সমাজে জমি বন্ধক দেওয়ার প্রচলন, ইসলাম কী বলে?

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ০৮ ২০১৯, ১৪:৫৩

মুফতি আহমদ যাকারিয়া

নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে জায়গা-জমি ভোগ করা অথবা ফায়দা অর্জনের শর্তারোপ করা ছাড়া বন্ধক ও গ্রহণ করা কোরআন-সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী জায়েজ ও ইসলামী শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত।

বন্ধক অধ্যায়ে ইমাম বুরহান উদ্দনি ফরগানী রহঃ বলেন- (রাহান) শব্দটির আভিধানিক অর্থ যে কোন কারণে কোন বস্তুকে আটকে রাখা। শরিয়তের পরিভাষায়: হক তথা কর্জের পরিবর্তে কোন বস্তুকে এমনভাবে আটকে রাখা যাতে বন্ধকী বস্তুর দ্বারা হক উসূল করা সম্ভবপর হয়। এভাবে বন্ধক রাখার বিষয়টি পবিত্র কুরআন ও হাদিস কর্তৃক সমর্থিত।

কোরআনে এসেছে; অর্থাৎ বন্ধকী বস্তুসমূহ বন্ধক গ্রহীতার কব্জায় বা জিম্মায় থাকবে। (বাক্বারা, আয়াত নম্বর ২৮৩) 

হাদিসে বর্ণিত আছে, একদা রাসূল সাঃ এক ইয়াহুদি হতে কিছু খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করেছিলেন এবং এর মূল্যের বিনিময়ে নবী সাঃ তাঁর বর্মটি (যুদ্ধ পোশাক) ইয়াহুদির নিকট বন্ধক রেখেছিলেন। (বুখারী, মুসলিম, বন্ধক অধ্যায়) 

উল্লেখ থাকে যে, বন্ধক রাখা ও গ্রহণ করা বৈধ হওয়ার বিষয়ে ইজমা (ইমামগণের ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। [হেদায়া, কিতাবুর রাহান, ৪র্থ খণ্ড, পৃ.৫০০]

তবে বন্ধকদাতা যতদিন টাকা পরিশোধ করতে পারবে না ততদিন বন্ধকী জমিন বন্ধক গ্রহীতা ভোগ করবে ও চাষাবাদের মাধ্যমে ফায়দা অর্জন করবে এ শর্তে জায়গা-জমি বন্ধক রাখা ও গ্রহণ করা ঈমানদারের জন্য হারাম ও মারাত্মক অপরাধ; যা বর্তমানে আমাদের দেশে রেওয়াজ ও প্রচলন হয়ে গেছে।

জায়গা-জমিন বন্ধক রেখে নির্দিষ্ট টাকার অংক গ্রহণ করা হচ্ছে ঋণ ও কর্জ গ্রহণ করার নামান্তর। আর উক্ত ঋণ বা কর্জের টাকা উসূল করার জন্য ঋণগ্রহীতা হতে জায়গা-জমি বা অন্য কোন বস্তু বন্ধক রাখা হয়। এটাই বন্ধক রাখা বা বন্ধক গ্রহণ করার মূল উদ্দেশ্য, যা ইলমূল হাদিস ও ইলমূল ফিকাহ এর নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের বর্ণনা দ্বারা স্পষ্ট।

কর্জ বা ঋণ উসূল করার জন্য যেসব জায়গা-জমি বন্ধক গ্রহণ করা হয় তা থেকে বন্ধক গ্রহীতার জন্য ফায়দা অর্জন করা নিঃসন্দেহে ইসলামী শরীয়তের বিধান মোতাবেক সুদ ও হারাম। যেমন রাসূল সাঃ এরশাদ করেছেন- “প্রত্যেক ঋণ বা কর্জ যা হতে কর্জদাতা ফায়দা অর্জন করে তা সুদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত”।

 

উল্লেখ্য যে, সুদী কারবার বা লেনদেন যারা করে এবং যারা এ জাতীয় লেনদেনে স্বাক্ষী হয় সকলে গুনাহের মধ্যে বরাবর। রাসূল সাঃ সুদী কারবারে বা লেনদেনের সাথে জড়িত সকলের উপর লা’নত (অভিশাপ) করেছেন। (মুসলিম) 

 

নবী সাঃ এরশাদ করেছেন- সুদের মাত্র এক দিরহাম যে ব্যক্তি জেনে শুনে খাবে তা ছয়ত্রিশ বার যেনা (ব্যাভিচার) করার গুনাহের চেয়েও মারাত্মক।

 

অপর হাদিসে রাসূল সাঃ এরশাদ করেছেন- সুদের গুনাহ্ এমন সত্তর গুনাহের সমান, যে সত্তর গুনাহের মধ্যে সবচেয়ে কম দরজার গুনাহ্ হল স্বীয় মায়ের সাথে ব্যভিচার করা। (নাউজুবিল্লাহ) (ইবনে মাযাহ, সুদ অধ্যায়)

 

অতএব, ফিকহ-ফতোয়ার উপরোক্ত উদ্ধৃতিসমূহের আলোকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে,

ক. যদি বন্ধকী লেনদেন বন্ধকী জমি হতে ফায়দা অর্জনের শর্তের ভিত্তিতে সংগঠিত হয় যা বর্তমানে আমাদের দেশে রেওয়াজে পরিণত হয়েছে তবে তা শরিয়ত মোতাবেক না জায়েজ হওয়ার কারণে জায়গা-জমিন বন্ধক দিয়ে নেয়া টাকা সওয়াবের নিয়তে মসজিদ, মাদরাসা ও কবরস্থান ইত্যাদিতে খরচ করা যাবে না।

 

খ. নাজায়েজ পন্থায় নেয়া টাকা জেনে শুনে হালাল মনে করা মারাত্মক গুনাহ্। আল্লাহর দরবারে অবশ্যই খালেস নিয়তে তাওবা করবে এবং এ ধরনের নাজায়েজ তরিকায় বন্ধকী লেনদেন হতে বিরত থাকবে।

 

গ. গুনাহের কাজকে সমর্থন করাও গুনাহ। সুতরাং জায়গা- জমিনের বন্ধক রাখা আমাদের দেশের প্রচলিত নাজায়েজ প্রথাকে পাড়া-পড়শী ও আত্মীয়-স্বজন যারা সঠিক মাসআলা না জানার কারণে সমর্থন করে তারা এ ফতোয়ার মাধ্যমে সঠিক মাসআলা অবগত হওয়ার দরুন উক্ত গুনাহের কাজকে আর সমর্থন করবে না। আর যদি জানার পরও সমর্থন করে তবে মারাত্মক গুনাহগার হবে। এ জন্য তাওবা করতে হবে।

 

ঘ. সঠিক মাসআলা না জানার কারণে যদি কেউ উপরোক্ত বিষয়ে চুপ থাকে এবং কোন প্রকার মন্তব্য না করে তবে তাকে অপরাধী বা গুনাহগার বলা যাবে না।

ঙ. আর যদি সঠিক মাসআলা অবগত হওয়ার পরেও সত্যকে মানুষের সামনে তুলে না ধরে, সে রাসূল সাঃ এর হাদিস মতে বোবা শয়তান ও জঘন্যতম অপরাধী। অতএব সে খালিস নিয়তে তাওবা করবে।