সিলেটের রাজনীতি সম্প্রীতির না আঁতাতের

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ফেব্রুয়ারি ১৩ ২০১৯, ১৯:৫৬

জাহেদ আহমদ: অনেকদিন হলো রাজনীতি নিয়ে কিছু লেখা হয়নি।জামাত-বিএনপির কিছু ভাই বন্ধু আমার উপর নারাজ ৷ কারণ, আমার প্রায় লেখাই তাদের বিপক্ষে যায়। আর আওয়ামীলীগের কিছু ভাই বন্ধুরা মনে করেন ‘জাহেদ’ সুবিধাবাদি মানুষ। আ’লীগ ক্ষমতায় বলে আ’লীগের পক্ষে লিখে। আবার যখন আ’লীগের বিপক্ষে লেখা যায় তখন সেই ধারণায় তারা অটল থাকতে পারেন না। আসলে ঘটনা হলো, আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যখন যেটাকে সত্য মনে হয় সেটার পক্ষে লিখি।

সেদিন প্রিয় এক ভাই বলেই ফেললেন, “মাওলানা! তুমি সুন্দর লিখো, কিন্ত কিছু লেখায় শরীরে আগুন লেগে যায়।” শুনে কষ্ট লাগলো।
আসলে লেখালেখি করে কী ফায়দা? কত প্রিয়জন হয়ত নীরবে সয়ে যান সেই আগুন!

আবার ভাবলাম, আগুনে তো ঘি বা কেরোসিন দিচ্ছি না ৷ ওগুলা দিলে না ক্ষতি হতো। সত্য বলায় যদি কারও কষ্ট হয় তবে আমি সরি, এ্যাগেইন সরি।

শিরোনামে আসি। সিলেটে বিএনপি আওয়ামীলীগ নেতাদের একে অন্যের সাথে ভালো সম্পর্ক রয়েছে।আত্মীয়তার সুবাদে হোক আর নিজ দলে যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়ার কারণে হোক, সম্পর্ক রয়েছে একথা সঠিক। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শফি চৌধুরী, ইনাম চৌধুরী এখন আওয়ামীলীগে। শমসের মুবিন চৌধুরীও বিএনপি ছেড়ে অন্য দলে।
সুলতান মনসুর আর মুকাব্বিররাও সুযোগ পেলে আওয়ামীলীগে চলে যাবে।সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে নিয়েও রয়েছে গুঞ্জন।
আবুল মাল সাহেবকে নিয়ে রিকশায় ঘুরা, আবদুল মোমেন সাহেবের সাথে সুসম্পর্ক রাখাসহ নানাবিধ কারণ।

দশকের পর দশক ধরেই সিলেটে চলছে সম্প্রীতির রাজনীতি। নিকট অতীতের একটি উদাহরণ টানি, ১৩’র হেফাজতের আন্দোলনের সময় যখন আওয়ামীলীগ হেফাজতের চরম বিরোধী, মাঠে ঘাটে টান টান উত্তেজনা, তখনও আমরা দেখেছি সিলেট কোর্টপয়েন্টে আন্দোলনরত হেফাজতকর্মীদের জন্য মেয়র কামরান এক ঠেলা বিরানী পাঠিয়েছিলেন। এটা কামরানের উদারতার পরিচায়ক। সিলেটের সম্প্রীতির জলন্ত প্রমাণ। সে সময় কামরান চাইলে হেফাজত এক মিনিটও কোর্টপয়েন্টে দাঁড়াতে পারতো না।

সিলেটে যদি আঁতাতের রাজনীতি হতো মেয়র আরিফকে জেল খাটতে হতো না। মোটেও না। আব্দুল মোমেন সাহেব পররাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় মেয়র অারিফ অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।এই অভিনন্দন জানানোর কারণে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, আরিফের কি এত সখ্যতা আ’লীগের সাথে!
পণ্ডিতদের বুঝা উচিত ছিল, আরিফ একজন নির্বাচিত মেয়র। উনি সবার মেয়র, কোন দলের নয়। খোদ প্রধানমন্ত্রীও যদি তার নগরে আসেন তাহলে মেয়র হিসাবে অভিবাধন জানানো তার কর্তব্য। আবদুল মোমেন সাহেবকে এক অভিনন্দন জানানোর কারণে কি ফায়দা হয়েছে জানেন? খোদ আবুল মাল আব্দুল মোমেনদের বাসার দেয়াল ভাঙার সুযোগ পেয়েছেন রাস্তা প্রশস্তের জন্য।

আমার মনে হচ্ছে, এই সম্প্রীতি সহ্য করতে পারছেন না সমালোচকরা।তারা চাচ্ছেন সব সময় একটা সঙ্ঘাত লেগে থাকুক। টান টান উত্তেজনা থাকুক। খেলা হবে,খেলা হোক। বিএনপি আওয়ামীলীগ একে অপরকে দুশমন ভাবুক।
আমাদের জানা উচিত,ভিন্নমত মানেই বিরুদ্ধ মত নয়। প্রতিপক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বী মানেই দুশমনী নয়।

সিলেটের রাজনীতি আঁতাতের নয়, সম্প্রীতির।সুস্থ থাকুক সিলেটের রাজনীতি। সুস্থ থাকুক সিলেটবাসী।