সাধারণ সর্দি-জ্বর, করোনা ভাইরাস ও অন্যান্য রোগের পার্থক্য

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুন ২৯ ২০২০, ২২:৪৫

ডা: ইব্রাহীম মাসুম বিল্লাহ


যেকমন কোল্ড বা সাধারণ সর্দি-জ্বর এক প্রকার ভাইরাস জনিত রোগ, যা মূলত শ্বসনতন্ত্রের উপরিভাগে হয়ে থাকে বা Upper respiratory tract কে আক্রান্ত করে।
সাধারণত Rhino virus নামক এক প্রকার ভাইরাস দিয়ে হয়ে থাকে।

এই ভাইরাস করোনা ভাইরাসের মত, মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে এইটা একটু দূর্বল প্রকৃতির ভাইরাস,
কারণ এইটা upper respiratory tract কে আক্রান্ত করলেও lower respiratory tract তথা ফুসফুস কে আক্রান্ত করেনা। তাই ক্ষতির পরিমান তেমন একটা নাই বললেই চলে।

উপসর্গঃ

নাক দিয়ে পানি পড়া,
নাক বন্ধ হয়ে আসা
হালকা গলা ব্যাথা
কাশি
গায়ে গায়ে জ্বর
জ্বর মোটামুটি ৯৯ থেকে ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট
মাথা ব্যাথা।
হাঁচি আসা।
শারীরিক দূর্বলতা।

টাইফয়েডের সাথে এই জ্বরের পার্থক্য :
টাইফয়েড জ্বরে সাধারণত সর্দি কাশি থাকেনা।
rhino virus এর ক্ষেত্রে সর্দি কাশি দিয়েই শুরু হয়।
টাইফয়েড সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি উচ্চতাপমাত্রা সহ হয়ে থাকে, Rhinovirus তুলনামূলক কম তাপমাত্রা।

টাইফয়েডের ক্ষেত্রে ডায়েরিয়া হতে পারে, এখানে ডায়েরিয়া থাকবেনা, টাইফয়েডের ক্ষেত্রে শরিরে র‍্যাশ দেখা দিবে, এখানে র‍্যাশ দেখা দিবেনা।

করোনার সাথে পার্থক্য:
করোনা ফুসফুস কে আক্রান্ত করে, তবে রিনো ভাইরাস ফুসফুস কে আক্রান্ত করেনা,

ডেংগুর সাথে পার্থক্য :
ডেংগুতে উচ্চমাথার তাপমাত্রায় যাবে, ডেংগু তে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করে,তবে সর্দি-জ্বর এ মাথা ব্যাথা থাকেনা, ডেংগুতে চোখের মাঝে ব্যাথা থাকে। সর্দি-জ্বরে চোখে ব্যাথা থাকেনা।

ডেংগুতে খাবার রুচি একবারি থাকেনা, প্রচন্ড বমি বমি ভাব থাকে, তবে সর্দি জ্বরে এমন টা হয়না,

সর্দি কাশি দিয়ে জ্বর শুরু হলে বুঝতে হবে ভাইরাল ফিভার, এবং আতংকিত হবার কারণ নাই।

কমপ্লিকেশন বা জটিলতা :

ভাইরাল ফিভার সঠিক ভাবে চিকিৎসা না হলে
সর্দি জ্বর থেকে অনেক সময় সেকেন্ডারি ইনফেকশন হয়ে থাকে, টনসিলাইটিস, মিডেল ইয়ার ইনফেকশন বা অটাইটিস মিডিয়া হতে পারে, কানে ব্যাথা করতে পারে।
নিউমোনিয়া হতে পারে, একিউট সাইনুসাইটিস হতে পারে।, এজমা রোগীদের এজমা এটাক হতে পারে।

প্রতিরোধঃ

সাধারণত দেখা যায়, এক ফেমিলিতে একজনের সর্দি জ্বর হলে সবার তা হয়ে যায়, তাই প্রতিরোধের জন্য যা করতে হবে তা হচ্ছে,

নিয়মিত হাত ধৌয়ার অভ্যাস করতে হবে।
আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা,
আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহারিত সামগ্রি ব্যবহার না করা,
আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহারিত গ্লাস ব্যবহার না করা।

চিকিৎসা
সাধারন সর্দি জ্বর সহ যে কোন শারীরিক সমস্যায় রেজিষ্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরী ,

চিকিৎসক নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে রোগ নিরুপনের মাধ্যমে সিমপ্টোম্যাটিক ট্রিটমেন্ট যেমন প্যরাসিটেমল ও এন্টি হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ দিতে পারেন,
৭-২১ দিনের মধ্যে মোটামুটি সুস্থ হয়ে যায়।

এলার্মঃ
ভাইরাল ফিভার সঠিক ভাবে চিকিৎসা না হলে ভালো হবার পরে ও অনেকের ক্ষেত্রে তিনটা এলার্মিং উপসর্গ দেখা দেয়,
১। পোষ্ট ভাইরাল ড্রাই কপ (শুকনো কাশি)
২। পোষ্ট ভাইরাল হেডেক (মাথা
ব্যাথা)
৩।পোস্ট ভাইরাল ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম হতে পারে।
লেখক :
হাফেজ ডা: ইব্রাহীম মাসুম বিল্লাহ
ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ