সরকারের নতুন মন্ত্রীসভা; উচ্ছাসের সাথে বাস্তবতার মিল ঘটুক

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জানুয়ারি ০৬ ২০১৯, ১৭:৩৮

আহমদ যাকারিয়া: ব্যাপক ভোট জালিয়াতির অভিযোগ থাকার পরেও পুনঃবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে গত দু’দিন আগে তথাকথিত নির্বাচিতদের শপথ গ্রহণের পর দেশের সচেতন মহল অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল এবারের মন্ত্রীসভা কেমন হয় এটা দেখার জন্য। মন্দের ভালো বলতেই হবে। মাননীয়া শেখ হাসিনা আজকের মন্ত্রিসভা গঠনে অনেক চমক সৃষ্টি করেছেন। তর্ক বা বিতর্ক থাকতেই পারে গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে কিন্তু এই মন্ত্রীসভায় নবীন ও প্রবীণদের যে সমন্বয় সাধন করা হয়েছে তাতে শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার প্রশংসা করতেই হয়। প্রবীণদের অভিজ্ঞতার দ্বারা নবীনরা ঋদ্ধ হবে আর এতে আগামী বাংলাদেশের নেতৃত্ব সৃষ্টিতে বিশাল ভূমিকা পালন করবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। বর্তমান মন্ত্রীসভা গঠনে পরিবারতন্ত্র চর্চা করেননি প্রধানমন্ত্রী এটা দেখে বিস্মিত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর অনেক আত্মীয় স্বজন সাংসদ নির্বাচিত হলেও কাউকেই তিনি মন্ত্রীত্ব দিয়ে ভূষিত করেননি; এর দ্বারা তার নেতৃত্বগুণের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তিনি সম্ভবত চাচ্ছেন যে, তারা কাজ করে মানুষের ভালোবাসা অর্জন করে অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ করে নিজের যোগ্যতার বলে আসুক। যাতে করে শেখ পরিবারের লোকদের শরীরে কলঙ্কের আঁচড় না লাগে; এই ভাবনা থেকে যদি তাদেরকে মন্ত্রীত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হয়ে থাকে তাহলে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। বিগত সরকারের বিতর্কিত কয়েকজনকে বাদ দিয়ে নতুন মুখ এসেছে এসব মন্ত্রনালয়ে, এমন পরিবর্তন দেখে সচেতন মহল আশায় বুক বেধেছে এই ভেবে যে, হয়তো এই টার্মে দেশের সার্বিক উন্নয়নে সরকার হয়তো একটু মনোযোগী হতে পারে। মানুষের আশা ও কল্পনা সত্য ও বাস্তবে পরিণত হোক এমনটাই প্রত্যাশা দেশকে নিয়ে ভাবনা করেন এমনসব লোকদের।

গঠিত নতুন এই মন্ত্রীসভায় নিজ দল আওয়ামী লীগের বিতর্কিতদের যেমন বাদ দেয়া হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে বামপন্থীদেরকেও দারুণভাবে সার্জারি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের (তথাকথিত হাসির জনক) শাহ জাহান খান, (শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়মের কারিগর) নুরুল ইসলাম নাহিদ,
তোফায়েল আহমদ, মতিয়া চৌধুরী, আমীর হোসেন আমু ও নাসিম বাদ পড়েছেন। আর বামপন্থীদের মধ্যে বেয়াদব ও উশৃঙ্খল হাসানুল হক ইনু ও সর্বদা ঘেউঘেউ করা রাশেদ খান মেননের হম্বিতম্বির পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। আর বামপন্থী দিলীপ বড়ুয়াকে তো আগের টার্মেই ছাঁটাই করা হয়েছে। বিশেষকরে ধর্মমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে এমন একজন লোককে যিনি উলামায়ে কেরামের প্রতি গভীর ভালোবাসা পোষণ করে থাকেন এবং অত্যন্ত বিনয়ী লোক হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত তিনি হলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ আব্দুল্লাহ। উনাকে এই মন্ত্রনালয়ের জন্য নির্বাচিত করায় শেখ হাসিনা সাধুবাদ পেতেই পারেন। আর মেনন, ইনু, নাসিম, শাহ জাহান ও মতিয়া চৌধুরীকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ায় শেখ হাসিনা অবশ্যই অভিনন্দন ধন্যবাদ পাওয়ার উপযুক্ত। কারণ তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড আর অযাচিত আস্ফালন দেখে অনেক সরকার পক্ষের লোকও সরকারের সমালোচনা করতে বাধ্য হয়েছে। তাই এদেরকে ছাঁটাই করার দ্বারা সরকারকে বিতর্কের উর্ধে থাকতে অনেক সহযোগিতা করবে।

আশাকরি এই টার্মে সরকার দেশের সার্বিক উন্নয়নে মনোযোগী হবে। সরকার বিগত টার্মে বিরোধীদের উপর যেভাবে আইনের খড়্গহস্ত চালিয়েছে এই টার্মে এসব থেকে বিরত থাকবে। দেশের অবকাঠামোর উন্নয়নে সরকার এই টার্মে যদি বিশেষ মনোযোগ দেয় তাহলে আগামী নির্বাচনে আর ভোট কারচুপির অভিযোগ কেউ করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বরং মানুষ মিছিল করে করে নৌকায় শীল মারবে। তবে এর জন্য পূর্ব শর্ত হলো জনগনের ভাষার সাথে সরকারের একাত্মতা পোষণ। জনগণের ইচ্ছে ও চাহিদার মূল্যায়ন। জনগণ কী চায় তা সরকারকে প্রথমে অনুধাবন করতে হবে যদি সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে সক্ষম হয় এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে তবে এই সরকার গণমানুষের ও গণমুখী সরকার হতে বেশিদিন লাগবে না ইনশাআল্লাহ।