সমালোচনা এড়াতে সাধনাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিচ্ছেন বিতর্কিত ডিসি কবির

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ২৮ ২০১৯, ১২:৫২

ওএসডি হওয়া জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীরের বানানো সেই খাস কামরা ভেঙ্গে দিয়েছেন নতুন ডিসি মোহাম্মদ এনামুল হক।

কর্মস্থলে যোগদান করে অফিসের সব ধরনের রঙ্গীন লাইট, সাজ-সজ্জা, খাস কামরার খাট, আসবাবপত্র ফেলে দিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম শুরু করেন।

এরআগে অফিস চলাকালিন সময়ে প্রথমে জামালপুরের ইলেকট্রনিক মিডিয়া সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন ডিসি।

জামালপুরের কোন অফিসে বা প্রতিষ্ঠানে পুনরায় সাবেক জেলা প্রশাসকের মত অনৈতিক কার্যক্রম করতে কেউ যেন সাহস না পায়, সেজন্য সাংবাদিকদের নিকট সহযোগীতা চান তিনি।

এদিকে যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় বির্তকিত জামালপুরের সাবেক ডিসি আহমেদ কবিরের সাথে তার অফিস সহকারী সানজিদা ইয়াসমিন সাধনার বিয়ের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

মঙ্গলবার একুশে টিভি অনলাইনের এক সংবাদে এমন দাবি করা হয়। প্রকাশিত ওই সংবাদে বলা হয়- নিজ অফিস সহকারী সানজিদা ইয়াসমিন সাধনাকেই বিয়ে করতে যাচ্ছেন জামালপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীর।

সম্প্রতি আপত্তিকর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে ভাইরাল হওয়ার পর নিজের চাকরি বাঁচাতেই ডিসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়।

সূত্রটি আরও জানায়, স্বামীর চাকরি বাঁচাতে আহমেদ কবীরের বর্তমান স্ত্রী কঠিন হলেও এতে সম্মতি দেয়ার চিন্তা করছেন।

কঠিন সমালোচনার মুখে থাকা ওএসডি হওয়া জামালপুরের সাবেক ডিসি সবদিক চিন্তা করে সানজিদা ইয়াসমিন সাধনাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়াকেই নিজের জন্য উপযুক্ত ও সুবিধাজনক শাস্তি মনে করছেন।

এ গুঞ্জনের ডালাপালা জামালপুর ছাপিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সাধনা, তার বাবা খাজু মিয়া ও আহমেদ কবীরের ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় বিয়ের খবরটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

জামালপুর শহরের লোকজনও কানাঘুষা করছে, সাধনাকে বিয়ে করাই ডিসি আহমেদ কবীরের চাকরি হারানো ও মামলা থেকে বাঁচার উপায়। বিয়ে করার সম্ভবনা রয়েছে। এর ফলে দাবি থেকে বেগম হতে যাচ্ছে সাধনা!

এছাড়া সাধনা আত্মহত্যা করেছেন বলে মঙ্গলবার সকালে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিলো। খবর পেয়ে একদল সাংবাদিক ছুটে যান শহরের বগাবাইদ এলাকায় সাধনার বাসায়।

সেখানে সাধনার বাবা খাজু মিয়াকে জিঞ্জাসা করতেই অবাক হয়ে তিনি বলে ওঠেন আপনাদের কে খবর দিয়েছে? আমার মেয়ে অফিস থেকে ৩ দিনের ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি মাদারগঞ্জের সুখনগরীতে রয়েছে।

সাধনার মা নাছিমা আক্তার ঘর থেকে বের হয়ে বলেন, ওকে শেষ করার আর আপনাদের কী বাকি রয়েছে। আমার মেয়ে মারা যায়নি। মারা যাইতে বেশি সময় নেই। এই সাধনার বাবা তাদের সাথে কী বলছো। এরপর চোখ রাঙিয়ে তিনি বলেন চলে আসো।

এর আগে গত ১৫ আগস্ট তাদের আপত্তিকর ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। সারাদেশ জুড়ে এখন এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমলোচনা।

ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর জামালপুরের স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেই ডিসি ও সাধানার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে। জনসম্মুখে আসছে শুরু করেছে তাদের অজানা কাহিনী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের আস্কারা পেয়ে, অফিস সহকারী সাধনা হয়ে উঠেছিল ছায়া ডিসি, নতুন ডিসির কার্যক্রম শুরু ২০১৮ সালে উন্নয়ন মেলায় হস্তশিল্পের স্টল বরাদ্ধ নেয়ার সময় জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের সাথে পরিচয় হয় সাধনার।

কথা এবং রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিনামূল্যে ষ্টল বরাদ্ধ দেন আহমেদ কবীর। উন্নয়ন মেলা চলাকালে তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে যা শারীরিক সম্পর্কে রূপ নেয়।

ডিসির প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন দফতরে বদলি, নিয়োগ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সামান্য অফিস সহকারী সাধনার হাতে লাঞ্চিত হয়েছে ডিসি অফিসের অনেক কর্মকর্তা। জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত কাজে স্বার্থসিদ্ধি হাসিলের জন্য সবার আগে তাই সাধনাকেই ম্যানেজ করতেন সুবিধাভোগীরা।

সাধনা এ কারণে সবার নিকট ‘ছায়া ডিসি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। অফিস চলাকালীন সময়ে তাদের রঙ্গলীলা অবাধ করতে তার কামড়ার দরজায় বসানো হয়েছিল লাল ও সবুজ বাতি। রঙ্গলীলা চলাকালে লালবাতি জ্বলে উঠতো।

দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকতো বিশ্বস্ত পিয়ন। এই সময় সকলেরই প্রবেশ নিষেধ। এ সময় অফিসের বাইরে ফাইলপত্র নিয়ে দাড়িয়ে থাকত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেকেই। লীলা শেষে পরিপাটি হয়ে ডিসি যখন চেয়ারে বসতেন তখন জ্বলে উঠতো সবুজ বাতি।

তখন সবাই ভিতরে প্রবেশ করতে পারত। সাধনা অফিস সহকারী পদে যোগদান করার পর জেলা প্রশাসকের অফিস রুমের পাশে খাস কামড়াটিতে মিনি বেড রুমে রূপান্তর করতে খাট ও অন্যান্য আসবাবপত্রসহ সাজসজ্জা করেন। সেই রুমেই চলতো তাদের রঙ্গলীলা।

প্রকাশ পাওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের অফিস কক্ষের ঠিক ডান পাশের ছোট একটি কক্ষ। ছোট এই কক্ষটিতে একটি ছোট খাট বসানো রয়েছে। কক্ষটি বেশ পরিপাটি দেখা যায়।

ভিডিওটিতে পুরুষ ব্যক্তিটিই জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর। আর যে নারীকে দেখা যায়, তিনি এই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমেই সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া একই অফিসের অফিস সহায়ক সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা।

উল্লেখ্য, ইসলামী শরীয়তে ব্যাভিচার করার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড ও বেত্রাঘাতের বিধান রয়েছে। এছাড়াও এর আরেকটি শাস্তি হিসেবে উভয়ের মধ্যে বিবাহ সম্পাদনকে স্বীকৃতি দেয় আমাদের সমাজ।