন তাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি করা হচ্ছে।

জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও বিদ্রোহী পক্ষের এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, বিভিন্নভাবে যে অন্যায় ও স্বেচ্ছাচারিতা করা হয়েছে এর বিচার দেয়ার ফলে কেন্দ্রীয় বিএনপি কমিটি বর্ধিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এরফলে প্রমাণিত হয়েছে বিগত দিনের কমিটিতে স্বেচ্ছাচারিতা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিএনপিকে এমন উদ্যোগ নেয়ার জন্য তিনি তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও কমিটি পক্ষের আব্দুল আহাদ খান জামাল বলেছেন, কোন স্বেচ্ছাচারিতা নয় যথা নিয়মে এবং উপজেলা ও পৌর বিএনপি নেতাদের মতামত নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএনপি যেহেতু একটি বড় দল কেউ বাদ পড়তে পারেন। সুতরাং তাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।