সবার ইশতেহার রাজনীতির নামে দুর্নীতির রসদময় ছিলো

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জানুয়ারি ০৬ ২০১৯, ১৫:১০

মোমিন মেহেদী
বাংলাদেশের রাজনীতিকে ক্রমশ অন্ধকারাচ্ছান্ন করে তুলছে আমাদের রাজনীতিতে বটবৃক্ষের মত অবিরত বেড়ে ওঠা রাজনৈতিক দলও রাজনীতিকগণ। যে কারনে নির্বাচনী ইশতেহারে য়েছে কেবলই গালগল্প আর উন্নয়নের নকশা। নেই দুর্নীতি প্রতিহত বা প্রতিরোধের অঙ্গীকার, নেই জঙ্গীবাদ-জামায়াতের রাজনীতি-ব্যবসা সহ বেড়ে ওঠার রাস্তা বন্ধেরও কোন পরিকল্পনাকথা। আছে কেবলই উন্নয়ন আর উন্নয়নের কথা। যে উন্নয়নের হাত ধরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাঁচার হয়েছে ৭ লক্ষ কোটি টাকা। যদিও আমাদের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যেগে ১৯৭৩ সালে বিলুপ্ত করা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পুনুরুজ্জীবিতকারী তাঁরই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে তার দল ‘টেকসই বিনিয়োগ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ নিশ্চিৎ করবে। এটাই তাদের এবারের অঙ্গীকার। ২০০৮ সালের ‘দিনবদলের সনদ’, ২০১৪ সালের ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ এর পর আসন্ন ৩০ ডিসম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’।
প্রতিটি ক্ষেত্রে সেই বিলুপ্ত আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় অবস্থান, গত দশ বছরের অর্জন এবং আগামী দিনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ধরে সাজিয়েছেন ৮০ পৃষ্ঠার এই ইশতেহার। যেখানে একটিবারের জন্যও দুর্নীতি প্রতিরোধের ব্যাপারে কোন অঙ্গীকার নেই, নেই কোন পরিকল্পনাও। যদিও ইশতেহারের শুরুতেই আওয়ামী লীগের ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলোতে তারা জোর দেবে আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেলে। প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ; তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর; কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা; দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ; নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশু কল্যাণ; পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা; সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও মাদক নির্মূল; মেগা প্রজেক্টসমূহের দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন; গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা; দারিদ্র্য নির্মূল; সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি; সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি; সকলের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা; সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা; আধুনিক কৃষি-ব্যবস্থার লক্ষ্য যান্ত্রিকীকরণ; দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন; জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা; ব্লু-ইকোনমি – সমুদ্রসম্পদ উন্নয়ন; নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা; প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ; টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন।
বলা হচ্ছে, টানা দশ বছর ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের মহাসড়কে’ তোলার পর এখন তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বে সম্পৃক্ত করে সেই পথে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি এসেছে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে। কিন্তু যখন ৮০ পৃষ্টার ইশতেহারে চোখ রাখলাম, তখন উঠে আসলো- “আমরা বিভেদ, হানাহানি, জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস, অবরোধ বিশৃঙ্খলার রাজনীতি চাই না। চাই গণতান্ত্রিক পরিবেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এ নির্বাচনে আমরা জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছি।” আওয়ামী লীগ বলছে, জনগণের রায়ে আবার ক্ষমতায় যেতে পারলে দেশ থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতি নির্মূল করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে সুসংহত করবে। সমাজের সকল পর্যায়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব ও ক্ষমতায়নে তারা বদ্ধপরিকর। সেবামুখী দক্ষ জনপ্রশাসন ও জনহিতৈষী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তুলে দুর্নীতিমুক্ত সুশাসন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের জন্য শান্তিশৃঙ্খলা ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা বিধান করারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

আবার ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ যা করবো বলে অঙ্গীকার করেছে ছাত্রলীগের সূচনার পর জন্ম নেয়া কে সময়ের জনবান্ধব-বাংলাদেশবান্ধব আওয়ামী লীগ, তা হলো- সর্বজনীন মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে কোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করা করা হবে। নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পেলে আগামী ৫ বছরে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে জনবল নিয়োগ করা হবে। সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি আমাদের দৃঢ় অবস্থান অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারি বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে। আগামী ৫ বছরে জিডিপি ১০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনকালে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। ২০৩০ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ৫ হাজার ৪৭৯ ডলারেরও বেশি। প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করব। শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেব। আগামী ৫ বছরে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। পাকা সড়কের মাধ্যমে সকল গ্রামকে জেলা/উপজেলা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে। জাতীয় পর্যায়ে স্বল্প, মধ্যম ও উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের তথ্য সম্বলিত একটি ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে। তরুণদের সুস্থ বিনোদনের জন্য প্রতিটি উপজেলায় গড়ে তোলা হবে একটি করে ‘যুব বিনোদন কেন্দ্র’। প্রতিটি জেলায় একটি করে ‘যুব স্পোর্টস কমপ্লেক্স’ গড়ে তোলা হবে। আগামী ৫ বছরে ১ কোটি ২৮ লাখ কর্মসৃজন করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। প্রতি উপজেলা থেকে প্রতিবছর গড়ে ১ হাজার যুব/যুব মহিলাকে বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। বাল্যবিবাহ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান মজুরি নিশ্চিত করবে তারা। নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে আলাদা ব্যাংকিং ও ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। দারিদ্র্যের হার ১২.৩ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজনের নিয়মিত রোজগার নিশ্চিত করা হবে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে। সহজ শর্তে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আয়বর্ধকমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক